পরপারে

———শ্রীধীরেন্দ্রনাথ চন্দ্রের নবতম অবদান———
চন্দ্র ফিল্ম কোম্পানীর প্রথম অর্ঘ্য
ডি, এল, রায়ের
পরপারে
[সামাজিক আলেখ্য]
আরম্ভ দিবস—৪ঠা জুলাই, শনিবার, ১৯৩৬
চিত্রা

পরপারে— 

কর্ম্মীসঙ্ঘ

পরিচালক
শ্রীযতীন দাস
সহকারী

শ্রীসন্তোষ সিংহ
শ্রীঅয়স্কান্ত বক্সী
আলোক চিত্রশিল্পী

শ্রীপ্রবোধ দাস
সহকারী
শ্রীঅজয় কর
শব্দযন্ত্রী
শ্রীজ্যোতিষ সিংহ
সহকারী
মিঃ এম ইলিয়াস
দৃশ্য-শিল্পী
শ্রীবটু সেন
সহকারী

দ্বারিকা
খরবুজা
রসায়নাগারাধ্যক্ষ
শ্রীকুলদা রায়
শ্রীসুধীর দে
সম্পাদক

মিঃ ধরমবীর ও বৈজনাথ
রূপ-সজ্জাকর
শ্রীহরিপদ চন্দ্র
সুরশিল্পী
শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র দে

বিশিষ্ট ভূমিকায়

মহিম
  
শ্রীদুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশ্বেশ্বর
  
শ্রীঅহীন্দ্র চৌধুরী
পার্ব্বতী
  
শ্রীনির্ম্মলেন্দু লাহিড়ী
দয়াল
  
শ্রীমনোরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
প্রদ্যোত
  
শ্রীভূমেন রায়
কালী
  
শ্রীশৈলেন চৌধুরী
ভবানী
  
শ্রীঅনুপম ঘটক
পরেশ
  
শ্রীসন্তোষ সিংহ
শ্রীশ
  
শ্রীসন্তোষ দাস
চারু
  
শ্রীকৃষ্ণধন মুখার্জ্জি
বিনোদ
  
শ্রীআশুতোষ বসু
ম্যাজিষ্ট্রেট
  
শ্রীঅতুল গাঙ্গুলী
ড্রাইভার
  
মিঃ তিলা মহম্মদ
সন্তরণপটু বালক
  
শ্রীমান রমেশ খাণ্ডেলওয়াল
বালক মহিম
  
শ্রীরমেন চন্দ্র
রমেশ
  
শ্রীসুহাস সরকার
ইন্সপেক্টরদ্বয়
  
শ্রীরাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীসুবলচন্দ্র ঘোষ
সরযূ
  
শ্রীমতী জ্যোৎস্না গুপ্তা
শান্তা
  
শ্রীমতী বীণা দেবী
হিরণ্ময়ী
  
শ্রীমতী নিভাননী
করুণাময়ী
  
শ্রীমতী নগেন্দ্রবালা
সন্তরণপটু বালিকা
  
কুমারী সাবিত্রী খাণ্ডেলওয়াল

সরযূর ভূমিকায়: জ্যোৎস্না গুপ্তা
মহিমের ভূমিকায়: শ্রীদুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায়

পরপারে

 মধ্যবিত্ত গৃহস্থ ঘরের ছেলে মহিম। শৈশবে পিতৃহারা মাতৃঅঙ্কে অশেষ স্নেহে পালিত হয়। গ্রাম্য সম্পর্কে মামা দয়াল···অনাথা বিধবার রক্ষণাবেক্ষণের ভার গ্রহণ করে।···সুখে দুঃখে দিনগুলো বেশ কেটে যাচ্ছিল।

 দয়ালের ইচ্ছা কাত্তিকের মত ফুটফুটে ছেলেটি রাজার জামাই হয়। সেই আশাতেই সে একদিন তাহার বাল্যসখা কলিকাতার জমিদার বিশ্বেশ্বরের গৃহে যেয়ে উপস্থিত হ’ল।

বিশ্বেশ্বর বেশে অহীন্দ্র চৌধুরী

বিশ্বেশ্বর অগাধ সম্পত্তির মালিক। তাঁর আপনার বলতে একমাত্র দৌহিত্রী সরযূ। মাতৃহীনা শিশুকে মাতার অধিক স্নেহ-ছায়ায় মানুষ করে তোলেন। তাঁরও ইচ্ছে গরীবের ছেলে নিজের গৃহে রেখে আপন তত্ত্বাবধানে মানুষ করে তোলেন। দয়ালের প্রস্তাবে তিনি রাজী হ’লেন।···বিবাহ হ’য়ে গেল।···

 আমাদের গল্প আরম্ভ হয় এইখান থেকে।···গরীবের ছেলে মহিম···এই বিলাসীতার আবেষ্টনে আপনাকে হারিয়ে ফেলে। ···মাকে ভুলে সে শ্বশুরের ঘরে সুখের ঘরে বাঁধতে প্রয়াসী হয়।···মা তাঁর স্বামীর ভিটেয় ছেলের আশা-পথ চেয়ে দিন গুণতে থাকে।···চিঠির পর চিঠি লেখে দয়াল।···

 মহিম নিত্য মোটরে চড়ে যায় টেনিস খেলতে···ঘরে ফিরে স্ত্রীর অঞ্চল-তলে আপনার অস্তিত্বকে দেয় ডুবিয়ে।···এমনি ভাবে দিনগুলো কাটতে থাকে।···

 দানবীর বিশ্বেশ্বরের দানের ঘটায় সব শেষ হ’তে বসে। .....তারই সুবিধা অর্জ্জন ক’রে একজন তার ভাগ্যান্বেষণ করতে থাকে ― সে পার্ব্বতী। ক্রূর-শয়তান সমাজ জঞ্জাল― পার্ব্বতী, আরও শত শত সমাজনেতার মত সমাজের শিয়রে বসে শত অনাচার কলুষে কলুষিত হ’য়েও অপ্রত্যাহত থাকে। তারই জীবন রহস্যে দেখতে পাই―দুটি নর-নারী। একটি গৃহহীন পরাশ্রিত ভবানীপ্রসাদ, আর একটি—উন্মাদিনী হিরণ্ময়ী।...

 আর সেই পার্ব্বতীর কামের ইন্ধন দিতে আনে তারই পাপকর্ম্মী তিনটি বন্ধু―চারু, বিনোদ ও কালীচরণ একটি সাধরণ নারীকে―নাম তার শান্তা। গান গেয়ে তার জীবন কাটে। তাকেই ঘিরে তাদের আনন্দ উৎসব চলতে থাকে।...

 মহিমের বিলাসী বান্ধবের একজন তার অন্তরঙ্গ হয়―সে প্রদ্যোত।... বিলাসী উচ্ছৃঙ্খল ধনীর দুলাল প্রদ্যোতের সঙ্গে সে ভেসে চলতে থাকে―জীবনের নব নব রস বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে। সেই ভেসে চলার পথে একদিন অকস্মাৎ মিলন হয় এই শান্তারই সঙ্গে। তাকেই আশ্রয় করে মহিমের জীবন-নাট্য গড়ে উঠতে থাকে।...... সুখের আশী প্রদ্যোত কালচক্রে মহিমের ভাগ্যাকাশ থেকে অস্তমিত হয়।...... মহিমের ভাগ্যাকাশে ক্রমে মেঘ জমে উঠতে থাকে।

 এদিকে পুত্রের পথ চেয়ে..... পরিশ্রান্তা স্নেহান্ধা জননীর জীবনভার দুর্ভর হ’য়ে ওঠে। ...চোখের জলে ভেসে―পুত্রনাম কণ্ঠে নিয়ে জননী ইহলীলা ত্যাগ করেন।

 সাধ্বীসতী-স্বামী বিরহণী সরযূ গৃহকোণে নীরবে অশ্রু বিসর্জন কোরতে থাকে।...

 মহিম জীবনের ঘন দুর্য্যোগে পথ হারিয়ে ফেলে। আসন্ন মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে সে পথ সন্ধান কোরতে থাকে―সেদিন সেই পথেরই সন্ধান দিতে সতী গৃহের গণ্ডী ভেঙ্গে পথে এসে দাঁড়ায়। পুণ্যস্মৃতি সাবিত্রীর ন্যায় সতী মৃত্যু-দেবতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে প্রবৃত্ত হয়।... মৃত্যুকে জয় করতে নিজে মৃত্যু বরণ করে।... সতীর সে করুণ আত্মবিসর্জ্জন মৃত্যু-দেবতার কঠিন প্রাণও গলিয়ে দেয়। দেবতা পরাজয় স্বীকার করে।...

 এদিকে যেদিন পার্ব্বতী, বিশ্বেশ্বরের সর্বস্ব অপহরণ করে আত্মস্মাৎ করতে বসে―সেইদিনই তার সমকর্ম্মীর দল তাদেরও অংশ হিসেব করতে বসে।... পার্ব্বতী তাদের বঞ্চিত করতে উদ্যত হয়।...

 পার্ব্বতীরই বন্ধু কালীচরণের মুখে তারই পরিণতি ব্যক্ত হয়―

 “The wages of sin is death.”...

 সেই অপূর্ব্ব রহস্যই পরপারের চিত্রনাট্যে ক্রমবিকাশ লাভ করছে।

(ভবানী)

এবার তোরে চিনেছি মা, আর কি শ্যামা তোরে ছাড়ি।
ভবের দুঃখ ভবের জ্বালা [ এবার ] পাঠিয়ে দিছি যমের বাড়ী॥
হাত ধরে নিলি মোরে [ আমি ]ভাবনা ভীতি গেলাম ভুলে ―
চোখের বারি মুছিয়ে দিয়ে [ তখন ] নিলি আমায় কোলে তুলে;
দেখা দিলি ধ্রুবতারা [ অমনি ] তারা ব’লে দিলাম পাড়ি।

[ডি, এল, রায়]

(শান্তা)

ভালবাসা মোর ফুল হ’য়ে ফোটে জাননা ওগো―জাননা প্রিয়।
তোমারি পূজায় দিনু সেই ফুল―হে প্রিয় তুমি আমারে নিও।
আমি দিনু প্রেম তুমি দেও সাজা, ওগো সুন্দর! ওগো মহারাজা!
চির সুন্দর থাক তুমি প্রাণে―হে স্মরণীয়―হে স্মরণীয়!

[শ্রী শৈলেন রায়]

(শান্তা)

তরুণ তপন ফুলেরই নয়নে
এসেছ আমারই প্রেমের স্বপনে।
দখিন বাতাসে সুবাস আভাষে
প্রথম প্রণয়ে এলে কি জীবনে?
নয়ন চাহিতে ভুলিনু আমারে,
যা ছিল আমার দিয়েছি তোমারে;
ওগো মন চোর, তুমি শুধু মোর
জীবনের রাজা স্বপনে শয়নে।

[শ্রী শৈলেন রায়]

(ভবানী)

আর কেন মা ডাকছ আমায় এই তো আমি তোমার কাছে।
নাও মা কোলে দাও মা চুমা এখন তোমার যত আছে।
সাঙ্গ হ’ল ধূলা খেলা
হ’য়ে এল সন্ধ্যা বেলা
ছুটে এলাম এই ভয়ে মা এখন তোমায় হারাই পাছে।
এবার যদি পেয়েছি শ্যামা,
আর ত তোমায় ছাড়ব না মা―
ওমা, ঘরের ছেলে পরের কাছে মাকে ছেড়ে সেকি বাঁচে।

[ডি, এল, রায়]

(শান্তা)

চেয়ে থাকি দূর সান্ধ্য গগনে ধীরে দিবা হয় অবসান।
তন্দ্রা জড়িত অলস শ্রবণে পশে প্রভাতের পিকগান।
আমি জানি না কাহারে বলিতে আপন,
তারা এসে হেসে চলে যায়;
আমি অপর কাহার জীবন যাপন করি যেন এসে বসুধায়।
আমি চাপিয়া বক্ষে রাখি আঁখি বারি, চাপিয়া বক্ষে অপমান।

[ডি, এল, রায়]

(শান্তা)

তোমারেই ভালবেসেছি আমি তোমারেই ভালবাসিব।
তোমারই দুঃখে কাঁদিব সখে তোমারই সুখে হাসিব।
মেলেছি নয়ন তব জ্যোৎস্নার জাগরণে,
মুদিব নয়ন তব সুপ্ত নয়ন সনে,
জীবনে মরণে আমি তোমারি―তোমারি কাছে
জনমে জনমে ফিরে আসব।

[ডি, এল, রায়]

(ভবানী)

শুধু দুদিনেরই খেলা
ঘুম না ভাঙ্গিতে, আঁখি না মেলিতে—
দেখিতে দেখিতে ফুরায় বেলা।
আশার ছলনে কত উঠি পড়ি—
কত হাসি কাঁদি কত ভাঙ্গি গড়ি!
না বাঁধিতে ঘর—হাটের ভিতর
ভেঙ্গে যায় এই সাধের মেলা।

[ডি, এল, রায়]

(ভবানী)

দহন জ্বালা সইতে পারি মোরে দেও—দেও কিছু সঞ্চয়।
দুঃখে ওগো—দুঃখে যেন—তোমায় ভুলে না করিগো ভয়।
যখন প্রাণের প্রদীপ জ্বালি  জমেই যদি একটু কালি—
(জানি) ক্ষমার চোখে পথ চেনাবে
তুমি আমায় কোরবে নাকো লয়।

[শ্রীশৈলেন রায়]

চন্দ্র ফিল্মস্ কোম্পানীর প্রচার বিভাগ হইতে, শ্রীসুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য কর্ত্তৃক সম্পাদিত এবং ১৬।১।এ, বিডন ষ্ট্রীট, কলিকাতা, বি, নান, কর্ত্তৃক প্রকাশিত ও তাপসী প্রেস, ৩০, কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট হইতে শ্রীগঙ্গানারায়ণ ভট্টাচার্য্য দ্বারা মুদ্রিত।



১৬।১নং বিডন ষ্ট্রীট, কলিকাতা
বি, নান, (পাবলিসিটি এজেণ্ট)
কর্ত্তৃক প্রকাশিত ও সর্ব্বস্বত্ব সংরক্ষিত
এবং ফাইন আর্ট প্রেস
কর্ত্তৃক কভার মুদ্রিত।



এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।