পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১১৭

শরৎচন্দ্র বসুকে লিখিত

১১৭
ইনসিন সেণ্ট্রাল জেল
৮।৪।২৭
শুক্রবার

পরম পূজনীয় মেজদাদা,

 আপনার ২৪ ও ৩১শে মার্চ্চের পত্র যথাক্রমে ৫ই ও ৭ই এপ্রিল আমার হাতে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। আশাকরি আপনি আমার মার্চ্চ মাসের ১৪, ২২, ২৮ ও এপ্রিলের ৪ তারিখে লেখা পত্র কয়খানি পাইয়াছেন। শেষ দুইটি পত্র আমি ইনসিন হইত লিখিয়াছিলাম।

 আমার শেষ পত্রে মাননীয় মিঃ মোবার্লীর প্রস্তাব সম্বন্ধে আমি বিশদভাবে আলোচনা করিয়াছিলাম। এখানে তাহার পুনরুল্লেখ করার বোধহয় প্রয়োজন নাই। সর্ত্তাধীন মুক্তির প্রস্তাব মানিয়া লওয়ার অসুবিধা আছে। তাহ ছাড়া কয়েকটি সর্ত্ত অসন্তোষজনক, এবং প্রস্তাবটি যেভাবে রচনা করা হইয়াছে তাহাতে উহা গ্রহণযোগ্য নয়। আমার মনে হয় গভর্ণমেণ্ট এ সম্বন্ধে শেষ কথা বলিয়া দিয়াছেন।

 বঙ্গীয় আইন সভার সভাপতির কোনও উত্তর এখনও পাই নাই।

 আপনি যখন এ পত্র পাইবেন তখন অল্ডারম্যান, মেয়র ও ডেপুটি মেয়রের নির্ব্বাচন শেষ হইয়া যাইবে। যদি আপনার সময় হয় তাহা হইলে অল্ডারম্যানের পদ গ্রহণের প্রস্তাবে কেন আপনি মত দিবেন না?

 ২রা এপ্রিল শনিবার আপনাকে একটি তার করিয়াছিলাম। উহাতে জানাইয়াছিলাম যে, আপনার ২৪শে মার্চ্চ তারিখের পত্র আমি পাই নাই।

 এ মাসের ৫ই মঙ্গলবার আই জি প্রিজন্‌স্ গভর্ণমেণ্টের প্রস্তাব আমার নিকট পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। বঙ্গীয় আইন সভায় যাহা উত্থাপিত হইয়াছিল ইহা সেই একই প্রস্তাব। ঐদিনই আমি আপনাকে পর পর দুইটি তার পাঠাই। যতদূর স্মরণ আছে উহার বিষয়বস্তু আপনাকে লিখিয়া জানাইতেছি।

 (১) “আপনার ২৪শে মার্চ্চ তারিখের পত্র পাই নাই। আজ সকালে গভর্ণমেণ্ট প্রস্তাব পাঠাইয়াছেন। উহা বঙ্গীয় আইন সভায় প্রদত্ত বিবৃতিরই অনুরূপ। প্রস্তাবে কয়েকটি বিষয় অস্পষ্ট ও অসন্তোষজনক বোধ হইতেছে। আপনি আসিলে এ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে পারিতাম।”

 (২) “২৪শে মার্চের পত্র পাইয়াছি। উহাতে নূতন কোনও সংবাদ নাই। গভর্ণমেণ্ট প্রস্তাবের কিছু কিছু অংশ সংশোধন না করিলে উহা গ্রহণযোগ্য নয়। এই রকমই গভর্ণমেণ্টকে জানাইব স্থির করিয়াছি। এখন আপনার আসার বোধ হয় প্রয়োজন হইবে না। তার পাঠাইয়া উত্তর দিবেন।”

 গত মাসের ২৯ তারিখ হইতে মোটরে করিয়া এখানে একটু বেড়াইতেছি।

 ইনসিন শহরটা রেঙ্গুনের মতই—একটু উনিশ-বিশ হইতে পারে। যতদূর বোধ হয় গ্রীষ্মকালে এখানে গরম খুব বেশী নয়। বৃষ্টিও হয় প্রচুর। মে মাসের শেষাশেষি হইতে শুরু করিয়া অক্টোবর পর্য্যন্ত চলে। মান্দালয়ের মতও এখানে গরম হইবে বলিয়া মনে হয় না, বরং অনেকটা ঠাণ্ডা। মোটের উপর এখানকার আবহাওয়া মান্দালয় হইতে ভাল হইবে কিনা ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না। ভাল হইবে আশা করি না—অন্ততঃ আমার পক্ষে।

 রেঙ্গুন ত্যাগ করিবার পূর্ব্বে আই জি প্রিজন্‌স্ আমাকে বলিয়াছিলেন যে, আমাকে পুনরায় মান্দালয়ে পাঠাইবার কোনও প্রশ্নই উঠে না; কারণ আমাকে হয়তো বর্মা ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে হইবে। তিনি আমাকে রেঙ্গুন ও ইনসিনের মধ্যে যে কোনও একটিকে বাছিয়া লইতে বলিয়াছিলেন। রেঙ্গুন জেলের সেই ঘটনার পর আমার পক্ষে ইনসিনে আসা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না।

 রেঙ্গুনের ঠিকানায় আপনি যে টাকা পাঠাইয়াছিলেন উহা এখানে পাঠাইয়া দিয়াছে।

 সোমবার আবার আপনাকে পত্র দিব। ছোটদাদাকে আজ আলাদা খামে এক পত্র দিলাম। ৫ তারিখে আপনাকে যে তার করিয়াছিলাম উহার জবাবের জন্য উদ্বিগ্ন হইয়া আছি।

 ছোটদাদা কি আমার ২২শে মার্চ্চের পত্র পাইয়াছেন? জ্বব পূর্ব্বের মতই হইতেছে— সাধারণত ১০০-র নীচে নামে না। আশা করি আপনাদের খবর সব কুশল। ইতি—

আপনার স্নেহের
সুভাষ

(ইংরাজী হইতে অনূদিত)