পদাবলী-মাধুর্য্য/সপ্তম পরিচ্ছেদ

৭৷ অনুবাদ

 রাধা ঘর-সংসার আগ্‌লাইয়া ছিলেন—সুখের সরঞ্জাম সকলই আছে; সংসারে দশজনের মত সংসারী সাজিবেন, গৃহস্থালী করিবেন—নববধূ রাধার মনে কত সাধ! কিন্তু সহসা কাহার নাম শুনিয়া চমকিয়া উঠিলেন—যিনি তাঁহার আপন হইতেও আপন—এ যে তাঁহার স্বর! সংসার যাঁহাকে পর করিয়া রাখিয়াছে, তথাপি যিনি প্রাণের প্রাণ, যুগ-যুগান্তর ধরিয়া রাধা যাঁহাকে চাহিয়াছিলেন, যাঁহাকে পাইবার জন্য কোন জন্মে কুটীরে কোন জন্মে রাজপ্রাসাদে, কোনবার সন্ন্যাসীর আশ্রমে, কোন বার মুছাফেরখানায়—কত বার কর রূপে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছেন–কখনও সেওড়া-গাছকে বিল্বতরু-ভ্রমে পূজা করিয়া নিষ্ফল হইয়াছেন, কখনও বা মালতীহার-ভ্রমে সর্পকে গলায় জড়াইয়া দংশনের জ্বালায় ছটফট করিয়াছেন—কখনও গঙ্গা-ভ্রমে কূপোদকে অবগাহন করিয়া বিষাক্ত জীবাণু দেহে লইয়া আসিয়াছেন, যখন যেখানে গিয়াছেন— “তত্রতত্রাচলাসক্তি”—সেইখানেই আসক্তির মোহে কাঞ্চন বলিয়া কাচকে আঁকড়াইয়া ধরিয়াছেন—আজ সেই চির-অভীপ্সিত জীবন-ধন কৃষ্ণের নাম শুনিয়াছেন—তখনই কাণ সেই নাম চিনিল, নাম কাণের ভিতর দিয়া মর্ম্মে প্রবেশ করিল, প্রাণ আপন জনকে চিনিতে পারিল। এইবার ঘোর দ্বন্দ্ব—সংসার সবে সোণার শিকল গড়াইয়া আনিয়াছে—পায়ে পরাইবে—–ঘোর আসক্তি জন্মিয়াছে—এই সংসার কেমন করিয়া ছাড়িবেন? অপরদিকে যাঁহার নাম শুনিয়াছেন, তিনি যে জগতের সকল কিছু হইতে আপন। নাম যে দুর্দ্দান্ত দস্যুর মত সকল আসক্তি, সকল কামনা ভাঙ্গিয়া-চুরিয়া আসিয়া পড়িয়াছে; হামাগুড়ি দিতে শিখিয়া দুরন্ত শিশু যেরূপ মায়ের সোণার গহনার বাক্সটি লইয়া টানাটানি করে, তাঁহার বড় সাধের আয়না, চিরুণী, ফিতা টান দিয়া ফেলিয়া দেয়—মা কিছুতেই তাহাকে রোধ করিতে পারেন না—রাধার আজ সেই অবস্থা! মা তাঁহার মূল্যবান্‌ অলঙ্কারগুলি জোর করিয়া—কাড়াকাড়ি করিয়া শিশুর হস্ত হইতে রক্ষা করিতে চান্‌, কিন্তু শিশু তাহা ছাড়ে না—নবোদ্গত দুটি দাঁত প্রকাশ করিয়া হাসে—সে হাসির মত অবাধ্য অথচ প্রিয়, অত্যাচারীর জোর এবং বিজয়ীর গর্ব্বের মত সে হাসির দুর্ল্লভ আনন্দ মাতার অপর সমস্তা চিন্তা ভুলাইয়া দেয়, আজ রাধার নাম শুনিয়া সেই অবস্থা হইতেছে। সে নাম শুনিবেন না—সংসারের সকল সুখের বিঘ্নকর কুলভঙ্গকারী নাম আর শুনিবেন না; পদ্মার মত উহা ঘর-বাড়ী ভাঙ্গিতে আসিতেছে; রাধা বিব্রত হইয়া আপনাকে রক্ষা করিতে চেষ্টা করিতেছেন,–—

“পাশরিতে চাহি মনে, পাশরা না যায় গো,
কি করিব, কহবি উপায়।” (চ)

কর্ণ যে একমাত্র কথা শুনিবার জন্য সহস্র কথা শুনিয়াছে, এবার তাহা শুনিয়াছে, অপর কথা শুনিবে কেন? প্রাণ যাঁহাকে খুঁজিয়া শত সহস্র বিষয়ের পিছনে পিছনে ছুটিয়াছে, আজ সে তাহা পাইয়া জুড়াইয়াছে,—মরীচিকার পিছনে সে ছুটিবে কেন? ইন্দ্রিয়গুলি সব বিদ্রোহী হইয়াছে—রাধা বলিতেছেন—

“ধিক্‌ রহ আমার ইন্দ্রিয় আদি সব।
সদা যে কালিয়া কানু হয় অনুভব॥” (চ)

একান্ত বিপন্না আজ রাধা, তাঁহার সর্ব্বস্ব গঙ্গার আবর্ত্তে ডুবিয়া যায়, এসময়ে নাবিক যেমন নিঃসহায়ভাবে ভগবানের শরণ লয়, রাধা তেমনি জোড় হস্তে, যিনি তাঁহার সর্ব্বনাশ করিতেছেন—ছন্ন-ছাড়া, গৃহ-হারা করিতেছেন, তাঁহাকেই ডাকিয়া বলিতেছেন, “আমার রাজার কুল রাখ, আমার চিরপ্রতিষ্ঠ সতীত্বের গৌরব রাখ, সিংহদ্বারের মত অজেয় আমার ধৈর্য্য ও সংযম রক্ষা কর, আমার কুল-মান রাখ, এই আকাশ-স্পর্শী সামাজিক প্রতিষ্ঠার অট্টালিকা রাখ,—আমার বড় সাধের গৃহস্থালী রাখ।” নাম-দস্যু তাহা শুনিল না,—সমস্ত দর্প, অভিমান, রমণীর সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ভূষণ, লোকলজ্জা ও ধৈর্য্য ভাঙ্গিয়া চুরিয়া চুলের মুটি ধরিয়া রাধাকে বাহিল করিল। তখন কোথায় গেল কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদ, কোথায় গেল উত্তর-কোশলের রাজধানী অযোধ্যা, কোথায় গেল নদীয়ার শচী-মায়ের স্নেহ-নীড় ও বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রেমকুঞ্জ, শ্রীখেতুবীর রাজপুরী—মুণ্ডিত মস্তক, করঙ্ক-হস্ত, যজ্ঞ-সূত্রহীন, শিখাশূন্য, সংসারের সর্ব্ব-সংস্কার-মুক্ত এক অপাপ-বিদ্ধ, অনবদ্য মূর্ত্তি বাহির হইল, ঘরের বাহির হইবার পূর্ব্বে রাধা একবার সখীদের মুখের দিকে চাহিয়া বলিয়াছিলেন,

“আছে শুধু প্রাণ বাকি—
তাও বুঝি যায় সখি,
কি করব কহবি উপায়?” (শ্যা)

‘আমার সাংসারিক জীবনের অবসান হইয়াছে, প্রাণ আছে, কিন্তু তাহা সাংসারিক সুখ-দুঃখে আর সাড়া দেয় না।’ সখীরা বলিতেছেন—শ্যাম একবার যাঁহাকে ধরেন, তাঁহাকে ছাড়েন না, তুমি তাঁর পায় ধরিয়া বল “আমায় নিও না”

“শ্যামানন্দ দাসে কয়  শ্যাম তো ছাড়িবার নয়
পার যদি ধর গিয়া পায়।”

রাধা তখন কৃষ্ণের পায়ে ধরিলেন,—সেই চরণ-কমলই পাইলেন, আর কিছু পাইলেন না। তখন “সকলই পাইয়াছি”, বলিয়া সেই চরণ-কমল শিরোধার্য্য করিয়া লইলেন।

 সে পথে যাইব না বলিয়া পা’ ফিরাইয়াছি, তবুও পা’ সে পথে গিয়াছে; জিহ্বাকে সংযত করিয়া বলিয়াছি, কৃষ্ণনাম লইও না, জিহ্বা সে নাম ছাড়ে নাই; যাঁহার নাম শুনিব না বলিয়া সঙ্কল্প করিয়াছি, কিন্তু প্রসঙ্গে কেহ তাঁহার কথা উত্থাপন করিলে কাণ অতর্কিত ভাবে সেই নাম অভিনিবিষ্ট হইয়া শুনিয়াছে। সংসার হিরণ্যকশিপুর মত যত উৎকট বাধার সৃষ্টি করিয়াছে, রাধিকার প্রাণ প্রহ্লাদের মত প্রবল বেগে সে বাধাগুলি অতিক্রম করিয়াছে,—

“যত নিবারিয়ে তায় নিবার না যায়,
আন পথে ধায় পদ কানু-পথে ধায়।
এ ছার বাসনা মোর হইল কি বাম,
যার নাম নাহি লব লয় সেই নাম॥
যে কথা না শুনিব করি অনুমান।
পর-সঙ্গে শুনিতে আপনি যায় কাণ॥
এ ছাড় নাসিকা মুঞি কত করু বন্ধ।
তবু তো দারুণ নাসা পায় শ্যাম-গন্ধ॥
ধিক্‌ রহ এ ছাড় ইন্দ্রিয় আদি সব।
সদা সে কালিয়া কানু হয় অনুভব॥” (চ)

 দশ ইন্দ্রিয় করযোড়ে তাঁহার পূজা করিতে দাঁড়াইয়াছে। নব মত্ত করী “যেমন অঙ্কুশ না মানে” রাধিকার মন কিছুতেই সেই ইন্দ্রিয়ের গতি ফিরাইতে পারিতেছে না।

 অন্যান্য কবিদের রাধাকৃষ্ণ মানস-হ্রদের রাজ-হংস, তাঁহাদের লীলাই বেশী করিয়া চক্ষে পড়ে। কিন্তু চণ্ডীদাসের রাধার নিকট কৃষ্ণ-প্রেম আসিয়াছে বন্যার মত। অপরাপর কবিরা কেহ এই প্রেমকে ঠেকাইয়া রাখিতে চান নাই, কারণ তাহার বেগ এত প্রলয়ঙ্কর নহে। কিন্তু চণ্ডীদাসের রাধা ‘রাগানুগা’ প্রীতির সর্ব্বোচ্চ দৃষ্টান্ত—সে দৃষ্টান্তে আমরা শুধু চৈতন্য-দেবে পাই। যখন উহা আসে, তখন ভাঙ্গিয়া চুরিয়া আসে, সমস্ত বাধা চূর্ণ করিয়া গঙ্গার মত সগৌরবে বিজয়-বার্ত্তা ঘোষণা করিতে করিতে আসে।

 এখানে একটা অবান্তর কথা বলিব। বৌদ্ধ-ধর্ম্ম অত্যন্ত দুঃখ-নিবৃত্তির জন্য ইন্দ্রিয়গুলিকে একেবারে নির্ম্মূল করিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু বৈষ্ণবেরা বলেন, জগতের কিছুই মিথ্যা বা অব্যবহার্য্য নহে। এই ইন্দ্রিয়গুলির যে দুর্দ্দমনীয় শক্তি, তাহা ভগবানের মন্দিরে পৌঁছাইবার প্রকৃষ্ট পন্থা, এ জগতের খড়-কুটো সকলটা দিয়াই বিশ্বের প্রয়োজন আছে। রাধিকা ইন্দ্রিয়ের দুর্দ্দমনীয় স্রোতঃ দিয়া সেই পথে যাইতেছেন, যে পথে দিয়া গেলে ডিঙ্গি “অন্তিমে লাগিবে গিয়া ত্রিদিবের ঘাটে।”

 আমি বৈষ্ণব-কবিতা প্রসঙ্গে একস্থানে লিখিয়াছিলাম—এই পদাবলী যেন সমুদ্র-মুখী নদীর স্রোত:—দুই কুলে মনুষ্য-বসতি, ভ্রমরগুঞ্জিত পুষ্পবন, হাটের কলরব, পথিকের রহস্যালাপ, গোচারণের মাঠ, শিশুর কাকলী-মুখরিত মাতৃ-অঙ্গন, সখাদের খেলাধূলা,—নদীর যাত্রাপথের দুই দিকে কত দৃশ্য—কত মন্দানিলচালিত, কেতকীকুন্দ-গন্ধামোদিত উপবন, কত সোণার ফলসে হাস্যময় দিগ্বলয়ে দিগ্বধুদের অঞ্চললীলা। পার্থিব সকল দৃশ্যই দু’কূলে দেখিতে দেখিতে নৌকার পান্থ চলিতে থাকিবেন। কিন্তু যখন মোহনায় পৌঁছিবেন, তখন দেখিবেন, দূরে অকুল-প্রসারিত অনন্ত সাগর, সেখানে সমস্ত কলকোলাহল থামিয়া গিয়াছে, সেখানে জগতের সমস্ত রহস্যের নির্ব্বাক্‌ ধ্যানমূর্ত্তি। বৈষ্ণবকবিরা জগতের কোন কথাই বাদ দেন নাই, কিন্তু সকল কথার সঙ্গেই পরমার্থ-কথার যোগ রাখিয়াছেন; এই সাহিত্য-ধারার সর্ব্বত্রই সমুদ্রের হাওয়া খেলে, এখানে মোহনা বন্ধ হইয়া নদী বিলে পরিনত হয় নাই; অনন্তের সঙ্গে এই যোগ—ইহাতে বৈষ্ণব সাহিত্যের সর্ব্বত্র এক পাবনী-শক্তি বিদ্যমান। এই বৈশিষ্ট্য সাধারণতঃ পৃথিবীর অন্য কোন সাহিত্যে দৃষ্ট হয় না, বৈষ্ণবপদ রস ও রহস্যের সংমিশ্রণে অপূর্ব্ব হইয়াছে। আমরা যতই কেন ক্ষুদ্র না হই, অনন্তের সঙ্গে যোগ থাকাতে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনন্ত; মানুষ কোথায় যাইতেছে, এত হাঁটাহাটি—এত ক্লান্তি, এত অবসাদ, এত সুখ-দুঃখের পরিমাণ কি, তাহা আমরা বলিতে পারিতেছি না। কিন্তু আমাদের এই দুর্গম পথে যে ভবিষ্যতের বহু দূর পর্য্যন্ত প্রসারিত এবং আমরা যে এই পথের ক্ষুদ্রতম একাংশ মাত্র পর্য্যটন করিতেছি, তাহা সকলেই উপলব্ধি করিতেছি। বৈষ্ণব কবিতার প্রতি পৃষ্ঠায় এমন দুই একটি ছত্র পাওয়া যাইবে, যাহাতে সেই অনস্ত পথের আভাস আছে, এই জন্য এই কবিতাগুলি রসিক পাঠকের যেমন উপভোগ্য, তাহা হইতে যাঁহারা বেশী কিছু চাহেন, সেই রূপ পাঠকেরও তেমনি বা ততোধিক উপভোগ্য। এই রস-ধারা মর্ত্ত্যের পথেই চলিয়াছে, কিন্তু মনে রাখিতে হইবে—ইহা বিষ্ণুপদচ্যুতা। জয়দেব লিখিয়াছেন,—

যদি হরি স্মরণে সরসং মনো-
যদি বিলাসকলাসু কুতুহলং।
মধুরকোমলকান্তপদাবলীঃ
শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্‌॥

যাঁহারা ভগবৎপ্রসঙ্গ শুনিতে চাহিবেন এবং যাঁহারা পার্থব প্রেমের আস্বাদ প্রত্যাশা করেন, সেই উভয়বিধ পাঠকের তৃপ্তির উপকরণ গীতগোবিন্দে আছে।

 চণ্ডীদাস যখন নাম-জপের কথা বলিতেছেন, রাধাকে নীলাম্বরী শাড়ী ছাড়াইয়া গৈরিক বাস পরাইতেছেন, তাঁহাকে দিয়া উপবাস করাইতেছেন (“বিরতি আহারে, রাঙ্গা বাস পরে”), তখন আমরা সত্যই সেই পারমার্থিক ইঙ্গিত বুঝিয়াছি। এই উপলক্ষে কবি আরও স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন “যেমন যোগিনী পারা।” রাধার ভাব-বিহ্বলতা বাড়িয়া যাইতেছে, তিনি জপ ছাড়িতে পারিতেছেন না, নাম—“বদন ছাড়িতে নাহি পারে”। কোন কোন স্থানে রাধিকা মন্দিরের পুরোহিতের ন্যায় মন্ত্রপাঠ করিতেছেন,—

“অখিলের নাথ,  তুমি হে কালিয়া,
যোগীর আরাধ্য ধন,
গোপ-গোয়ালিনী,  হাম অতি দীনা
না জানি ভজন পূজন।”
“বঁধু কি আর বলিব আমি  আমার জীবনে মরণে
জনমে জনমে প্রাণ-বঁধূ হইও তুমি,
তোমার চরণে,    আমার পরাণে
বাঁধিল প্রেমের ফাঁসি
সব সমাপিয়া,    এক মন হৈয়া
নিশ্চয় হইলাম দাসী” (চ)

 এই গানটি কিছু কিছু পরিবর্ত্তন করিয়া ব্রাহ্মগণ তাঁহাদের ধর্ম্মসঙ্গীতগুলির মধ্যে স্থান দিয়াছেন। [‘বঁধুর’ স্থানে ‘প্রভো’, “জনমে-জনমে”র স্থলে “জীবনে জীবনে”, “ফাঁসি”র স্থলে “ফাঁস”, সুতরাং দাসীর স্থলে ‘দাস’] এই গানটি সম্বন্ধে পরে আরও কিছু লিখিব। এরূপ অনেক পদ আলোচনা করিলে দেখা যাইবে, চণ্ডীদাসের মূল সুর কোথায়? তিনি জগতের ভিতর দিয়া জগদীশ্বরকে দেখিয়াছিলেন,—তিনি কোন মন্দিরে তাঁহার সাক্ষাৎলাভ করিয়া লিখিয়াছেন,—

“ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আছয়ে যে জন,
   কেহ না জানয়ে তারে,
প্রেমের আরতি যে জন জানয়ে,
   সেই সে চিনিতে পারে।” (চ)

এই প্রেম-তীর্থের পথিকরে আমাদের এত ভাল লাগে এইজন্য যে, বিষ্ণুশর্ম্মা যেরূপ গল্প শুনাইতে যাইয়া রাজকুমারদিগকে নীতি-শিক্ষা দিয়াছিলেন, চণ্ডীদাসও তেমনই মানুষী প্রেমের কাহিনী দ্বারা লুব্ধ করিয়া তাঁহার দেশবাসীকে সর্ব্ব কথার মধ্যে যাহা সার কথা তাহাই শিখাইয়াছিলেন। ভাল গায়েনের মুখে কীর্ত্তন না শুনিলে বৈষ্ণব কবিগণের পদের অর্থ সম্যক্‌ বুঝা যাইবে না। যেরূপ গাছ-গাছড়ার উপাদানের সঙ্গে না মিশাইলে ভেষজ সার্থক হয় না, সেইরূপ কীর্ত্তনের আসরে না গেলে মহাজনগণের স্বরূপ আবিষ্কার করা অনেকের পক্ষে দুষ্কর হইবে।