পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১৫৬
পরবর্ত্তী দুইখানি পত্র বিভাবতী বসুকে লিখিত
শ্রীশ্রীদুর্গা সহায়
13, Lord Sinha Road, Calcutta
The Penitentiary
Madras
পূজনীয়া মেজবৌদিদি,
আপনার পত্র পাইয়া খুব আনন্দিত হইয়াছি। ১১ তারিখে পত্র পাই—উত্তর দিতে বিলম্ব হইল। সঙ্গেকার সব চিঠি ও পাইয়াছি— তবে অমির চিঠির অনেকাংশ কাটা—এই অবস্থায় পাই। অন্য কোনও চিঠির কোনও অংশ কাটা হয় নাই।
নীলরতন বাবু ও বিধানবাবু এখানে পরীক্ষা করিয়া ফিরিয়া গিয়াছেন। তাঁদের কাছে বিস্তৃত সংবাদ পাইবেন। হাঁসপাতালে পরীক্ষা হইয়াছিল। তাঁদের সঙ্গে আরও দুইজন সরকারী ডাক্তার ছিলেন—ডাঃ স্কিনার এবং কেশব পাই। সকলে একমত হইয়া রিপোর্ট দিয়াছেন। সংক্ষেপে তাঁদের মত এই—
(১) যক্ষ্মার লক্ষণ পাওয়া গিয়াছে।
(২) পেটের মধ্যে একটা গোলমাল আছে—হয়তো এপিণ্ডিসাইটিস্।
(৩) অবিলম্বে স্বাস্থ্যকর স্থানে পাঠান উচিত।
(৪) সুইটজারল্যাণ্ডে—অথবা ভারতবর্ষে ভাওয়ালিতে স্যানাটোরিয়ামে রাখিয়া চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। জেলে থাকিলে রোগের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাইবে।
বিস্তৃত সংবাদ ডাক্তারদের কাছেই পাইবেন—তবে আমি কেবল সারমর্ম্ম দিলাম। এখন আবার সরকার বাহাদুরের আদেশের অপেক্ষায় কিছুকাল বসিয়া থাকিতে হইবে।
এখানে এখনও গরম আছে। খাওয়াদাওয়ার অবস্থা পূর্ব্বেকার মত। পেটের অবস্থা ভাল না হইলে আহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা নাই। এখানকার পানীয় জল মোটেই ভাল নয়।
৺পুরীধাম থেকে বাবার চিঠি পাইয়াছি—১২ তারিখের পত্র। আমি ১৬ই আগষ্টে বাবাকে পত্র দিয়াছি—আশা করি তাহা যথাসময়ে পৌঁছিয়াছে।
অমির ২২শে তারিখের পত্র সি. আই. ডি. অফিসে আটক হইয়াছে। সঙ্গে গীতার যে পত্র ছিল তাহা কিন্তু পাইয়াছি। অমির পূর্ব্বেকার পত্র (৩রা তারিখের) অনেকাংশ কাটা এই অবস্থায় পাই।
স্নেহের অমি, মীরা, নেড়ু ও গীতা—তোমাদের সকলের পত্র আমি পাইয়াছি। বোধ হয় মীরা ও নেড়ু একখানি পত্র লিখিবার পর ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছে।
এখানকার জেল জব্বলপুরের চেয়ে আকারে ছোট—কিন্তু ঘরবাড়ীগুলি তদপেক্ষা ভাল। আমি দোতালায় থাকি। ঘরগুলি খুব ছোট—একজনের থাকার মত—ইংরাজীতে যাকে বলে “সেল”। তবে আমি সমস্ত দিনরাত বারান্দায় পড়িয়া থাকি। জন্তু-জানোয়ার এখানে আনিতে পারি নাই এবং স্থানাভাবের জন্য এখানে জোগাড় করি নাই। জব্বলপুরে যেমন একেবারে আলাদা yard পাইয়াছিলাম এখানে সেরকম নয়। কাজেই স্থানাভাব। এখানে রান্নার হাঙ্গামা নাই—কারণ আমি যা খাই তার জন্য রান্না করিতে হয় না। Stoveএর সাহায্যে খাওয়ার ব্যবস্থা হইয়া যায়। এখানে অধিকাংশ সময় লেখাপড়া করিয়া কাটে—তার জন্য কিছু বইও কিনিতে হইয়াছে।
এখানে আসবার পর মেজদাদাকে যে চিঠি দিই—অনেকদিন পরে তার উত্তর পাইয়াছি। কয়েকদিন পূর্ব্বে তার প্রত্যুত্তরও দিয়াছি।
এক জায়গায় বেশীদিন থাকিলে শেষটা বড় একঘেয়ে লাগে। তখন অন্য জায়গায় গেলে প্রথমটা একটু ভাল লাগে। তারপর আবার একঘেয়ে ভাব ফিরিয়া আসে। জেলখানায় সময় কাটাইবার একমাত্র প্রকৃষ্ট উপায় অবিরাম পড়াশুনা করা।
গীতার বহু প্রশ্নের উত্তর দিতে চিঠিটা খুব বড় হয়ে গেল। দেখছি নেড়ানেড়িদের ভয়ানক চিন্তা হয়েছে—ভাইয়ের নাম কি রাখা হবে। যখন সকলে একমত হতে পারছে না তখন এক কাজ করলে মন্দ হয় না। সবকটা নাম রেখে দেওয়া হোক—সে নিজে বড় হয়ে একটা বেছে নেবে পছন্দমত।
আশা করি আপনারা সকলে ভাল আছেন। অক্ষয় লিখেছে যে, সে এখানে আসতে চায়—দেখা করতে। তাকে বারণ করবেন আসতে। মিছিমিছি এতদূর আসার দরকার কি?
বাবা-মার শরীর কেমন আছে? এখানে আর কতদিন থাকতে হবে জানি না। যদি মধ্যে মধ্যে কেহ জব্বলপুরে যেতে পারেন, তা হলে ভাল হয়। মেজদাদা সেখানে বড় একলা বোধ করবেন। অক্ষয় এখানে না এসে বরং জব্বলপুরে যাক। ইতি—