পরিত্রাণের কেবল মাত্র পথ

পরিত্রাণের কেবল মাত্র পথ
অজ্ঞাত লেখক অনূদিত

যে ব্যক্তি কোন বিষয় শুনিবার পূর্ব্বে তাহার

বিচার করে সে জ্ঞানী নহে।

পরিত্রাণের কেবল মাত্র পথ।

অথবা

আদি ধর্ম্মপুস্তক উদ্ধার।

অর্থাৎ

ইদানিন্তন মহাত্মাদের প্রভু য়িশু খ্রীষ্টের আদি

মতের বিশেষঃ ব্যাখ্যা

আমেরিকান পাদরি এবং ইটালিএন ও সুইস্ এবং

ভারতবর্ষীয় খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী সকলের অধ্যক্ষ

শ্রীলারেঞ্জো সাহেব কৃত ইংরাজি পুস্তক

হইতে বঙ্গভাষায় অনুবাদিত হইল।

কোন পথ ভ্রমণকারী মূর্খ হইলেও তাহার কুপথে

যাইবার আবশ্যক নাই।

ধর্ম্ম ঘোষক উইলেম উইল্স ও
জোসেপ্ রিচার্ড।
আই. পি. মিক্‌—সম্পাদক
কলিকাতাস্থ মণ্ডলী।

কলিকাতা

কলম্বিয়ান্‌ যন্ত্রে মুদ্রাঙ্কিত হইল।

ইং ১৮৫২ সাল।

জ্ঞানি ব্যক্তিরা বিশেষ রূপে না জানিয়া কোন

বিষয় নির্ণয় করেন না।


 জগদীশ্বর এমত কতিপয় বিশেষ নিয়ম স্থাপন করিয়াছেন যে তাহা অবগত হইয়া পালন করিলে মনুষ্যরা তত্ত্বজ্ঞান ও পারমার্থিক সুখ এবং দৈব শক্তি প্রাপ্ত হয়। এমতে আদিকালে ও প্রেরিতদিগের সময়ে যে২ ব্যক্তি ঐ সকল নিয়ম জ্ঞাত হইয়া সেই মত কার্য্য করিয়াছিল তাহারা উক্ত জ্ঞান ও সুখ এবং শক্তি পাইয়াছিল। তাহার উদাহরণঃ। বলি দানের নিয়ম পরমেশ্বর কর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে এবং তাহা করিলে লোক পরম সুখ ভোগি হয়, এই কথা অবগত হইয়া আদম পুত্র এবেল তদনুরূপ করিবাতে তিনি পরমেশ্বরের প্রতক্ষ পাইয়া ধন্য হইয়াছিলেন।

 অপর দৃষ্টান্তঃ। জল প্লাবনের পুর্ব লোকেরা ভ‍্রণ্ঠা চারি হইবাতে তাহাদিগের নিধন কাল উপস্থিত হইলে ঈশ্বর ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিদিগের রক্ষা জন্য যে উপায় প্রকাশ করিলেন তাহা যে২ ব্যক্তি জানিয়া তদনুযায়িক কর্ম্ম করিয়াছিল তাহারা সকলেই ঐ অঙ্গীকৃত কৃপা পাইয়াছিল। জেরিকো নগর অধিকার বিষয়ে ঈশ্বর যে কএক নিয়ম স্থির করেন তাহা যথার্থ পালন করিয়া জোশিউয়া অবিলম্বে ঈশ্বরানুজ্ঞানুসারে ঐ নগরের স্বামী হইয়াছিলেন। আসিরীয়াদের সৈন্যাধ্যক্ষ নামান্ নামক ব্যক্তি কুণ্ঠরোগে ব্যথিত হইয়া ইলাইসা ভবিষ্যদ্বক্তাকে ঐ রোগ হইতে মুক্ত পাইবার নিমিত্তে নিবেদন করিলে ঐ ধার্ম্মিক ব্যক্তি স্বীয় শরিরে পরমাত্মার আবির্ভাব প্রসাদে কহিলেন, যর্দন্ নদীতে সপ্তবার স্নান করিলে তোমার এ রোগ শান্তি হইবে॥ প্রথমতঃ নামান্ ইহা শ্রবণে ঐউপায় সহজ প্রযুক্ত অসন্তুষ্ট হইয়া তাহা করিতে অসন্মত হইল কিন্তু পরে কিঞ্চৎ গাভীয্য পূর্ব্বক বিবেচনা করিয়া আপনাকে নম্র করত ঐ ভবিষ্যদ্বক্তার আদেশানুসারে কায্য করিবা মাত্র সে ঐ কুণ্ঠরোগ হইতে মুক্ত হইয়া পুনর্ব্বার সুস্থশরীর প্রাপ্ত হইল। ঈশ্বরের নিয়মাধিন হইয়া লোক উল্লেখিত আশীর্বাদ সকল যে রূপ প্রাপ্ত হইয়াছিল, মুসার কালেও সেই রূপ পাপের ক্ষমা পাইয়াছিল, যথা; পাপ বিমোচন প্রার্থিত ব্যক্তিমণ্ডলীর সন্মুখে একটা পশু আনয়ন পূর্ব্বক বিশেষ বিধি অনুসারে তাহা উৎসর্গ করিলেই সে তৎক্ষণাৎ অঙ্গীকৃত আশীর্ব্বাদের অংশী হইত অর্থাত তাহার অপরাধ মার্জ্জনা হইত।

 যখন মঙ্গল সমাচার প্রথম প্রচার হয় তখন লোকে পূর্ব্বোক্তমত আচরণ করণ জন্য অর্থাৎ কোন বিশেষ২ সংস্থাপিত নিয়ম পালন করাতে তাহারা পরমেশ্বরের নিকট সুখ ও আশীর্ব্বাদ পাইয়াছিল, যেহেতুক তিনি কোন২ ক্রিয়া বিসেষ রূপে চিহ্ণ করত এই অঙ্গিকার করিয়াছিলেন যে ঐ সকল ক্রিয়া যাহারা সর্ব্বতোভাবে সুসম্পন্ন করিবে তাহারা অঙ্গিকৃত আশীর্ব্বাদ অবশ্যই প্রাপ্ত হইবে। কেহ২ মিথ্যা এ রূপ মনে করেন যে মঙ্গল সমাচার প্রচার কালিন লোকে বাহ্যিক আচরন ও কর্ম্ম দ্বারা পারমার্থিক সুখ ও আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত না হইয়া কেবল বিশ্বাস ও অনুতাপ এবং মানসিক ক্রিয়া দ্বারাই তাহা পাইয়াছিল॥ কিন্তু মনুষ্যদের পরস্পরায় কথা ও অবৈধকর্ম্ম এবং ধর্ম্ম প্রতি লক্ষ না করিলেও কেবল ঈশ্বর বাক্য দৃষ্টিপাত দ্বারাই এরূপ প্রকাশ হইতেছে যে বাহ্যিক বিধি ও কর্ম্ম এবং আন্তরিক বিশ্বাস ও অনুতাপ এ উভয়ের অভেদ রূপে যোগা যোগ ছিল। ইহার প্রমাণ নিম্নে প্রকাস করা যাইতেছে, যথা; ত্রাণকর্ত্তা কহিয়াছেন তোমরা আমার বাক্যা নুসারে কার্য্য না করিয়া কেন আমাকে মুখে কেবল প্রভ২ বল॥ তিনি আরও কহিয়াছেন “যাহারা আমার কথা শুনিয়া তাহা পালন করে তাহারা সেই ব্যক্তির সদৃশ হয়, যে শৈলোপরি আপন গৃহ নির্ম্মাণ করে” এবং “আমার ধর্মে বিশ্বাস করত যে ডুবিত হয় সেই ত্রাণ পায়”। ঐরূপ যোহন্ লিখিত মঙ্গল সমাচারেও কথিত আছে, যে “জল ও পবিত্রাত্মাতে মনুষ্য পুনর্জাত না হইলে তাহারা কখন ঈশ্বর রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারেনা।” অতএব ত্রাণকর্ত্তার এই সকল উক্তিতে স্পষ্টরূপে পুমান হইতেছে যে বাহ্যকায্যদ্বারা মনুষ্যর পরিত্রাণ হইতে পারে॥

 পেণ্টকষ্ট পর্ব্ব দিবসে পিতর আপন চত্তর্দ্দিগস্থ লোকদিগকে কহিয়াছিলেন যে পাপক্ষমার নিমিত্তে অনুতাপ করিয়া অবগাহিত হইলে পবিত্রাত্মা তোমাদের উপর আবির্ভাব হইবেন॥ অতএব এই বচন দ্বারা স্পষ্ট জানা যাইতেছে যে লোকেরা বাহ্যিক বিধি নির্ব্বাহ করিলে অর্থাত জলে অবগাহিত হইলে প্রথমে পাপের ক্ষমা ও পরে পবিত্রাত্মার প্রাসাদ প্রাপ্ত হইতে পারে। সেজাহা হউক বাহ্যিক কর্ম্মের প্রতি মনোযোগি হইবার পূর্ব্বে আন্তরিক কর্ম্ম অথাত বিশ্বাস ও অনুতাপ করা নিতান্ত আবশ্যক। অবগাহনের পূর্ব্বে বিশ্বাস ও অনুতাপের অবশ্য প্রয়োজন এবং অবগাহন না করিলে পাপের ক্ষমা ও পবিত্রাত্মার কৃপা পাপ্ত হওয়া যায়না; অতএব ইহা বিলক্ষণ প্রকাশ হইতেছে যে শিশুদিগকে ব্যাপ‍্টাইজ্ করা বৃথা ও ধর্ম্ম পুস্তকের বিরূদ্ধ; কেন না শৈশবাবস্থা প্রযুক্ত বালকদের বিশ্বাস ও অনুতাপ করিবার ক্ষমতা থাকেনা কিন্তু অবগাহনের পুর্ব্বে ঐ ক্ষমতার বিশেষ প্রয়োজন করে অতএব শুদ্ধ ঐ বাহ্যিক কর্ম্মের আবশ্যক কি?

 কেহ২ এমত বোধ করেন যে পাপ বিমোচনার্থ পরমেশ্বরের অত্যাবশ্যকনীয় যে সকল বিধিস্থাপন করিয়াছেন তন্মধ্যে অবগাহনকে গণ্য করা ভ‍‍্রম ব্যতিত অন্য নহে। ইহার উত্তর এই যে, ত্রাণ কর্ত্তা ও প্রেরিতগণ আমাদিগের পূর্ব্বে ঐ মত ব্যবহার করিয়াছেন, অতএব আমাদিগেরও তাঁহারদের দৃষ্টান্তানুসারে ঐ রূপ আচরন করা কত্তব্য॥ জল প্লাবনের দ্বারা পৃথিবীর ধ্বংস অবগাহন দ্বারা পাপের ধ্বংসের দৃষ্ঠান্ত স্বরূপ হইয়াছে, কেননা পৃথিবি পাপেতে আচ্ছাদিত হইলে ধার্মিক লোকের পাপময় জগত হইতে জল দ্বারা উদ্ধার প্রাপ্ত হই য়াছিল। পিতর পরমেশ্বরের প্রতি যে ভক্তি ও শুদ্ধার কথা কহেন্ তাহা এই রূপ অবগাহন ব্যতীত অন্য নহে। নোহ ও তাঁহার পরিবার অশুদ্ধ ও পাপময় জগত হইতে পৃথক হইয়া জল দ্বারা যদ্রূপ রক্ষা প্রাপ্ত হইয়াছিল তদ্রূপ অবগাহন তাহার সদৃশ হয়। অর্থাৎ প্রভুয়িশু খ্রীষ্ট যে মহা প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছেন তাহাতে বিশ্বাস পূর্ব্বক অবগাহন করিলে আমরা পাপ ও অশুদ্ধতা হইতে মুক্ত ইহব॥

 অবগাহন দ্বারা এমত আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হওয়া যায় এ বিষয়ে অনেকে বিস্ময়াপন্ন হয়। ফলতঃ এ বিষয় কোন কার্য্যকারক নহে কারণ ন্যামান‍্কে যৎকালে যর্দন্ নদীতে সপ্তবার অবগাহন করিতে আদেশ করা গিয়াছিল তৎকালে সেও ঐ রূপ আশ্চর্য্য বোধ করিয়াছিল কিন্তু পরে পরীক্ষা দ্বারা ঈশ্বরের বাক্য যে সত্য ইহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ সে পাইয়াছিল। তাহার কুণ্ঠ রোগ অর্থাৎ শারীরিক অশুদ্ধতা জল দ্বারা পরিষ্কৃত হইবাতে তাহা, সুসমাচার মতে, বিশ্বাস ও অনুতাপ করণ পূর্ব্বক জলে অবগাহন দ্বারা মানসিক অশুদ্ধতার ধ্বংস হইবার প্রমাণ স্বরূপ হইয়াছে। যে রূপে ন্যামান্ কেবল জলের উপলক্ষ দ্বারা ঐশ্বরিক আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইয়াছিল সেইরূপে এক অন্ধমনুষ্য ত্রাণকর্ত্তার আদেশানুসারে শীলহ নামক পুষ্করিণীতে আপনাকে ধৌত করিবাতে সে পুনর্দ্দৃষ্টি প্রাপ্ত হইল॥

 ত্রাণকর্ত্তা যর্দন্ নদী হইতে উত্থান্ করিলে পর পবিত্রাত্মার কৃপা প্রাপ্ত হইলেন; অতএব এই সকল দৃষ্টান্তে স্পষ্ট প্রকাশ যে ঈশ্বরের কৃপা পাইবার জন্য জল এক বিশেষ উপলক্ষ স্বরূপ নির্দ্ধারিত হইয়াছে। পিতর কহিয়াছেন পাপ মোচন নিমিত্ত লোকে য়িশু খ্রীষ্ট নামে অবগাহিত হউক। হানানীয় শাউলকে কহিয়াছিলেন গাত্রোত্থান পূর্ব্বক অবগাহিত হইয়া আপনার পাপ প্রক্ষালন কর। ফিলিপের দ্বারা সমীরোনীয় লোকেরা অবগাহিত হইয়া আনন্দ করিয়াছিল কেননা অবগাহন দ্বারা তাহাদের পাপমোচন হইল। আর নপুংসকের বিষয়েও ঐ রূপ ফল দৃষ্ট হইতেছে কারণ সে জল হইতে উত্থান করত পাপের ক্ষমা প্রাপ্ত হওয়াতে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আপনাকে নির্দ্দোষী বোধ করিয়া আনন্দ পুর্ব্বক স্বদেশে প্রত্যাগমন করিল॥

 কেহ২ অনুমান করেন যে অবগাহনের অগ্রে ধর্ম্ম পরায়ণ হওয়া উচিৎ কিন্তু ধর্মপরায়ণ হইবার জন্য ত্রাণকর্ত্তাও প্রেরিতগণ প্রথমতঃ অবগহিত হইতে আমাদিগকে আদেশ করেন। অপর পিতর কহেন যে পাপমোচনের জন্য অবগাহিত হও তাহাতে ধর্ম্মাত্মার কৃপা প্রাপ্ত হইবা। ফলতঃ ধর্মাত্মার কৃপা প্রাপ্তি ও ধর্ম্মপরায়ণ হওয়া এ উভয়েরই একার্থ; অবগাহনের অগ্নে বিশ্বাস ও অনুতাপের উপস্থিততা আবশ্যক তদনন্তর পাপ মোচন ও ধর্ম্মাত্মার কৃপা তাহাদের অনুবর্তি হয়। ইহাতে প্রত্যেক সরল মন ব্যক্তির অবশ্য স্বীকার করা উচিৎ যে আমাদিগের ত্রাণকর্ত্তার উক্তির সহিত উক্ত কথা সর্বতোভাবে ঐক্য হইতেছে কেননা প্রভু কহিয়াছেন যে জলও পবিত্রাত্মা দ্বারা মনুষ্য পুনর্জ্জাত না হইলে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না। জলে অবগাহন হইবার অগ্রে যদি পবিত্রাত্মার কৃপা অঙ্গীকার করা যাইত তবে পবিত্রাত্মা ও জলদ্বারা পুনর্জ্জাত হওনের কথা আমাদিগের ত্রাণকর্ত্তা অবশ্য বলিতেন কিন্তু তাহা না বলিয়া কহিয়াছেন যে জল ও পবিত্রাত্মার দ্বারা তোমরা পুনর্জ্জাত হও। অপর ধর্ম্ম পুস্তকের এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে পরমেশ্বর যে বিষয় একত্র করিয়াছেন তাহা যেন কোন মনুষ্য পৃথক না করে। অতএব পবিত্রাত্মা কর্ত্তৃক প্রথমতঃ পুনর্জ্জাত তদনন্তর জলসংস্কার বা ধর্ম্ম পরায়ণ হইয়া পরে অবগাহন হওয়া এ উভয় কথাতেই ঈশ্বরের ঐ বিধিকে অবশ্য বিভিন্ন করা হইতেছে।

 অগ্নে যেমত কহা গিয়াছে প্রেরিতদের দ্বিতীয় অধ্যায়ে পিতরও সেই রূপ কহিয়াছেন, যথা; অনুতাপ করত পাপমোচনের নিমিত্ত অবগাহিত হও তবে পবিত্রাত্মার কৃপা প্রাপ্ত হইবা। এ কথার অর্থ এই যে প্রথমে জল দ্বারা পুনর্জ্জাত হও তবে তো মরা পবিত্রাত্মার দ্বারা পুনর্জ্জাত হইবা। পাউল যদ্যপিও প্রভুকে প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়াছিলেন তথাচ যে পর্য্যন্ত তিনি হানানীয় কর্ত্তৃক অবগাহন দ্বারা স্বীয় পাপ ধৌত না করিয়াছিলেন সে পর্য্যন্ত পবিত্রাত্মার কৃপা কি ধর্ম্ম স্বভাব প্রাপ্ত হয়েন নাই। অবগাহনের অগ্রে যে পবিত্রাত্মার কৃপা প্রদত্ত হইয়াছিল এ বিষয়ে কেবল একটিমাত্র প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে অর্থাৎ যৎকালে কর্ণলীয়স্ ও তাহার বন্ধুগণ একত্রে পতর কর্ত্তৃক প্রচারিত সুসমাচার শ্রবণ করিতেছিল তৎকালে তাহাদের ঐ রূপ ঘটিয়াছিল।

 ভিন্ন দেশীয় লোকেরা ইহুদিদের সহিত সুসমাচার ফলের সমানাংশী কি না কেবল এই বিষয়ে পিতরের সন্দেহ ভঞ্জনার্থে অবগাহনের পূর্ব্বে পরিত্রাত্মার কৃপা ঐ রূপে তাহাদিগকে প্রদত্ত হইয়া ছিল। বিশেষতঃ কর্ণিলীয়স্ ও তাহার বন্ধুগণ ভিন্ন দেশীয় হইবাতে ঈশ্বরের শক্তি তাহাদের প্রতি প্রকাশ্যমাণ না দেখিলে পিতর প্রথমতঃ তাহাদিগকে অবগাহিত করিতে স্বীকার করেন নাই যে যেতুক তাঁহার এরূপ বিশ্বাস ছিল যে ভিন্ন দেশীয়েরা তাবতেই দেব পূজক ও অতি দুষ্ট এবং মহা পাপিষ্ঠ এজন্য ঈশ্বর প্রিয় ঈহুদি জাতিদের সহিত একত্রে সুসমাচারের ফলভোগী হইবার তাহারা যোগ্য নহে; আর তিনি এমত কখন মনে করেন নাই যে ভিন্নদেশীয়েরা ধর্ম্মাত্মার কৃপা পাইয়া ইব্রাহিম ও ইশ‍ুফ্ এবং জাকুর্ ও ইহুদীয় ভবিষ্যদ্বক্তাগণদের সহিত স্বর্গে একত্রে অবস্থিত করিতে সক্ষম হইবে। অতএব তিনি তাহাদের প্রতি পবিত্রাত্মার ঐ রূপ অধিষ্ঠান দেখিয়। আশ্চর্য্য বোধ করত কহিবেন এই লোকেরা অবশ্যই অবগাহিত হইবে ও তাহাদের প্রতি জলসংস্কার কেহ নিষেধ করিতে পারিবে না। পরে তিনি তাহাদিগকে অবগাহিত হুইতে আদেশ করিলেন। অবগাহনের অগ‍্রে ধর্ম্মাত্মার কৃপা প্রাপ্ত হওয়া সাধারণ নিয়মের বহির্ভুত হইলে ও উক্ত প্রয়োজন হেতুক তাহা প্রদত্ত হইয়া ছিল। ঈশ্বরের উচিৎ বোধ হইলে তিনি সাধারণ নিয়মের বিরুদ্ধে আশীর্ব্বাদ করিতে পারেন কিন্তু এ বিষয়ে মনুষ্যের কোন অধিকার নাই মনুষ্যকে অবশ্য ঈশ্বর স্থাপিত নিয়মাধীন হইতে হইবে নতুবা সে কখন অঙ্গীকৃত আশীর্ব্বাদের অংশী হইতে পারিবেনা। ইলাইসা ভবিষ্যদ্বক্তা ঐ নিয়মানুসারে ন্যামান‍্কে যে আদেশ করিয়া ছিলেন তাহা ঐ ব্যক্তি পালন করাতে সে আপন কুণ্ঠরোগ হইতে মুক্ত হইয়াছিল।

 ঈশ্বরের ইচ্ছা হইলে তিনি অন্য মতে ঐ রোগ সুস্থ করিতে পারিতেন কিন্তু যে পর্য্যন্ত ন্যামান্ ঐ নিয়মানুসারে কার্য্য না করিয়াছিল সে পর্য্যন্ত ঐ আশীর্ব্বাদের অংশি হইতে পারে নাই। ঐ মত আমরা যদি সুসমাচারের বিধি পালন করি তবে অবশ্য তাহার আশীর্বাদের অংশি হইব নতুবা তজ্জন্য ঈশ্বরকে উত্তেজনা করণে আমাদিগের কোন অধিকার নাই। প্রভুর আজ্ঞানুসারে না চলিয়া কেবল মুখে তাঁহাকে প্রভু বলা মুঢ়তাপে ক্ষায়ও দোষকর। অতএব ইহাতে প্রত্যক্ষ হইতেছে যে সুসমাচারের ফলাধিকারি হইবার নিমিত্ত আন্তরিক বিশ্বাষ ও অনুতাপের যদ্রূপ অপেক্ষা করে বাহ্যিক বিধির প্রতি মনোযোগেরও তদ্রূপ আবশ্যক।

 জলে অবগাহিত হওন সুসমাচারের এক বিশেষ বিধি এবং এই জন্য অতি প্রাচীন কালে ঈশ্বরের ভক্তগণেরা অবগাহনের প্রতি বিশেষ মনোযোগি হুইয়াছিলেন। আর ঐ কার্য্যদ্বারা যদি বিশেষ আশীর্ব্বদ প্রাপ্ত হওয়া না যাইত তবে তাঁহারা তাহা পালন করিতে অবশ্য তাচ্ছল্য করিতেন। কোন২ ব্যক্তি অনুমান্ করেন যে সুসমাচারের প্রচুর ফল প্রাপ্ত হইবার নিমিত্ত কেবল বিশ্বাস ও অনুতাপ এবং আরাধনার আবশ্যক করে কিন্তু একথা যদি যথার্থ হইত তবে অবগাহন বিধিকে নিস্ফল ও বৃথা জানিয়া কেহ তাহা পালন করিত না। এমতে কেবল বিশ্বাস ও অনুতাপ এবং আরাধনা দ্বারা ন্যামান্ যদি উক্ত ক্লেশ হইতে মুক্ত হইতে পারিত তবে যর্দন নদীতে তাহার সপ্তবার স্নান করাতে কোন কার্য্য দর্শিত না। আর দেখ নোছ ও তাঁহার পরিবারেরা যদ্যপি কেবল বিশ্বাস ও অনুতাপ এবং আরাধনা দ্বারা আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইতে পারিত তবে কেন তাহারা বাহ্যিক নিয়ম পালনে অর্থাৎ আপনাদের রক্ষা নিমিত্ত জাহাজ নির্ম্মাণ করিতে উদ্যত হইয়াছিল? তাহারা কি উন্মত্ত হইয়া ঐ কার্য্য করিয়াছিল? অধিকন্ত ইশ্রএল দেশ বাসিরা যদি প্রার্থনা ও অনুতাপ এবং বিশ্বাস দ্বারা পাপের ক্ষমা প্রাপ্ত হইতে পারিত তবে ঐ অভিপ্রায়ে কেন বাহ্যিক কর্ম্ম অর্থাৎ বলি দানাদি করিত? তাহারাও কি উন্মত্ত হইয়াছিল? আর দেখ সুসমাচার কালে পেণ্টিকষ্ট পর্ব্ব দিবসে একেবারে তিন সহস্র লোক এক দিবসে অবগাহিত হইয়াছিল। যদি তাহারা প্রার্থনা ও বিশ্বাস ও অনুতাপের দ্বারা ঐ তাবৎ আশীর্বাদ সিদ্ধ করিতে পারিত তবে কেন অবগাহনের ক্লেশ তাহারা স্বীকার করিয়াছিল? তাহারাও কি সকলে অজ্ঞানও মূর্খ ছিল? যদ্যপি সুসমাচারের আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হওন জন্য কেবল আন্তরিক কর্ম্ম ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের আবশ্যকতা না হইত তবে নপংসক গাড়ি হইতে নামিয়া ফিলিপের সহিত একত্রে জলে যাইত না। অবগাহন একটি বাহিক চিহ্ন মাত্র ও তাহা আন্তরিক বিশ্বাস ও অনুতাপের অনু বর্ত্তি হইয়া থাকে ইহা যদি হানানীয় নিশ্চয়রূপে জানিতেন তবে সাউল যেন সুসমাচারের কল ভোগী হয় এই অভিপ্রায়ে তিনি তাহাকে অবগাহিত হইয়া আপনার পাপ সকল ধৌত করিতে কদাচ আদেশ করিতেন না। আর দেখ প্রেরিতের ১৯ অধ্যায়ে যে দ্বাদশ ব্যক্তির উল্লেখ আছে তাহারা যদ্যপি আন্তরিক কর্ম্ম প্রভাবে পরিত্রান প্রাপ্ত হইতে পারিত তবে পাউল তাহাদিগকে অবগাহিত করাইতেননা। অপর সুসমাচারের ফল গ্রহণের যদ্যপি অবগাহন সম্পূর্ণ রূপে সার অংশ না হইত তবে পাউল ইস্তিফনের পরিজন ও ক‍্রিম্প এবং গেও প্রভিতিকে অবগাহিত করিতেন না। আর যাহাদিগকে তিনি শিক্ষা দিয়া নির্ম্মলান্তকরণ করত স্থির করিয়াছিলেন তাহাদিগকে জল দিতে অর্থাত অবগাহিত করাইতে আপ্‌লকে অনুমতি করিতেন না। আর পিতর ও এমত কখন কহিতেন না যে নোহ ও তাহার পরিবারের জল দ্বারা রক্ষা হওয়াতে তাহা অবগাহনের নিদর্শন স্বরূপ হইয়াছে অর্থাত অবগাহন দ্বারা জীবের পরিত্রাণ হয়। যদি অবগাহন কেবল বাহ্যিক চিহ্ণ মাত্র হইত তবে তিনি উক্ত মত কদাচ কহিতেন না। আর খ্রীষ্টও এমত কহিতেন না যে জল ও পবিত্রাত্মাতে পূনর্জ্জাত না হইলে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা যাইতে পারেনা। বিশ্বাস ও অনুতাপের সহিত অবগাহনের আবশ্যকতা বিষয়ের অনেক প্রমাণ দেওয়া গিয়াছে এবং আর ও ভুরি২ প্রমাণ দেওয়া যাইতে পারে কিন্তু আপাতত যে কএকটা উল্লেখ হইল তাহাতেই স্পষ্ট প্রকাশ হইতেছে যে অবগাহন ভিন্ন কেবল বিশ্বাস ও অনুতাপের দ্বারা জীবের পরিত্রাণ হইতে পারে না॥

 এইক্ষনে কিরূপেতে অবগাহন বিধি প্রথমে নির্ব্বাহ হইয়াছিল তদ্বিষয়ে আমরা কিঞ্চিৎ কাল বিবেচনা করি। ইহা প্রমাণ সিদ্ধ যে অবগাহন বিধি কেবল এক নিয়মে নির্ব্বাহ হইয়া পুেরিতদিগকে তন্মত শিক্ষা দেওয়া গিয়াছিল এবং তাহারা তদনুশারে যথার্থ রূপে কার্য্য করিয়াছিল। এই হেতুক উক্ত বিষয়ের যথার্থ বোধ প্রাপ্ত অভিপ্রায়ে অৱগাহন বিধি যে অবস্থাতে অর্থাৎ কি পুকারে নির্ব্বাহ হইয়া ছিল তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করা আবশ্যক॥ কথিত আছে যে ইনন্ নগরে অনেক জল থাকা প্রযুক্তই যোহন তথায় লোক দিগকে অবগাহিত করাইতেন। এস্থলে বক্তব্য যদি মস্তকে জল ছিটান বিধি হইত তবে তিনি তথায় যাইতেননা যেহেতুক অত্যল্পজলেই শমস্ত য়িছদিয় দেশ ছিটান হইতে পারিত এবং সেই যৎকিঞ্চিৎ জল ঐ নগর পয্যন্ত ভ্রমন নাকরিয়া তিনি তথায় অনায়াসেই প্রাপ্ত হইতে পারিতেন। যোহন্ যর্দন নদিতে ও অবগাহিত করাইতেন। আর যে সময়ে আমাদিগের ত্রানকর্ত্তা তাঁহার দ্বারা অবগাহিত হইতে গিয়াছিলেন তখন প্রভু অবগাহন ক্রিয়া যথাথ বিধি অনুসারে নির্ব্বাহ হয় এই নিমিত্তে জলমধ্যে প্রবেস করত তন্মধ্য হইতে উঠিয়া আইলেন। ইহাতে স্পষ্ট বোধ হইতেছে যে জল মধ্যে প্রবেশ করাই ডুবিত হইবার বিধি। অরি নপুংসকের বিষয়েও দেখ সে ফিলিপের সঙ্গে জলে গিয়া পুনরায় উঠিয়া আইল। অতএব যদি কপালে যৎকিঞ্চিৎ জল ছিটান দ্বারা অবগাহন সমাধা হইত তবে ইহারা কদাপি ঐ বিধি পালনর্থে জলে মগ্ন হইতেণনা। পাউল সাধুদিগের পত্রে অবগাহন বিষয়ে স্পষ্ট রূপে প্রকাশ করেন যে সাধু ব্যক্তিরা অবগাহন দ্বারা খ্রীষ্ঠের সহিত কবর শায়ি হইয়াছেন ইহার তাৎপর্য্য এই যে সম্পুর্ণ রূপে জলে মগ্ন না হইলে ব্যাপ্তিস্মের দ্বারা কবর শায়ি হওয়া বা যাইতেল পারেনা কারন যেমত কোন বস্তুর একাংশ আচ্ছা দিত থাকিলে তাহাকে সম্পূর্ণ রূপে আচ্ছাদিত কহা যায়না তদ্রূপ মনুষ্যের সমস্ত শরীর জলে মগ্ন না হইলে অবগাহিত হওয়া কোন মতে হয়না। অধিকান্ত পাউলের এই কথা অবগাহন বিষয়ক ত্রানকর্ত্তার উক্তির সহিত সুন্দর রূপে ঐক্য হইতেছে কারন প্রভুও কহিয়াছেন যে সম্পুর্ন রূপে ডুবিত না হইলে ব্যাপ্তিস্বের ফল হয়না। কোন বস্তুতে রাক্ষিত হইয়া পুনর্ব্বার তাহা হইতে বহিস্কৃত হওনের নাম তন্মধ্যে জন্ম গ্রহণ। অতএব জলেতে জন্ম গ্রহন সব্দের অর্থ এই যে জলমধ্যে মগ্ন হইয়া তন্মধ্য হইতে পুনর্বার বহিস্কৃত হইতে হইবে। যে সময়ে সু সমাচার পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতা পূর্ব্বক প্রকাশ হইয়াছিল অর্থাৎ অতি প্রাচীনকালে প্রেরিতদিগের সময়ে ব্যাপ্তিস্মের এই ধারা ছিল যে সম্পূর্ণ রূপে জলে মগ্ন হইতে হইত। এতদ্বিষয়ে দ্বেষহীন ও বিবেচক ব্যক্তিদিগের মনের সন্দেহ ভঞ্জনার্থে অনেক প্রমান প্রয়োগ হইল অতএব এ বিষয়ে আর বিতর্ক করনে আমি এইক্ষনে ক্ষান্ত রহিলাম॥ আমরা হিব্রায়িদের প্রতি ৬ ছয় অধ্যয়ে অবগত হইতেছি যে সুসমাচারের বিধির মধ্যে হস্তার্পন করাও একটি গন নীয় ছিল। কিন্তু এইক্ষনে খ্রীষ্টায় মণ্ডলীতে ঐ বিধি এবং অবগাহন দ্বারা পাপ মোচন নিয়ম একবারে অব্যবহার্য্য হইয়াছে এজন্য তদ্বিষয়ে আমরা কিঞ্চিং কহিতেছি এবং ভরসা করি তাহাতে সাধারনের উপকার জন্মিবে। খ্রীষ্ট আপন হস্ত দ্বারা স্পর্শ করিয়া অনেক পীড়িত ব্যক্তিদিগকে সুস্থ করিয়াছেন। এতদ্বিষয়ে অনেক প্রমান আছে। আর মার্ক লিখিত শেষ অধ্যায়ে তিনি প্ররিতদিগকে আদেশ করত কহেন যে বিশ্বাসি ব্যক্তিদিগের এই সকল লক্ষণ হইবে যে তাহারা পীড়িত ব্যক্তিদিগের উপরে হস্ত রাখিলে তাহারা সুস্থ হইবে, ইত্যাদি। হানানীয় সাউলের উপর হস্ত রাখিলে সে তৎদণ্ডে দৃষ্টি প্রাপ্ত হইল। আর মেলিটা উপদীপে পাউলের জাহাজ ভগ্ন হইলে তিনি তথাকার শাসন কর্ত্তা পব‍্লিআসের পিতার উপর হস্ত রাখিলে সে তৎক্ষণাৎ জ্বর হইতে সুস্ত হইল। এই সকল প্রমানের দ্বারা স্পষ্ট দেখা যাইতেছে যে হস্ত দ্বারা স্পর্শ করা বিধি ঈশ্বর কর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে ও তদ্দারা পারমার্থিক আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইতে পারা যায়।

 হস্তার্পণ দ্বারা কেবল রোগ শান্তি হইয়াছিল এমত নহে কিন্তু তদ্দারা লোক আরও গুরূতর আশী র্ব্বাদ প্রাপ্ত হইয়াছিল। ধর্ম্ম পুস্তক হইতে অবগত হইতেছি যে শ্যামারীয়া নগরের অনেক স্ত্রী পুরূষ কিলিপ্‌ কর্তৃক অবগাহিত হইয়া আনন্দার্ণবে মগ্ন হইয়াছিল কেননা তাহারা বিশ্বাস ও মনঃ পরিবর্ত্তন পূর্ব্বক ব্যাপ্তিস্মের দ্বারা পাপ মোচন প্রাপ্ত হইয়া পবিত্রাত্মার কৃপার অংশাধিকারি হওত তাঁহার রাজ্য দর্শন করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এস্থলে আমাদিগের ত্রাণ কর্ত্তার বচন স্মরণ করা উচিৎ কেন না তিনি কহেন মনুষ্যের পুনর্জ্জন্ম না হইলে তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে দর্শন করিতে পারেনা। এ নিমিত্ত শ্যামেরীয়া বাসিরা অবগাহন দ্বারা প্রথম জন্ম প্রাপ্ত প্রযুক্ত বিশ্বাস রূপ চক্ষুতে জগদীশ্বরের রাজ্যে নানা প্রকার ফল ও আশীর্ব্বাদ এবং মহিমা দৃষ্টি করণ ক্ষম হইয়াছিল কিন্তু তৎকালে তাহারা দ্বিতীয় জন্ম অর্থাৎ পবিত্রাত্মার কৃপা প্রাপ্ত হয় নাই এই হেতুক তাহারা সেই সমএ সুসমাচারের প্রচুর ফলের অংশি হইতেও ইশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারিয়াছিলনা। অপর যে সময়ে যেরূশেলামস্থ প্রেরিতগন ফিলিপের শ্যামেরিয়া নগরে কায্য সকল হইবার সম্বাদ শ্রবণ করিয়া তথাকার লোকদের উপর হস্তার্পণ করনার্থে পিতর এবং যোহনকে পাঠাইলে তাহারা তথায় আসিয়া যে সকল কোলদের উপর হস্তার্পণ করিল তাহারা সকলেই পবিত্রাত্মার কৃপা প্রাপ্ত হইল। ইহাতে শিমীয়োন নামক মায়াবি তাহা দেখিয়া ঐ ক্ষমতা প্রাপ্ত হইবার নিমিত্ত প্রেরিতদিগকে বিপুল অর্থ দিতে স্বীকার করিয়াছিল। এই বিবরণ দ্বারা স্পষ্ট দেখা যাইতেছে যে শ্যামেরিয়া বাসিরা হস্তার্পণ দ্বারা পবিত্রাত্মাতে পুনর্জ্জন্ম গ্রহন করিয়া ঈশ্বরের রাজ্যের ও সুসমাচারের ফল ভোগি হুইয়াছিল। এই প্রকার প্রেরিতের ১৯ অধ্যায়ে আরও এই এক প্রমাণ লিখিত আছে যে ইফিসিও নগরে পাউল এক সময়ে দ্বাদশ ভ্রাতাদের সাক্ষাৎ পাইয়া তাহাদের উপর হস্ত রাক্ষাতে তাহারা তৎক্ষণাৎ পবিত্রাত্মা প্রাপ্ত হইল। পূর্ব্বে তাহারা অবগাহনের দ্বারা কেবল ঈশ্বরের রাজ্য দর্শন করিয়াছিল মাত্র কিন্তু এইক্ষণে তাহাতে পারমার্থিক জন্ম প্রাপ্ত হইয়াছিল॥

 প্রেরিতদিগের সময়ে সুসমাচারের এই বিধি ছিল যে লোকেরা মনঃ পরিবর্ত্তন করিয়া য়িশু খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাস করত অবগাহিত হইলে হস্তার্পণ দ্বারা পবিত্রাত্মা প্রাপ্ত হইত। এই বিধি যথার্থরূপে নির্ব্বাহ করিলে দৈব ক্ষমতা ও পারমার্থিক দান ও ফল এবং আশীর্ব্বাদের অধিকারি হইতে পারা যায় কিন্তু ঐ নিয়মানুসারে কার্য্য না করিলে সে ফলের৩ অবশ্য হানি হইতে পারে। খ্রীষ্ট মার্ক লিখিত সুসমাচারের শেষ অধ্যায়ে আপন শিষ্যদিগকে পারমার্থিক দান বিষয়ে উক্ত মত কথা কহিয়াছেন। অপর পাউল করিন‍্থিয়নের দশ অধ্যায়ে সুসমাচারের সম্পূর্ণতা ও নানা প্রকার পারমার্থিক দান বিষয়ে প্রচুর রূপে বর্ণন করত তদ্বিষয়িক নয়টা দৃষ্টান্ত দেখাইয়া কহিয়াছেন যে ঐ সকল ব্যাপার পবিত্রাত্মার কৃপা জন্যই হইয়াছিল। প্রেরিতের দুই অধ্যায়ে লিখিত আছে যে ঈশ্বর যাহাদিগকে আহ্বান করেন তাহারা সকলেই পবিত্রাত্মা পাপ্ত হয়। ঐ দানের স্বভাব এবং ফল অপরিবর্ত্তনিয় এবং তাহা অভেদ রূপে সংযোগ হইয়াছে। আর ঐ সকল অশীর্ব্বাদ ভোগ করা যুক্তি সিদ্ধ ও সঙ্গত এবং ধর্ম্ম পুস্তকানুযায়ি। নোহ যেমন ঈশ্বরাদেশানুসারে জাহজ নির্ম্মণ করিয়া জল প্লাবন হইতে উদ্ধার হইয়াছিল ও যোশুয়া যেমন জেরিকো নগরে কএক বার ভ্রমণ করিয়া তাহার চতুর্দ্দিগন্থ প্রাচীর ভগ্ন করত তথাকার নিবাসিদিগকে বন্দি করিয়াছিলেন ও ইশ্রায়েল বাসিরা যেমন ঐ বিধি অনুসারে বলিদান উৎসর্গ করিয়া পাপ ক্ষমা প্রাপ্ত হুইয়াছিল ও ন্যামান্ যেমন ইলাইসার আদেশানুসরে যর্দন নদীতে সপ্তবার ধৌত করিয়া পুনঃ সুস্থ শরীর প্রাপ্ত হইয়াছিল এবং অন্ধব্যক্তি যেমন শীলহ পুষ্করিনীতে ধৌত হইয়া দৃষ্টি প্রাপ্ত হইয়া ছিল সেই মত মনুষ্যেরা দ্বেষ স্ব স্বমতের অভিমান এবং পরম্পরায় বাক্য পরিত্যাগ করিয়া য়িশু খ্রীষ্টের বিধি অনুসারে কায্য করিলেই ধর্ম্মাত্মার দানে ও প্রেরিতদিগের সময়ের সুসমাচারের সমস্ত আশীর্ব্বদ প্রাপ্ত হওনে তাহাদিগকে কিছুতেই প্রতিরোধ করিতে পারেনা। পরমেশ্বরের সমীপে আমাদিগের নিস্তারার্থে ধর্ম্মগুণ ধারণ করিতে হয় এবং তজ্জন্য প্রভু য়িশু খ্রীষ্ট প্রতি বিশ্বাস করিয়া পবিত্রাত্মার কৃপা উপার্জ্জন করত সমস্ত পাপ হইতে মনঃ পরিবর্ত্তন পূর্ব্বক একবারে তাহা পরিত্যাগ করিয়া তাহা মোচনার্থে জলে অবগাহিত হইয়া হস্তাপণ বিধি গ্রহণ করা আবশ্যক। অবগাহন ও হস্তার্পণ সম্পর্কে কিঞ্চিং বিশেষ বক্তব্য আছে এবং তাহা এইক্ষণে উল্লেখ করিতেছি। যথা; যদ্যপি ঈশ্বর কর্ত্তৃক কোন ব্যক্তি প্রেরিত নাহয় তবে তাহার দ্বারা অবগাহিত হওনে ও হস্তার্পণ বিধি গ্রহণ করণে কোন ফল দর্শিবেনা। প্রেরিতগণ আর ৭০ ব্যক্তি সুসমাচারের বিধি নির্ব্বাহার্থে য়িশু খ্রীষ্ট্রের দ্বারা নিযুক্ত হইয়াছিল ও তাহাদিগের দ্বারা স্বর্গীয় দান প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল। এই হেতুক খ্রীষ্ট প্রেরিতগণকে কহেন যাহাদিগের পাপ তোমরা ক্ষমা করিবা তাহাদেরই ক্ষমা হইবে ও যাহাদের পাপ তোমরা বদ্ধ করিবা তাহারাই বন্ধ থাকিবে। অর্থাৎ যে কোন ব্যক্তিরা নম্রতা ও সরলতা পূর্ব্বক প্রেরিত দিগের নিকট অবগাহিত ও হস্তার্পণ বিধি গ্রহণ করিবে তাহারা য়িশু খ্রীষ্টের বলিদানীয় রক্ত দ্বারা আপনাদের পাপ ক্ষমা প্রাপ্ত হইয়া হস্তার্পণ দ্বারা পবিত্রাত্মা পাইবে; কিন্তু যাহারা প্রেরিত দিগের দ্বারা ঐ সকল নিয়ম গ্রহণ করিতে অস্বীকার হইবে তাহাদিগের পাপ তাহাদিগের উপর আবাহ মান থাকিবে। এই অভিপ্রায়ে পাউল কহেন আমরা জীবনের নিকট জীবন ও মৃত্তুর নিকট মৃত্যু অর্থাৎ যাহারা সুসমাচার গ্রহণ করে তাহাদিগের প্রতি তিনি জীবনের সমাচার দাতা হন যে হেতুক সুসমাচারের বিধি নির্ব্বাহ করণার্থে তিনি ক্ষমত প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। সুতরাং ঐ সুসমাচার গ্রহনা করিতে যাহারা অসন্মত হয় তাহাদের নিকট তিনি মৃত্যুর সম্বাদ দাতা হন। প্রেরিতরাই কেবল এই কর্ম্মের ভার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন এমত নহে কিন্তু তাহাদিগের দ্বারা অন্যেরাও ঐ কর্ম্মে নিযুক্ত হইয়া ছিল। অতএব যে কোন মনুষ্যেরা সুসমাচারের বিধি নির্বাহ করণার্থে ক্ষমতা ধারণ করে তাহারা প্রেরিতদিগের তুল্য জীবনের ও মৃত্যুর সমাচার দাতা হয়। গ্রহণ করিলে জীবন ও অগ্রাহ্য করিলে মৃত্যু লাভ হয়। অতএব অবগাহিত করণ শক্তি ও হস্তাপণের ক্ষমতা প্রাপ্ত কোন উপযুক্ত ব্যক্তি উপস্থিত না হইলে তাহার দ্বারা অবগাহন ও হস্তার্পণ বিধি গ্রহণ করিবার আবশ্যকতা নাই যে হেতুক যথা বিধি অনুসারে কার্য্য না করিলে আশির্ব্বাদের অপেক্ষা করা বৃথা॥

 ইহা প্রতক্ষ্য দেখা যাইতেছে যে সুসমাচারের বিধি নির্ব্বাহ করণের ক্ষমতা বহু কাল পর্যন্ত লুপ্ত হইয়াছে, কারণ মুসার ন্যায় ঈশ্বরের বিশেষ আদেশ ব্যতিরেক কিম্বা যোহন অবগাহন কারকের মত স্বর্গ দ্যুত দ্বারা উপদেশ না পাইলে অথবা বারনাবসৃ ও পাউল সদৃশ পবিত্রাত্মার কর্তৃক নিযুক্ত না হইলে কিম্বা ভবিষ্যৎ বলিবার শক্তি না পাইলে ঐ ক্ষমতা কদাচ পাওয়া যাইতে পারেনা॥

 মনুষ্যরা বহু কাল পর্যন্ত বিশেষ দৈবাদেশ অস্বীকার করাতে সুতরাং তাহারা ঐ আদেশ প্রাপ্ত হয় নাই এবং তাহাদিগকে সুসমাচারের বিধি সকল জ্ঞাপন করণ জন্য কেহ প্রেরিত হয় নাই। পরমেশ্বর কোন বিশেষ মনুষ্যের নিকট আপনাকে প্রকাশ না করিয়া কিম্বা উপস্থিত কায্য তাহাকে জ্ঞাত না করিয়া তন্নির্ব্বাহার্থে তাহাকে কখন পুরণ করেন না। প্রেরিতগন দ্বারা স্থাপিত মণ্ডলি ক্রমে২ পতিত হইয়া ভ্রম ময় অরণ্যে পর্যটন করত একে বারে পূর্ব্বক্ত শক্তি ও যাজকত্ব পদ হারাইয়া ঈশ্বরের বিধি হইতে প্রস্থান করিয়াছে এবং পারমার্থিক দানে বঞ্চিৎ হইয়া আজ্ঞা লঙন করত সুসমাচারের বিধি সকল পরিবর্ত্তন করিয়া অর্থাৎ অবগাহনের বিনিয়মে ছিটান বিধি সংস্থপন করাতে হস্তার্পণ বিধি একবারে পরিত্যাগ পূর্ব্বক ভবিষ্যৎবানি তাচ্ছল্য করত উপস্থিত লক্ষনে অবিশ্বাস করিয়াছে। এই হেতুক ভিন্নদেশিয়েরা সুসমাচারের প্রচুর ফল ভোগ হইতে উচ্ছেদন হইয়াছে। পাউল ও পূর্ব্বে তাহাদিগকে ঐ মত কহিয়াছিলেন, যথা; তোমরা ঈশ্বরাধীন হইয়া সচ্চরিত্র হইলে তোমাদের প্রতি তাঁহার দয়া প্রকাশ হইবে নতুবা তোমরা ও ঐ রূপ উচ্ছিন্ন হইবা॥

 যোহন‍্মণ্ডলীরপতিতাবস্থা হইয়াছেও ভিন্নদেশী য়েরা সাধুদিগের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে পরাজিত করিতেছে দেখিয়া সুসমাচার পুনর্দ্দত্ত বিষয়ে এই কহেন, যথা; আকাশ মধ্যে উড‍্ডীয়মান এবং দূতকে দেখিলাম সে পৃথিবীস্থ লোকদের প্রতি সুসমাচার প্রচার করিবে। অতএব এই বচন দ্বারা প্রত্যক্ষ হইতেছে যে আমাদিগের ত্রাণকর্ত্তার পুনরা গমনের পুর্বে এই ভবিষ্যৎ বানী পূর্ণ্ণ হইবে॥

 এই ক্ষুদ্র পুস্তক যাহার হস্তে পতিত হইবে সে প্রভুর আগমন দিবসে কোন প্রকার মিথ্যা বাহানা না করিতে পারে এ জন্য আমি পরমেশ্বর হইতে আদেশ প্রাপ্ত হইয়া এই সিক্ষা দিতেছি যে মনুষ্যের নিকটে ঐ দ্যুত প্রেরিত হইয়া যাজকত্ব পদ ও স্বর্গদ্বারের চাবি এবং অনন্ত সুসমাচারের প্রচুরতা যাহা বহু কাল পর্যন্ত হারান হইয়াছিল তাহা এই ক্ষণে মনুষ্যদের নিকট প্রকাশ করিতে আদেশ প্রাপ্ত হইয়াছেন এবং কহিয়াছেন “দেখ বর আসিতেছে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহিরে যাও অতএব সুবুদ্ধি কন্যাগণকে আহ্বান করত এই রূপে কহ যে তোমরা নিদ্রাবস্থা হইতে জাগত হইয়া পাপ মোচনার্থে অবগাহিত হইলে ধর্ম্মাত্মা রূপ দান প্রাপ্ত হইবা ও তদ্দারা আপনাদের প্রদিপকে প্রজলিত করিয়া বরের সন্মুখে দাঁড়াইবার নিমিত্ত প্রস্তুত হইতে পারিবা কারণ মলাকি কহেন যে প্রভুর আগমন দিনে কে স্থির থাকিতে পারিবে ও তিনি দর্শণ দিলে কে দাড়াইতে সক্ষম হইবে কেননা তিনি ধাতু পরিষ্কার কারির অগ্নি ও রজকের সাবান্ স্বরূপ হন॥

 অতএব পরমেশ্বর এই সমাচার প্রেরণ করিতেছেন যে তোমরা পাপ ও মিথ্যা পরম্পরায় বাক্য এবং বেতন গ্রাহি যাজক দিগের অন্ধকার ময় ও নাশকারি অধীনতা পরিত্যাগ কর যেহেতুক তাহা দিগের প্রতি পরমেশ্বর কখন সন্তুষ্ট নহেন। আমি এইক্ষণে শাক্ষি দিয়া কহি যে ইব্রাহিমের ও আই জেকের এবং জাবুকের প্রভু পরমেশ্বর আমাকে তোমাদের নিকট এই কথা প্রচার করিতে প্রেরণ করিয়াছেন। হে প্রিয় লোকেরা তোমরা যেন বাবুলের পাপের অংশি না হও এবং সেই রূপ উৎপাত গ্রস্ত না হও এই নিমিত্ত তথা হইতে বহিগর্মন করহ॥ আমি য়িশু খ্রীষ্টের নামে কহিতেছি এবং পবিত্রাত্মা তাহাতে শাক্ষি আছেন যে পৃথিবীর মধ্যস্থ ধর্ম্ম সম্বন্ধীয় লোকের ঘৃণাই কর্ম্ম ও কাপট্য এবং দৃষ্টতা জন্য ও বিশেষতঃ যাহারা অর্থের নিমিত্ত ঐশ্বরিক শাস্ত্র ব্যবশায়ি হইয়া বেতন গ্রহণ করত শিক্ষা দেয় তাহাদিগের বিরুদ্ধে ঈশ্বর স্বর্গ হইতে ক্রোধ প্রকাশ করিয়াছেন অতএব হে লোক সকল যদ্যপি তোমরা ঈশ্বরের এই সুসমাচার পাইয়া তুরিত হইয়া পাপ মোচন না করহ তবে ঈশ্বর পুত্রের আগমন কালে তাঁহার তেজে তোমরা সকলে বিনষ্ট হইবে। একারণ তোমরা অবিলম্বে প্রস্ত‍ুত হও যে হেতুক উক্ত আগমন কাল অতি সন্নিকট হইয়া তোমাদের দ্বারে উপস্থিত হইতেছে। আমেন্॥


PRINTED BY N. ROBERTSON AND CO., AT THE COLUMBIAN PRESS,

NO. 65, COSSITOLLAH.