পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/২৪

২৪
16-9-15

তোমার পত্র পেলাম।

 অনেকে জিজ্ঞাসা করে, যখন Philosophy কোন মীমাংসায় উপনীত হইতে পারে না—যখন দর্শন ক্রমবর্দ্ধমান—একজন আসে এক কথা বলে যায়—আর এক জন আসে তাকে ছাড়িয়ে গিয়ে তার চেয়ে বড় কথা বলে যায়—এই রকম ভাবে দর্শনের গতি; তখন দর্শনে এবং দার্শনিক চিন্তায় কাজ কি? যখন হিগেলের দর্শন জগতে প্রচারিত হইল, তখন সকলে ভাবিল বুঝি এর উপরে আর কোন কথা কেহ বলিবে না—এটা বুঝি শেষ সিদ্ধান্ত। কিন্তু জগৎ হতভাগা। দর্শনের গতি হিগেলকে ছাড়িয়া চলিয়াছে। তথাপি বাঁচিতে গেলে ও সব প্রশ্ন আসিবেই আসিবে। ফুল ফুটিলে যেমন গন্ধ আপনি আপনি আসে (তার আর প্রশ্ন করিবার কিছুই নাই) সেই রকম জীবনের সঙ্গে সঙ্গে এই সব ব্যাকুল জিজ্ঞাসা আসে।

 দর্শন পড়ে লাভ কি? লাভ এই —নিজের প্রশ্ন—নিজের সন্দেহ ফিরে পাও।...দশটা লোকে কি ভাবে ভেবে গেছে—তা পাও। তার থেকে নিজের চিন্তাপ্রণালী সংযত ও চালিত করিতে পার।

 পাগল না হলে কেই বড় হইতে পারে না। কিন্তু, সকল পাগল বড় হয় না। All mad men do not become great men of genius. কেন? শুধু পাগল হইলে চলে না। আরও কিছু চাই! পাগলামির ভিতর আত্মসংযম হারাইলে কোন প্রশ্নের মীমাংসা হইতে পারে না। আবেগের ভিতর আত্মস্থ হওয়া চাই। তাহা হইলে (then and only then) জীবনটাকে একটা Constructive basis-এর উপর প্রতিষ্ঠিত করিতে পারা যায়। Emotion বা আবেগ সংযম করে—দীর্ঘ চিন্তা চাই। আবেগ না থাকিলে চিন্তা অসম্ভব। কিন্তু শুধু আবেগ থাকিলে চিন্তার ফল ফলে না। অনেকে আবেগবান কিন্তু ভাবিতে চায় না— অনেকে ভাবিতে জানে না।

 * * *

 ....চিন্তার প্রণালী একবার জানিতে পারিলে কোন ভয় নাই—একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া খুব শক্ত হইলেও অসম্ভব নয়। আমি সেই জন্য বিশ্বাস করি—আমার ব্যাকুলতা—জিজ্ঞাসা—সন্দেহ—এসব will not end in nothing but will bring me something positive.—এবার তোমারও সেই আশা আছে।

 If there is an ideal—it can be realised—ইহা আমার বিশ্বাস—for example, if perfection be the ideal, man can become perfect otherwise, there is no such ideal as perfection.

 যাক্ আদর্শ যাহাই হউক না—it can be realised—এই ভিত্তির উপর আমার life-philosophy প্রতিষ্ঠিত।

 ব্যস্ত হইলে চলিবে না—। যে প্রশ্নের মীমাংসার জন্য কত লোকে প্রাণ পর্য্যন্ত দিয়াছে—সে প্রশ্ন কি একদিনে মীমাংসা হইবে!...

 * * *

 তবে জীবনের একটি fundamental principle ঠিক না করিলে কাহার উপর জীবন প্রতিষ্ঠিত করিব— বা কি লইয়া চলিব?

 Kant-এর Philosophy কি রকম জান? একটা কথা মেনে নেয়—সেটাকে analyse করে—তন্ন তন্ন করে criticise করে তার পরে সেটাকে ত্যাগ করে—এবং ত্যাগ করে মহত্তর সত্যে উপস্থিত হয়। তারপর সেটাও analyse করে তন্ন তন্ন করে criticise করে এবং মহত্তম সত্যে উপনীত হয়।

 জীবন সেই রকম। নিজের বর্ত্তমান জীবনকর্ম্ম—সমস্ত harmonise করিবার জন্য একটা philosophy যে রকম করে হউক গঠন কর। তার পরে ঐ অনুসারে জীবন চালাও —এদিকে মনের ভিতরে সেটাকে প্রত্যেক মুহূর্ত্তে ভাঙো এবং গড়—destroy and construct. Life progresses through continual construction and destruction. একটা গড় সেটা ভাঙো— আর একটা গড়—সেটা ভাঙো—গড় and so on....

 Something cannot come out of nothing. Man proceeds from Truth to higher Truth. We must pass through inconsistencies. They fulfil life.

 বেশী আবেগ আসিলে—reason—critical power, analytic and synthetic power কমিয়া যায়। কারণ শুধু cool moments-এ এসব ঠিক ঠিক চালান যায়।......

20-9-15

 শরীরের যে রকম অবস্থা—তাহাতে জীবনে বিশেষ কিছু করিতে পারিব বলিয়া মনে হয় না। বিবেকানন্দের ঐ কথাগুলি বড় ঠিক “Iron nerves and a well intelligent brain and the whole world is at your feet.”

 Change-এ গিয়ে যদি শরীর একেবারে ভাল হয় তাহা হইলে বুঝিবে— জীবন ধারণে লাভ আছে।