নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন অন্য সংস্করণ দেখুন

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন

type=

জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র,

ঢাকা, বাংলাদেশ

Bengali version of
Convention on the Elimination of all forms of Discrimination against Women
DPI / 993 / Rev.1

Published by:
United Nations Information Centre
Dhaka, Bangladesh

Reprint: November 2006
UNIC/pub/2006/02/1000

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন
প্রকাশক:
জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র
ঢাকা, বাংলাদেশ

পুনর্মুদ্রণ: নভেম্বর ২০০৬
ইউনিক/প্রকাশ/২০০৬/০২/১০০০

প্রথম প্রকাশ: ইউনিসেফ

ভূমিকা

কল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন গৃহীত হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাষ্ট্রপক্ষের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কনভেনশনটি কার্যকারিতা লাভ করে। বর্তমানে এই কনভেনশন অনুমোদনকারী রাষ্ট্রপক্ষের সংখ্যা ১৬১।

বাংলাদেশ সরকার ধারা ২, ১৩(ক), ১৬(গ) ও ১৬(চ)-এর ওপর সংরক্ষণ রেখে ১৯৮৪ সালে এই কনভেনশনটি অনুমোদন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২০ জুলাই ধারা ১৩(ক) ও ১৬(চ)-এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে নেয়।

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন সবচেয়ে ব্যাপক ও আইনগতভাবে অবশ্য পালনীয় নারীর মানবাধিকার। নারীর আন্তর্জাতিক বিল অব রাইটস হিসেবে অভিহিত এই কনভেনশন বৈষম্যের অবসানে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের একটি এজেণ্ডা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

কনভেনশনের শর্তানুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষসমূহের প্রতি নারীর মৌলিক মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; নারী পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে নারীর শোষণ রোধ নিশ্চিত করা; রাজনৈতিক ও লোকজীবনে নারীর প্রতি বৈষম্যের অবসান; জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন বা বহাল রাখার সমান অধিকার নিশ্চিত করা; শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ও সমাজ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যান্য ধারায় গ্রামীণ নারীর সমস্যা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং বিবাহ ও পারিবারিক জীবনে নারীর প্রতি বৈষম্যের অবসান সংক্রান্ত বিষয়গুলো রয়েছে। কনভেনশনে নারীর নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক ও লোকজীবনে অংশগ্রহণ এবং সরকারের সকল পর্যায়ে সকল কাজ করার অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে।

কনভেনশনের ধারা ১-এ নারীর প্রতি বৈষম্যের সংজ্ঞায় যা বলা হয়েছে তা হলো: 'বৈবাহিক মর্যাদা নির্বিশেষে নারী ও পুরুষের সমতার ভিত্তিতে মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক বা অপর যে কোন মৌলিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নারীর স্বীকৃতি, ভোগ বা প্রয়োগকে ব্যাহত বা অকার্যকর করা।'

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ কনভেনশনের শর্তাবলী মেনে চলে কিনা তা পরিবীক্ষণের জন্য ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Committee on the Elimination of all forms of discrimination against Women বা CEDAW। এই কমিটি বছরে দু’বার অধিবেশনে মিলিত হয়।

মানবাধিকার ঘোষণার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই কনভেনশনের পুনর্মুদ্রণ প্রকাশিত হলো। নরীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে এই অনূদিত পুস্তিকাটি সহায়ক হলে আমাদের সবার শ্রম সার্থকতা লাভ করবে।

জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র ঢাকা, বাংলাদেশ।
সেপ্টেম্বর ১৯৯৮

পরিচ্ছেদ-১

ধারা ১

এই কনভেনশনে, ‘নারীর প্রতি বৈষম্য’ বলতে বোঝাবে পুরুষ-নারী ভিত্তিতে যে কোন পার্থক্য, বঞ্চনা অথবা বিধিনিষেধ যার মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক অথবা অন্য যে কোন ক্ষেত্রে মৌলিক স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া, তা ভোগ করা, অথবা বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে নারীর দ্বারা তার ব্যবহার বা চর্চা, ক্ষতিগ্রস্ত অথবা দরকার মত প্রভাব বা উদ্দেশ্য রয়েছে।

ধারা ২

এই কনভেনশনে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর প্রতি সকল প্রকারের বৈষম্যের নিন্দা করে এবং উপযুক্ত সকল উপায় ও অবিলম্বে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের একটি নীতি অনুসরণে সম্মত হয়। এই লক্ষ্যে তারা যা যা করবে বলে অঙ্গীকার করে তা হচ্ছে—

ক) পুরুষ ও নারীর সমতার নীতি তাদের জাতীয় সংবিধান অথবা অন্য কোন উপযুক্ত আইনে ইতোমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করা এবং আইনের মাধ্যমে ও অন্যান্য উপযুক্ত উপায়ে এই নীতির প্রকৃত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা;
খ) নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ করে উপযুক্ত ক্ষেত্রে আইন মানতে বাধ্য করার ব্যবস্থাসহ যথোপযুক্ত আইনগত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
গ) পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে নারীর অধিকারসমূহের সুরক্ষা আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং উপযুক্ত জাতীয় আদালতে ও অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে কোন বৈষম্য থেকে নারীকে রক্ষা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা;
ঘ) নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক যে কোন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সরকারী কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে এই দায়িত্ব অনুসারে কাজ করে তা নিশ্চিত করা;
ঙ) কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যাতে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সকল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
চ) প্রচলিত যেসব আইন, বিধি, প্রথা ও অভ্যাস নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগুলো পরিবর্তন অথবা বাতিল করার উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
ছ) যে সব জাতীয় দণ্ড বিধান নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগুলো বাতিল করা।

ধারা ৩

পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারসমূহ প্রয়োগ ও ভোগে নারীকে নিশ্চয়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে এবং নারীর পূর্ণ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রপক্ষসমূহ সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ধারা ৪

১. পুরুষ ও নারীর মধ্যে প্রকৃত প্রস্তাবে সমতা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রপক্ষসমূহ কোন অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা এই কনভেনশনে বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী বৈষম্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তবে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ কোনভাবেই অসম অথবা পৃথক মান বজায় রাখার ফল হিসেবে যুক্ত হবে না; সুযোগ ও আচরণের সমতার লক্ষ্য অর্জিত হলে এসব ব্যবস্থা রহিত করা হবে।

২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ মাতৃত্ব রক্ষার লক্ষ্যে এই কনভেনশনে বর্ণিত ব্যবস্থাসহ কোন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা বৈষম্যমূলক বলে বিবেচিত হবে না।

ধারা ৫

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নিচে যেসব বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোর জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে:

ক) পুরুষ ও নারীর মধ্যে কেউ উৎকৃষ্ট অথবা কেউ নিকৃষ্ট এই ধারণার ভিত্তিতে কিংবা পুরুষ ও নারীর চিরাচরিত ভূমিকার ভিত্তিতে যে সব কুসংস্কার, প্রথা ও অভ্যাস গড়ে উঠেছে সেগুলো দূর করার লক্ষ্যে পুরুষ ও নারীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণের ধরন পরিবর্তন করা;
খ) মাতৃত্বকে একটি সামাজিক কাজ হিসেবে যথাযথভাবে বিবেচনা এবং সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই মূল বিবেচ্য বিষয়—এ কথা স্মরণ রেখে সন্তান-সন্ততির লালন-পালন ও উন্নয়ন এবং পুরুষ ও নারীর অভিন্ন দায়িত্বের স্বীকৃতির বিষয় যাতে পারিবারিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা নিশ্চিত করা।

ধারা ৬

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীকে নিয়ে সব ধরনের অবৈধ ব্যবসা এবং দেহব্যবসার আকারে নারীর শোষণ দমন করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পরিচ্ছেদ-২

ধারা ৭

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ দেশের রাজনৈতিক ও জনজীবনে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশেষ করে পুরুষের সঙ্গে সমান শর্তে যে সব ক্ষেত্রে নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে সেগুলো হচ্ছে—

ক) সকল নির্বাচন ও গণভোটে ভোটদান এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংস্থাসমূহের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া;
খ) সরকারী নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ এবং সরকারী পদে অধিষ্ঠিত হওয়া ও সরকারের সকল পর্যায়ে সরকারী কাজকর্ম সম্পাদন;
গ) দেশের জনজীবন ও রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারী সংস্থা ও সমিতিসমূহের কাজে অংশগ্রহণ।

ধারা ৮

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পুরুষের সঙ্গে সমান শর্তে এবং কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই নারীর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ নিজ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কাজকর্মে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ধারা ৯

১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন অথবা তা বজায় রাখতে নারীকে পুরুষের মতই সমান অধিকার প্রদান করবে। রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে নিশ্চিত করবে যে একজন বিদেশীর সঙ্গে বিবাহ অথবা বিবাহ চলাকালে স্বামীর জাতীয়তা পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে স্ত্রীর জাতীয়তা পরিবর্তিত হবে না, তাঁকে জাতীয়তাহীন করবে না অথবা স্বামীর জাতীয়তা গ্রহণে তাঁকে বাধ্য করা হবে না।

২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীকে তাঁর সন্তান-সন্ততির জাতীয়তার ক্ষেত্রে পুরুষের মতই সমান অধিকার প্রদান করবে।

পরিচ্ছেদ-৩

ধারা ১০

শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে যেসব বিষয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেগুলো হচ্ছে—

ক) কর্মজীবন ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা, পল্লী ও শহরাঞ্চলে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ ও ডিপ্লোমা লাভের সুযোগের জন্য একই শর্তাবলী; স্কুল-পূর্ব, সাধারণ, কারিগরি, পেশাগত ও উচ্চতর কারিগরি শিক্ষা, সেই সাথে সকল ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে এই সমতা নিশ্চিত করা।

খ) সহশিক্ষা এবং পুরুষ ও নারীর ভূমিকা সম্পর্কিত চিরাচরিত ধারণা দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক অন্য ধরনের শিক্ষা উৎসাহিত করার মাধ্যমে, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক ও বিদ্যালয় কর্মসূচী সংশোধন এবং উপযুক্ত শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে এবং সকল ধরনের শিক্ষায় পুরুষ ও নারীর ভূমিকা সম্পর্কিত চিরাচরিত যে কোন ধারণা দূরীকরণ;

গ) বৃত্তি এবং অন্যান্য শিক্ষা মঞ্জুরি লাভবান হওয়ার একই সুযোগ প্রদান;
ঘ) বয়স্ক ও কর্মমূলক শিক্ষা কর্মসূচীসহ শিক্ষা অব্যাহত রাখার কর্মসূচী, বিশেষ করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান যে কোন দূরত্ব স্বল্পতম সম্ভব সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রণীত কর্মসূচীসমূহে সুযোগ লাভের একই সুবিধা প্রদান;
ঙ) ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানো এবং যেসব বালিকা ও মহিলা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন তাদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন;
চ) খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য একই সুযোগ প্রদান;
ছ) পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্য ও পরামর্শসহ নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি।

ধারা ১১

১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে তাদের একই অধিকার, বিশেষ করে নিম্নেবর্ণিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বপ্রকার নিয়োগদানের ক্ষেত্রে শরিক রাষ্ট্রসমূহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে—

ক) সকল মানুষের মৌলিক কর্মসংস্থানের অধিকার;
খ) কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে একই বাছাই মান প্রয়োগসহ একই নিয়োগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার;
গ) পেশা ও চাকরি স্বাধীনভাবে বেছে নেয়ার অধিকার; পদোন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা এবং চাকরির সকল সুবিধা ও শর্ত ভোগ করার অধিকার এবং শিক্ষানবিস হিসেবে প্রশিক্ষণ, উচ্চতর বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পুনঃপ্রশিক্ষণ গ্রহণের অধিকার;
ঘ) বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ সমান পারিশ্রমিক, একই মানের কাজের ক্ষেত্রে একই আচরণ, সেই সাথে কাজের মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমান আচরণ পাওয়ার অধিকার;
ঙ) বিশেষ করে অবসরগ্রহণ, বেকারত্ব, অসুস্থতা, অক্ষমতা ও বার্ধক্য এবং কাজ করার অন্যান্য অক্ষমতার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার এবং সেই সাথে সবেতন ছুটি ভোগের অধিকার;
চ) সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া নিরাপদ রাখাসহ স্বাস্থ্য রক্ষা এবং কাজের পরিবেশে নিরাপত্তার অধিকার।

২. বিবাহ অথবা মাতৃত্বের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য রোধ এবং তাঁদের কাজ করার কার্যকর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরিক রাষ্ট্রসমূহ যে সকল বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেগুলো হচ্ছে—:ক) গর্ভধারণ অথবা মাতৃত্ব সংক্রান্ত ছুটির কারণে বরখাস্ত এবং বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা;:খ) বেতনসহ ছুটি অথবা পূর্বেকার চাকরি জ্যেষ্ঠতা অথবা সামাজিক ভাতাদি না হারিয়ে তুলনাযোগ্য সামাজিক সুবিধাসহ মাতৃত্ব সংক্রান্ত ছুটি প্রবর্তন করা;:গ) বিশেষ করে একটি শিশু পরিচর্যা সুবিধা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের মাধ্যমে পিতা-মাতাদেরকে তাদের কাজের দায়িত্বের সঙ্গে পারিবারিক দায়িত্ব সংযুক্ত করে নাগরিক জীবনে অংশগ্রহণে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়ক সামাজিক সার্ভিসের ব্যবস্থা উৎসাহিত করা;:ঘ) গর্ভাবস্থায় যে ধরনের কাজ নারীর জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত, গর্ভকালে তাদেরকে সে ধরনের কাজ থেকে বিশেষভাবে রক্ষার ব্যবস্থা করা; ৩. এই ধারায় বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে রক্ষামূলক আইন, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের আলোকে সময় সময় পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনমত সংশোধন, বাতিল অথবা সম্প্রসারণ করা হবে।

ধারা ১২

১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত সার্ভিসসহ স্বাস্থ্য পরিচর্যামূলক সার্ভিস পাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরিক রাষ্ট্রসমূহ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২. একই ধারার অনুচ্ছেদ ১-এর বিধান ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষসমূহ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সার্ভিস প্রদান করে সেই সাথে গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে মায়ের দুগ্ধদান চলাকালে পর্যাপ্ত পুষ্টির ব্যবস্থা করে গর্ভকাল, সন্তান জন্মদানের ঠিক আগে এবং সন্তান জন্মদানের পরে মহিলাদের উপযুক্ত সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করবে।

ধারা ১৩

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে একই অধিকার, বিশেষ করে নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অপরাপর ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে;:ক) পারিবারিক কল্যাণের অধিকার;:খ) ব্যাংক ঋণ, বন্ধক ও অন্যান্য আর্থিক ঋণ গ্রহণের অধিকার;:গ) বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক জীবনের সকল বিষয়ে অংশগ্রহণের অধিকার।

ধারা ১৪

১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পল্লী এলাকার মহিলারা যেসব বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন সেগুলো এবং দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের যেসব কাজ উপার্জন হিসেবে গণ্য করা হয় না সেসব কাজ এবং পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ যেসব ভূমিকা পালন করেন সেগুলো বিবেচনা করবে এবং পল্লী এলাকার নারীদের জন্য এই সনদের বিধান প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে পল্লী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও তা থেকে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পল্লী এলাকায় নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশেষ করে এসব নারীর জন্য নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে—

ক) সকল পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রসারণ ও বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা;
খ) পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য, পরামর্শ ও সেবা লাভসহ পর্যাপ্ত স্বাস্থসেবা সুবিধা লাভের সুযোগ পাওয়া;
গ) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী থেকে সরাসরি লাভবান হওয়া;
ঘ) উপযোগী শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণসহ আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সকল ধরনের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা এবং সেই সাথে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, তাদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল সামাজিক ও সম্প্রসারণ সার্ভিসের সুবিধা লাভ করা;
ঙ) কর্মসংস্থান অথবা স্বকৰ্ম সংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধাদি লাভের সমান সুযোগ পাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বসাহায্য গ্রুপ ও সমবায় সংগঠিত করা;
চ) সকল সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা;
ছ) কৃষি ঋণ ও অন্যান্য ঋণ, বাজারজাতকরণ সুবিধা ও উপযুক্ত প্রযুক্তি লাভের সুযোগ পাওয়া এবং ভূমি ও কৃষি সংস্কার ও সেই সাথে ভূমি পুনর্বণ্টন স্কিমের ক্ষেত্রে সমান অধিকার লাভ করা;
জ) বিশেষ করে গৃহায়ণ, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুবিধা ভোগ করা।

পরিচ্ছেদ-৪

ধারা ১৫

১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ আইনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষকে সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করবে।

২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ বিভিন্ন নাগরিক বিষয়ে নারীকে পুরুষের বৈধ ক্ষমতার অনুরূপ ক্ষমতা প্রদান করবে এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য একই সুযোগ দেবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রসমূহ নারীকে চুক্তি সম্পাদনে ও সম্পত্তি দেখাশোনার সমান অধিকার দেবে এবং আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রমের সকল স্তরে তাদের সঙ্গে সমান আচরণ করবে।

৩. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর বৈধ ক্ষমতা সংকুচিত করার লক্ষ্যে প্রণীত আইনভিত্তিক সকল চুক্তি ও যে কোন ধরনের ব্যক্তিগত দলিল বাতিল করবে।

৪. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ সকল নাগরিকের চলাচল এবং আবাসস্থল ও বসতি স্থাপন বেছে নেয়ার ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আইনের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীকে সমান অধিকার দেবে।

ধারা ১৬

১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ, বিবাহ ও পারিবারিক সম্পর্কবিষয়ক সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে বিশেষ করে যেসব বিষয় নিশ্চিত করবে সেগুলো হচ্ছে—

ক) বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার জন্য একই অধিকার;
খ) স্বাধীনভাবে স্বামী/স্ত্রী হিসেবে সঙ্গী বেছে নেয়ার এবং তাঁদের স্বাধীন ও পূর্ণ সম্মতিতে বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার জন্য একই অধিকার;
গ) বিবাহ এবং এর বিচ্ছেদকালে একই অধিকার ও দায়িত্ব;:

ঘ) তাঁদের বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে, তাঁদের সন্তান-সন্ততির বিষয়ে, পিতা-মাতা হিসেবে একই অধিকার ও দায়িত্ব; সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়;

ঙ) তাঁদের সন্তান সংখ্যা কত হবে ও সন্তান জন্মদানে কতটা বিরতি দেয়া হবে সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে ও দায়িত্বের সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিভিন্ন অধিকার প্রয়োগে সক্ষমতা অর্জনের জন্য তথ্য, শিক্ষা ও উপায় লাভের একই অধিকার;
চ) অভিভাবকত্ব, প্রতিপালকত্ব, ট্রাস্টিশিপ ও পোষ্যসন্তান গ্রহণ অথবা অনুরূপ ক্ষেত্রে, যেখানে জাতীয় আইনে এসব ধারণা বিরাজমান, একই অধিকার ও দায়িত্ব; সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ;
ছ) পারিবারিক নাম, পেশা অথবা বৃত্তি পছন্দের অধিকারসহ স্বামী অথবা স্ত্রী হিসেবে সমান অধিকার;
জ) বিনামূল্যে অথবা মূল্যের বিনিময়ে সম্পত্তির মালিকানা, তা অর্জন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ভোগ ও নিষ্পত্তির ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের একই অধিকার।

২. শিশুকালে বাগদান ও শিশুবিবাহের কোন আইনগত কার্যকারিতা থাকবে না এবং বিবাহের একটি সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ ও সরকারী রেজিস্ট্রিতে বিবাহ রেজিস্ট্রিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিচ্ছেদ-৫

ধারা ১৭

১. এই কনভেনশনের বাস্তবায়নে অর্জিত অগ্রগতি বিবেচনার জন্য, কনভেনশন কার্যকর হতে শুরু হওয়ার সময় নৈতিক প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন এবং কনভেনশনে বর্ণিত ক্ষেত্রে দক্ষতাসম্পন্ন ১৮ জন এবং শরিক পঁয়ত্রিশতম রাষ্ট্রকৃত কনভেনশন অনুমোদিত অথবা সমর্থিত হওয়ার পর ২৩ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কিত একটি কমিটি (এর পর কমিটি নামে অভিহিত) গঠন করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষসমূহ তাদের নাগরিকদের মধ্য থেকে বিশেষজ্ঞ নির্বাচন করবে, যারা ব্যক্তি যোগ্যতায় কাজ করবেন এবং তাদের নির্বাচনের সময় ন্যায্য ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ও বিভিন্ন পর্যায়ের সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব এবং সেই সাথে মূল আইনগত পদ্ধতিসমূহ বিবেচনা করা হবে।

২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কমিটির সদস্য নির্বাচন করা হবে। প্রতিটি রাষ্ট্রপক্ষ তার নাগরিকদের মধ্য থেকে একজনকে মনোনীত করতে পারবে।

৩. এই কনভেনশন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাস পর প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি নির্বাচনের তারিখের অন্তত তিন মাস আগে জাতিসংঘ মহাসচিব দুই মাসের মধ্যে মনোনয়ন পেশ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কাছে পত্র দেবেন। মহাসচিব, মনোনীত ব্যক্তিদের নামের আদ্যাক্ষরের ক্রমানুসারে একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন যাতে এসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দানকারী রাষ্ট্রসমূহের নাম উল্লেখ থাকবে এবং এই তালিকা তিনি রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কাছে পাঠাবেন।

৪. মহাসচিব কর্তৃক জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আহূত রাষ্ট্রপক্ষসমূহের এক বৈঠকে কমিটির সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঐ বৈঠকে কমিটির জন্য নির্বাচিত সদস্য হবেন তাঁরাই যারা চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের উপস্থিত প্রতিনিধিদের সর্বাধিক সংখ্যক ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন। বৈঠকের কোরাম গঠনের জন্য কনভেনশনে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধির উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে।

৫. কমিটির সদস্যরা চার বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন। অবশ্য প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নয়জনের মেয়াদ দুই বছর। পর শেষ হয়ে যাবে; প্রথম নির্বাচনের পরপরই কমিটির চেয়ারম্যান লটারির মাধ্যমে এই নয়জন সদস্যের নাম বাছাই করবেন।

৬. পঁয়ত্রিশতম অনুমোদন অথবা সমর্থনের পর এই ধারার ২, ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে কমিটির অতিরিক্ত পাঁচজন সদস্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে নির্বাচিত অতিরিক্ত সদস্যদের মধ্যে দুইজনের মেয়াদ দুই বছর পর শেষ হবে; কমিটির চেয়ারম্যান লটারির মাধ্যমে এই দুইজন সদস্যের নাম বাছাই করবেন।

৭. অনিয়মিত শূন্যতা পূরণের জন্য যে রাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করা থেকে বিরত রয়েছেন, সেই রাষ্ট্র কমিটির অনুমোদনসাপেক্ষে তার নাগরিকদের মধ্যে থেকে অপর একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করবে।

৮. কমিটির দায়িত্বের গুরুত্ব বিবেচনা করে সাধারণ পরিষদের আরোপ করা শর্তে কমিটির সদস্যগণ, সাধারণ পরিষদের অনুমোদন নিয়ে জাতিসংঘের তহবিল থেকে বেতন বা ভাতা গ্রহণ করবেন।

৯. জাতিসংঘ মহাসচিব এই সনদের অধীনে কমিটির কার্যক্রম কার্যকরভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করবেন।

ধারা ১৮

১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ, এই কনভেনশনের বিধানসমূহ কার্যকর করতে আইনগত, বিচার বিভাগীয়, প্রশাসনিক ও অন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কে এবং এ ব্যাপারে অর্জিত অগ্রগতির বিষয়ে একটি রিপোর্ট কমিটির বিবেচনার জন্য মহাসচিবের কাছে পেশ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এবং তা পেশ করা হবে;

ক) কনভেনশনে সংশ্লিষ্ট অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে; এবং
খ) তারপর প্রতি চার বছর অন্তর এবং কমিটি যখনই অনুরোধ করবে, সেই সময়।

২. রিপোর্টে এই কনভেনশনের অধীনে প্রত্যাশিত মাত্রায় দায়িত্ব পূরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয়াদি ও অসুবিধাসমূহের উল্লেখ থাকতে পারে।

ধারা ১৯

১. কমিটি নিজেই তার কার্যপ্রণালী বিধি প্রণয়ন করবে।

২. কমিটি দুই বছর মেয়াদের জন্য তার কর্মকর্তা নির্বাচন করবে।

ধারা ২০

১. কমিটি, এই কনভেনশনের ১৮ ধারা অনুসারে পেশকৃত রিপোর্টসমূহ বিবেচনার জন্য সাধারণত বছরে একবার অনধিক দুই সপ্তাহের জন্য বৈঠকে মিলিত হবে।

২. কমিটির বৈঠকসমূহ সাধারণত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অথবা কমিটি নির্ধারিত অন্য যে কোন সুবিধাজনক স্থানে অনুষ্ঠিত হবে।

ধারা ২১

১. কমিটি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের মাধ্যমে প্রতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে তার কার্যক্রম সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করবে এবং রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট ও তথ্য পরীক্ষার ভিত্তিতে পরামর্শ ও সাধারণ সুপারিশ এবং সেই সাথে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কোন। মন্তব্য থাকলে, তা কমিটির রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

২. মহাসচিব নারীর অবস্থান সম্পর্কিত কমিশনের অবগতির জন্য কমিটির রিপোর্ট তার কাছে পাঠাবেন।

ধারা ২২

এই কনভেনশনের যেসব বিধান বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহের কর্মপরিধির আওতায় পড়ে, সেগুলোর বাস্তবায়ন বিবেচনার ক্ষেত্রে তার প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। যেসব ক্ষেত্রে কনভেনশনের বাস্তবায়ন বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহের কর্মপরিধির আওতায় পড়ে, সেগুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহকে রিপোর্ট করার জন্য কমিটি আহ্বান জানাতে পারবে।

পরিচ্ছেদ-৬

ধারা ২৩

এই কনভেনশনের কোন কিছুই পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা অর্জনের লক্ষ্যে অধিক উপযোগ্য এমন কোন বিধানের জন্য অন্তরায় সৃষ্টি করবে না, যে বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

ক) শরিক একটি দেশের আইনে; অথবা
খ) ঐ দেশের জন্য কার্যকর অন্য যে কোন আন্তর্জাতিক সনদ, চুক্তি অথবা সমঝোতায়।

ধারা ২৪

রাষ্ট্রপক্ষসমূহ এই কনভেনশনে স্বীকৃত অধিকারসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন অর্জনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

ধারা ২৫

১. এই কনভেনশন সকল রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাক্ষরের জন্য খোলা থাকবে।

২. জাতিসংঘ মহাসচিব এই কনভেনশনের রক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন।

৩. এই কনভেনশন অনুমোদনসাপেক্ষ। অনুমোদনের দলিলপত্রাদি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা রাখা হবে।

৪. এই চুক্তি সকল রাষ্ট্র কর্তৃক সমর্থনের জন্য খোলা থাকবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে সমর্থনের একটি দলিল জমা দেয়ার মাধ্যমে সমর্থন কার্যকর হবে।

ধারা ২৬

১. যে কোন রাষ্ট্রপক্ষ যে কোন সময় জাতিসংঘ মহাসচিবকে সম্বোধন করে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে বর্তমান কনভেনশন সংশোধনের অনুরোধ জানাতে পারবে।

২. এ ধরনের অনুরোধের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হবে কি না জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

ধারা ২৭

১. অনুমোদন অথবা সমর্থনের ২০তম দলিল জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা দেয়ার তারিখের পর ত্রিশতম দিন থেকে এই কনভেনশন কার্যকর হওয়া শুরু হবে।

২. অনুমোদন অথবা সমর্থনের ২০তম দলিল জমা দেয়ার পর এই কনভেনশন অনুমোদন অথবা সমর্থনকারী প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে, স্ব স্ব অনুমোদন অথবা সমর্থনের নিজস্ব দলিল জমা দেয়ার তারিখের পর ত্রিশতম দিন থেকে কনভেনশনটি সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য কার্যকর হবে।

ধারা ২৮

১. জাতিসংঘ মহাসচিব অনুমোদন অথবা সমর্থনের সময় রাষ্ট্রসমূহ যেসব মতামত প্রদান করবে তা গ্রহণ করবেন এবং সকল রাষ্ট্রের মধ্যে তা বিতরণ করবেন।

২. বর্তমান কনভেনশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যবিরোধী বক্তব্যদানের অনুমতি দেয়া হবে না।

৩. প্রদত্ত মতামত জাতিসংঘ মহাসচিবকে সম্বোধন করে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে যে কোন সময় প্রত্যাহার করা যেতে পারে এবং মহাসচিব তখন সকল রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন। এ ধরনের নোটিশ যেদিন গ্রহণ করা হবে, সেদিন থেকে তা গণ্য হবে।

ধারা ২৯

১. এই কনভেনশনের ব্যাখ্যা অথবা প্রয়োগের ব্যাপারে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রপক্ষের মধ্যে কোন মতবিরোধ আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা না গেলে তাদের একজনের অনুরোধে বিষয়টি সালিশির জন্য পেশ করা হবে। সালিশির জন্য অনুরোধ জানানোর তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের যে কোন একটি রাষ্ট্র আদালতের বিধি অনুসারে অনুরোধের মাধ্যমে মতবিরোধের বিষয়টি ন্যায়বিচার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতে পেশ করতে পারবে।

২. প্রতিটি রাষ্ট্রপক্ষ এই কনভেনশন স্বাক্ষর, অনুমোদন অথবা সমর্থন করার সময় ঘোষণা করতে পারবে যে সে এই ধারার ১ অনুচ্ছেদ দ্বারা আবদ্ধ বলে বিবেচনা করে না। এই মর্মে মত প্রদানকারী কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে কনভেনশনে শরিক অপর রাষ্ট্রসমূহ ঐ অনুচ্ছেদ দ্বারা আবদ্ধ হবে না।

৩. কোন রাষ্ট্রপক্ষ এই ধারার ২ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন মতামত প্রদান করলে যে কোন সময় সেই মতামত জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে নোটিশ দানের মাধ্যমে প্রত্যাহার করতে পারবে।

ধারা ৩০

১. এই কনভেনশন, যার আরবী, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ ও স্পেনীয় সংস্করণ সমান গ্রহণযোগ্য, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা রাখা হবে।

২. এই দলিলে যা কিছু লেখা আছে, তা প্রত্যয়নপূর্বক যথাযথভাবে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত হয়ে নিম্ন স্বাক্ষরকারী এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে।

এই লেখাটি জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক নথি থকে গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ প্রকাশনার সম্ভাব্য চিন্তাভাবনা যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দেওয়ার উদেশ্যে এই সংস্থা তাদের বেশির ভাগ নথি পাবলিক ডোমেইনে সকলের জন্য মুক্ত রেখেছে।

জাতিসংঘের প্রশাসনিক দিগ্‌নির্দেশনা (ইংরেজি) অনুসারে, নিম্নলিখিত নথিগুলি সারা বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনে মুক্ত:

  1. প্রাতিষ্ঠানিক রেকর্ড (সম্মেলনের কার্যবিবরণী, আক্ষরিক ও সারসংক্ষেপ, ...)
  2. জতিসংঘের চিহ্নযুক্ত জাতিসংঘের নথি
  3. জাতিসংঘের কার্যাবলী সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করার প্রাথমিক উদ্দেশ্যে তৈরি তথ্য উপাদান (বিক্রয়ের জন্য প্রযোজ্য তথ্য উপাদান নয়)