পাণ্ডব গীতা
পাণ্ডব গীতা।
শ্রীহট্ট,—রাজা গিরিশচন্দ্র হাই স্কুলের শিক্ষক
শ্রীশশিভূষণ পুরকায়স্থ
পদ্যানুবাদক।
শ্রীউপেন্দ্র কৃষ্ণ চক্রবর্ত্তী বি, এ,
প্রকাশক।
১৩১৭ সাল।
প্রিণ্টার:— শ্রীআশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়,
মেট্কাফ্ প্রেস,
৭৬ নং বলরাম দে ষ্ট্রীট,—কলিকাতা।
ভুমিকা
ফুল্লেন্দীবরকান্তিমিন্দুবদনং বর্হাবতংসং প্রিয়ং
শ্রীবৎসাঙ্কমুদারকৌস্তুভধরং পীতাম্বরং সুন্দরম্।
গোপীনাং নয়নোৎপলার্চ্চিতনুং গো-গোপ-সংঘাবৃতং
গোবিন্দং কলবেণুবাদনপরং দিব্যাঙ্গভূষং ভজে॥
গুরুশিষ্যকল্পনাক্রমে আত্মবিদ্যার উপদেশাত্মক কথা গীতানামে অভিহিত হইয়া থাকে। সাধারণতঃ গীত বলিলে প্রসিদ্ধ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে বুঝায়। ইহা ভিন্ন অন্যান্য গীতাও আছে; যথা—রাম গীতা, ব্যাসগীতা, ভগবতগীতা, গুরুগাতা, শিবগীতা প্রভৃতি। এই সকলের মূলভিত্তি কোথাও তন্ত্র, কোথাও পুরাণ। কিন্তু পরবর্তী সকল গীতাই যে ভগবদ্গীতার অনুকরণে রচিত হইয়াছে, এমন নহে।
ভগবদ্গীতায় কোনও সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু অন্যান্য প্রায় সকল গীতা গ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতার ভাব সম্পূর্ণ পরিস্ফুট।
অন্যান্য গীতা-রচনায় যে সমস্ত লক্ষণ দেখিতে পাওয়া যায়, আমাদের আলোচ্য পাণ্ডবগীতায় তাহার অনেক অভাব দৃষ্ট হয়। গীতাগ্রন্থে আদ্য কয়েকটী শ্লোকে গ্রন্থের বিষয়রচনার হেতু প্রভৃতির উল্লেখ থাকে; আর কোন না কোন কথা প্রসঙ্গে সেই গ্রন্থের অবতারণা হয়। আমাদের বর্ত্তমান আলোচ্য গ্রন্থ সেই শ্রেণীর নহে। ইহাতে কোথাও উদার সার্ব্বভৌমভাবে সরলপ্রাণে সেই প্রাণের প্রাণ জগৎপ্রাণের স্তুতি-গাথা গীত হইয়াছে, আবার কোথাও বা তাঁহাকে সেই সর্ব্বসুন্দর ব্রজসুন্দর সাজাইয়া ভক্ত সাশ্রুনয়নে প্রাণের অতৃপ্ত আবেগে আহ্বান করিতেছেন।
এই গ্রন্থ কোন গ্রন্থবিশেষের অন্তর্গত বলিরা বোধ হয় না। ইহাতে এমন অনেক শ্লোক আছে, যাহা আমরা অন্যান্য পুরাণাদিগ্রন্থে দেখিতে পাই। বিষ্ণুপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত ও মহাভারত হইতে কয়েকটী শ্লোক ইহাতে উদ্ধৃত হইয়াছে। ইহার কয়েকটী শ্লোক গীতার প্রতিধ্বনি মাত্র।
এই গ্রন্থের রচয়িতার বা সঙ্কলয়িতার কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। তবে ইচা অনুমিত হয় যে, ইহা বৈষ্ণবসম্প্রদায়ের জন্য কোন মহাপুরুষ সঙ্কলন করিয়া গিয়াছিলেন। বৈষ্ণবধর্ম্ম ভক্তিপ্রধান। একমাত্র বিষ্ণুর আরাধনাই কৈবল্যপ্রাপ্তির কারণ। সেই আরাধনা বা উপাসনা চারি ভাগে বিভক্ত—কীর্ত্তন, যজন, স্তবন ও নমস্কার।
প্রকৃতিভেদে এক এক প্রকার উপাসনা এক এক জনের অবলম্বনীয় হয় বটে, কিন্তু মানবপ্রকৃতিতে কালের শক্তিও অল্প আধিপত্য বিস্তার করে না। ক্ষীণায়ু, বিষয়াসক্ত মানবও যাহাতে ভক্তিরসাস্বাদনে বঞ্চিত না হয়, বৈষ্ণব মহাজনগণ তাহার সহজপন্থা নির্দ্ধারণ করিয়া গিয়াছেন। সেই পন্থা নাম-মাহাত্ম্য। নামমাহাত্ম্যের নামান্তর স্তুতি বা স্তবন। আলোচ্য পাণ্ডব-গীতায় ভগবানের মাহাত্ম্য কীর্ত্তন করা হইয়াছে এই হেতু পাণ্ডবগীতা বৈষ্ণব সমাজের অতি আদরের জিনিষ। এ দেশে এমন অনেক বৃদ্ধ আছেন যাঁহারা পাণ্ডবগীতা ও চাণক্য-শ্লোক আদ্যন্ত আবৃত্তি করিতে পারেন। সে দিন গিয়াছে, সে সুখস্বপ্ন ভাঙ্গিয়াছে, যে দিন পল্লীজননীর শ্যামল শম্পাকীর্ণ প্রান্তরোপান্তে সরলতা ও পবিত্রতার চির আবাস গৃহে গৃহে ধর্ম্মপ্রাণ শান্তিপিপাসু মহাত্মগণ সরলপ্রাণ শিশুদিগকে নীতি ও ধর্ম্মের ভাবে অনুপ্রাণিত করিতেন। আদি কবির ভাবমন্দাকিনীনিঃসৃত “মা নিষাদ”—শোক-গাথা আর গৃহের প্রাঙ্গণ মুখরিত করে না।
শতাধিক বর্ষের হস্তলিখিত পাণ্ডবগীতা চাণক্য-শ্লোক খুঁজিলে মিলিতে পারিবেক। প্রাচীন হস্তলিখিত গ্রন্থের সহিত মিলাইয়া পাণ্ডবগীতার এই অভিনব সংস্করণ সাধারণ্যে প্রচারিত হইল। এই শতাধিক বর্ষের প্রাচীন হস্তলিখিত গ্রন্থখানি বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের পাঠাগারে রক্ষণ জন্য প্রেরিত হইয়াছে।
ইতঃপূর্ব্বে ইহার যে দু’ একখানা মুদ্রাকর প্রমাদ-দুষ্ট সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহ অপাঠ্য বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। বর্ত্তমান সংস্করণে বিশুদ্ধ সংস্কৃত পাঠ গ্রহণ করা হইয়াছে। প্রতি সংস্কৃত শ্লোকের প্রাঞ্জল, মধুর প্রসাদগুণ বিশিষ্ট পদ্যানুবাদ সংযোজিত হইয়াছে। অনূদিত শ্লোকসমূহ স্বতন্ত্র ভাবে পড়িলে, কোন গ্রন্থবিশেষের অনুবাদ বলিয়া সহজে প্রতীতি হয় না।
ধর্ম্ম সম্বন্ধীয় পুস্তকে যেরূপ স্বাভাবিকতা এবং সরলতা দৃষ্ট হয়, এই পদ্যানুবাদে সেই সনাতন নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয় না।
সোদর-প্রতিম স্নেহভাজন শ্রীমান্ শশিভূষণ ধর্ম্মপরায়ণ ব্যক্তিগণের চির আদরের এই বৈষ্ণব-রসাত্মক পাণ্ডবগীতা সঙ্কলিত ও অনূদিত করিয়া, একটী মহৎ অভাব দূর করিলেন। এই ক্ষুদ্র-কলেবর গ্রন্থখানি পাঠ করিয়া, ধর্ম্মপিপাসু ভক্তগণ অপার বৈষ্ণবানন্দ লাভ করুন—ভগবৎসমীপে প্রার্থনা করি।
পাণ্ডব গীতা।
পাণ্ডব উবাচ।
প্রহ্লাদ-নারদ-পরাশর-পুণ্ডরীক-
ব্যাসাম্বরীশ-শুক-শৌনক-ভীষ্মকাদ্যাঃ।
রুক্মাঙ্গদার্জ্জুন-বশিষ্ঠ-বিভীষণাদ্যা
এতানহং পরমভাগবতান্নমামি॥ ১
প্রহ্লাদ, নারদ, শুক, বাস, পরাশর,
পুণ্ডরীক, অম্বরীশ শৌনক প্রবর,
রুক্মাঙ্গদ, অর্জ্জুন, ভীষ্মক, বিভীষণ,
বশিষ্ঠাদি প্রণমামি মহাভক্তগণ। ১
লোমহর্ষণ উবাচ।
ধর্ম্মো বিবৰ্দ্ধতি যুধিষ্ঠির-কীর্ত্তনেন
পাপং প্রণশ্যতি বৃকোদর-কীর্ত্তনেন।
শত্রুৰ্বিনশ্যতি ধনঞ্জয়-কীর্ত্তনেন
মাদ্রীসুতৌ কথয়তাং ন ভবন্তি রোগাঃ॥ ২
যুধিষ্ঠির নাম নিলে ধর্ম্মবৃদ্ধি হয়,
ভীমসেন উচ্চারণে পাপরাশি ক্ষয়,
ধনঞ্জয় নামে হয় শত্রু বিনাশন,
মাদ্রীপুত্রদ্বয় নামে ব্যাধির দমন। ২
ব্রহ্মোবাচ।
যে মানবা বিগতরাগ-পরাপরজ্ঞা
নারায়ণং সুরগুরুং সততং স্মরন্তি।
ধ্যানেন তে বিগতকিল্বিষবেদনাস্তে
মাতুঃ পয়োধররসং ন পুনঃ পিবন্তি॥ ৩
ইন্দ্রিয়েতে অনাসক্ত যেই নরগণ,
নারায়ণ করে যারা সতত স্মরণ,
কলুষ-বেদনা যায় শ্রীহরি ধেয়ানে
ফিরে নাহি আসে তারা মাতৃস্তন্যপানে[১]। ৩
ইন্দ্র উবাচ।
নারায়ণো নাম নরো নরাণাং
প্রসিদ্ধ-চৌরঃ কথিতঃ পৃথিব্যাম্।
অনেক জন্মার্জ্জিত পাপ-সঞ্চয়ং
হরত্যশেষং স্মৃতিমাত্র এব॥ ৪
নররূপ নারায়ণে করিলে স্মরণ,
বহু জন্মাৰ্জ্জিত পাপ করেন হরণ;
অতএব নারায়ণ জগৎ মাঝারে,
খ্যাত-নামা চোর বলি জ্ঞাত চরাচরে। ৪
যুধিষ্ঠির উবাচ।
মেঘশ্যামং পীত-কৌষেয়-বাসং
শ্রীবৎসাঙ্কং কৌস্তুভোদ্ভাসিতাঙ্গম্।
পুণ্যোপেতং পুণ্ডরীকায়তাক্ষং
বিষ্ণুং বন্দে সর্ব্বলোকৈকনাথম্॥ ৫
মেঘশ্যামতনু, পীত-কৌষেয়-বসন,
কৌস্তুভে উজ্জ্বল অঙ্গ, শ্রীবৎসলাঞ্ছন,
পুণ্যময়, পদ্মদল দীঘল নয়ন,
নমি সর্ব্বলোক-নাথ বিষ্ণুর চরণ। ৫
ভীমসেন উবাচ।
জলৌঘমগ্না সচরাচরা ধরা
বিশালকট্যাখিলবিশ্বমূর্ত্তিনা।
সমুদ্ধৃতা যেন বরাহুরূপিণা
স মে স্বয়ম্ভূর্ভগবান্ প্রসীদতু॥ ৬
ইচ্ছামাত্র ধরে যেই সব অবয়ব,
সুবিশাল কটি-দেশ ধরে যে মাধব,
স্থাবর জঙ্গম সহ প্রলয়ের নীরে—
উদ্ধার করিলা যিনি মগ্না ধরিত্রীরে,
বরাহ রূপেতে হরি স্বয়ম্ভূ ঈশ্বর,
প্রসন্ন হউন তিনি আমার উপর। ৬
অর্জ্জুন উবাচ।
অচিন্ত্যমব্যক্তমনন্তমব্যয়ং
বিভুং প্রভুং কারণভূতভাবনম্।
ত্রৈলোক্যনিস্তারবিভাবভাবিতং
হরিং প্রপন্নোহস্মি গতিং মহাত্মনাম॥ ৭
অচিন্তা, অব্যক্ত যিনি, অনন্ত, অব্যয়,
বিভু, প্রভু, ভূতগণ যাহে জন্ম লয়,
যেই দেব ত্রিলোকের নিস্তার কারণ
সাধুদের গতি, তাঁ’র নিলাম শরণ। ৭
নকুল উবাচ।
যদি গমনমধস্তাৎ কর্ম্মপাশামুবন্ধাৎ
যদিচ গতি-বিহীনে জায়তে পক্ষিকীটে।
কৃমিশতমপি গত্বা তদ্গতাভ্যন্তরাত্মা
মম ভবতু হৃদিস্থা কেশবে ভক্তিরেকা॥ ৮
আচরিত কর্ম্মফলে যদি কভু আমি
পক্ষিকীট-কুলে জন্মি হয়ে অধোগামী,
কিংবা শত কৃমিকুলে হয় জন্মলাভ,
তদ্গত অন্তরে যেন ভাবি পদ্মনাভ। ৮
সহদেব উবাচ।
তস্য যজ্ঞবরাহস্য বিষ্ণোরতুলতেজসঃ।
প্রণামং যে প্রকুর্ব্বন্তি তেষামপি নমোনমঃ॥ ৯
বরাহের রূপধারী তেজস্ব অপার
বিষ্ণুদেব ভক্তিভরে, যাহারা প্রণাম করে,
তা’দের চরণে আমি মমি বারবার। ৯
কুন্তাবাচ
স্বকর্ম্মফল-নির্দিষ্টাং যাং যাং যোনিং ব্রজাম্যহম্।
তস্যাং তস্যাং হৃষীকেশ ত্বয়ি ভক্তির্দৃঢ়াস্তু মে॥ ১০
কর্ম্মফলে জন্ম মোর হবে যে যোনিতে,
হৃষীকেশ, সেইকালে তোমারই করুণাবলে
অচলা ভকতি যেন থাকে হে তোমাতে। ১০
মাদ্র্যুবাচ।
কৃষ্ণে রতাঃ কৃষ্ণমনুস্মরন্তি
রাত্রৌ চ কৃষ্ণং পুনরুখিত যে।
তে ভিন্নদেহাঃ প্রবিশন্তি কৃষ্ণং
হবির্যথা মন্ত্রহুতুং হুতাশে॥ ১১
শ্রীকৃষ্ণেতে রত হয় যেই নরগণ,
দিবানিশি কৃষ্ণ ধ্যানে সতত মগন,
কৃষ্ণদেহে লীন হয় দেহত্যাগ কালে;
মন্ত্রহুত হবি যথা প্রবেশে অনলে। ১১
দ্রৌপদ্যুবাচ।
কীটেষু বৃক্ষেষু সরীসৃপেষু
রক্ষঃ-পিশাচেষ্বপি যত্র তত্র।
জাতস্য মে ভবতু কেশব তে প্রসাদাৎ
ত্বয্যেব ভক্তিরচলাহব্যভিচারিণীচ॥ ১২
কীট, বৃক্ষ, সরীস্বপ, রক্ষঃ, পিশাচেতে,
জনম হউক মোর যে যোনি হইতে,
তোমার প্রসাদে যেন, ওহে নীলাম্বর,
অচলা ভকতি মোর থাকে নিরস্তুর। ১২
সুভদ্রোবাচ।
একোহি কৃষ্ণে স্বকৃতপ্রণামী
দশাশ্বমেধং নহি যাতি তুল্যম্।
দশাশ্বমেধী পুনরেতি জন্ম
কৃষ্ণ-প্রণামী ন পুনর্ভবায়॥ ১৩
ভক্তিভরে কৃষ্ণে যেই করে নমস্কার
দশ অশ্বমেধ-কারী নহে তুল্য তার,
দশাশ্বমেধীও ভবে পুনঃ জন্ম পায়,
শ্রীকৃষ্ণ প্রণমে যেই না আসে ধরায়। ১৩
অভিমন্যুরুবাচ।
গোবিন্দ গোবিন্দ হরে মুরারে
গোবিন্দ গোবিন্দ মুকুন্দ কৃষ্ণ।
গোবিন্দ গোবিন্দ রথাঙ্গপাণে
গোবিন্দ গোবিন্দ মা মাং ত্যঙ্গেতি॥ ১৪
হে গোবিন্দ, হে গোবিদ, হে হরে মুরারে,
হে গোবিন্দ, হে গোবিন্দ, মুকুন্দ কংসারে,
হে গোবিন্দ, হে গোবিন্দ্র, দেব চক্রধর,
কভু না ত্যজিও মোরে, মাগি এই বর। ১৪
ধৃষ্টদ্যুম্ন উবাচ।
শ্রীরাম নারায়ণ বাসুদেব
গোবিন্দ বৈকুণ্ঠ মুকুন্দ কৃষ্ণ।
শ্রীকেশবানন্ত নৃসিংহ বিষ্ণো
মাং পাহি সংসারভুজঙ্গদষ্টম্॥ ১৫
হে রাম, হে নারায়ণ, বৈকুণ্ঠ মুকুন্দ,
হে কৃষ্ণ, হে বাসুদেব, কেশব, গোবিন্দ,
হে অনন্ত, হে নৃসিংহ বিষ্ণো, দামোদর,
সংসার-ভুজঙ্গ দংশে পরিত্রাণ কর। ১৫
সাত্যকিরুবাচ।
অপ্রমেয় হরে বিষ্ণে কৃষ্ণ দামোদরাচ্যুত।
গোবিন্দানন্ত সর্ব্বেশ বাসুদেৰ নমোহস্তু তে॥ ১৬
অপ্রমেয় হরে, বিষ্ণো, কৃষ্ণ, হে অচ্যুত,
হে গোবিন্দ, সর্ব্বেশ্বর, বাসুদেব, দামোদর,
ভক্তিভরে চরণেতে করি প্রণিপাত। ১৬
উদ্ভব উবাচ
বাসুদেবং পরিত্যজ্য যোহন্যদেবমুপাসতে।
তৃষিতো জাহ্নবীতীরে কূপং খনতি দুর্ম্মতিঃ॥ ১৭
বাসুদেব পরিত্যজে অন্তদেবে যেই ভজে
পেতে মুক্তিধন,
তৃষ্ণার্ত্ত হইয়ে করে থাকিয়ে জাহ্নবী-তীরে
সে কুপ খনন। ১৭
অদ্য মে সফলং জন্ম অদ্য মে সফলং কুলং।
অদ্য মে সফলো দেহো অদ্য মে সফল ক্রিয়া॥ ১৮
আজিকে দেখিনু তব চরণ কমল,
জন্ম, কুল, দেহ, ক্রিয়া, হইল সফল। ১৮
ধৌম্য উবাচ।
অপাং সমীপে শয়নাসনে গৃহে
দিবা চ রাত্রৌ চ পথাধি গচ্ছতা।
যদ্যস্তি কিঞ্চিৎ স্বকৃতং কৃতং ময়া
জনার্দ্দনস্তেন কৃতেন তুষ্যতু॥ ১৯
সলিল সমীপে, কিংবা, শয়নে, আসনে,
গৃহমধ্যে, পথমাঝে, কিংবা নিশিদিনে,
সুকৃতি কিঞ্চিৎ যদি নেহারি আপন
তাহে পরিতোষ লভ, ওহে জনার্দ্দন। ১৯
সঞ্জয় উবাচ।
আর্ত্ত বিষণ্ণাঃ শিথিলাশ্চ ভীতা
ঘোরেযুচ ব্যাধিযু বর্ত্তমানাঃ।
সংকীর্ত্ত্য নারায়ণ-শব্দ-মাত্রং
বিমুক্তদুঃখাঃ সুখিনো ভবন্তি॥ ২০
কাতর বিষণ্ণ-ভীত অলস যে জন,
ঘোর ব্যাধিগ্রস্ত হ’য়ে কাটায় জীবন,
নারায়ণ শব্দ মাত্র করি উচ্চারণ,
লভে সুখ, দুঃখ তার হয় বিমোচন। ২০
অক্রুর উবাচ।
অহং হি নারায়ণ দাসদাস-
দাসস্য দাসস্য চ দাস-দাসঃ।
অন্যেভ্য ঈশোজগতাং নরাণাং
তস্মাদহং ধন্যতরোহস্মি লোকে॥ ২১
আমি হই শ্রীহরির দাসেরই দাস,
তার দাসদাস তার দাস অনুদাস
অন্য নরগণ হতে তবুও প্রধান,
সাতিশয় ধন্য মনে করি অনুমান। ২১
বিদুর উবাচ।
বাসুদেবস্য যে ভক্তাঃ শান্তাস্তদ্গতমানসাঃ।
তেষাং দাসস্থ্য দাসোহহং ভবেয়ং জন্মজন্মনি॥ ২২
বাসুদেব-ভক্ত যারা তদ্গত-হৃদয়,
হেন ভক্ত যারা ভবে, এই মনে লয়,
তাহাদের দাস যেই ভুবন মাঝারে,
জন্মে জন্মে দাস হয়ে সেবি যেন তারে। ২২
ভীষ্ম উবাচ।
বিপরীতেষু কালেষু পরিক্ষীণেষু বন্ধুষু।
ত্রাহি মাং কৃপয়া কৃষ্ণ শরণাগতবৎসল॥ ২৩
বিপরীত কালে[২] কৃষ্ণ, হলে বন্ধুহীন,
আশ্রিতবৎসল, রক্ষা করিও সে দিন। ২৩
দ্রোণাচার্য্য উবাচ।
যে যে হতাশ্চক্রধরেণ দৈত্যা-
স্ত্রৈলোক্যনাথেন জনার্দ্দনেন।
তে তে গতা বিষ্ণুপুরীং নরেন্দ্রাঃ
ক্রোধোহপি দেবস্য বরেণ তুল্যঃ॥ ২৪
যেই যেই দৈত্যগণে বধে চক্রধারী
সেই সব রাজগণ যায় বিষ্ণুপুরী,
অতএব দেখ যদি ক্রোধ করে ঈশ,
মনেতে জানিও ইহা বরের সদৃশ। ২৪
কৃপাচার্য্য উবাচ।
মজ্জন্মনঃ ফলমিদং মধুকৈটভারে
মৎপ্রার্থনীয়-মদনুগ্রহ এষ এব।
ত্বদ্ভৃত্যভৃত্য-পরিচারক-ভৃত্যভৃত্য-
ভূত্যস্য ভূত্য ইতি মাং স্মর লোকনাথ॥ ২৫
মধুকৈটভারে হরি, মাগি এই বর,
ভৃত্যের যে ভৃত্য তব তার অনুচর,
তার ভৃত্য ভৃত্য অনুভৃত্য দাস বলে,—
গণিব সফল জন্ম, আমায় ভাবিলে। ২৫
অশ্বত্থামোবাচ।
গোবিন্দ কেশব জনার্দ্দন বাসুদেব
বিশ্বেশ বিশ্ব মধুসূদন বিশ্বরূপ।
শ্রীপদ্মনাভ পুরুষোত্তম পুষ্করাক্ষ
নারায়ণাচ্যুত নৃসিংহ নমো নমস্তে॥ ২৬
গোবিন্দ, কেশব, বাসুদেব, জনার্দ্দন,
বিশ্বপতি, বিশ্বরূপ, শ্রীমধুসূদন।
পদ্মনাভ পুষ্করাক্ষ, পুরুষ-প্রধান
দয়াময়, নারায়ণ, করুণা-নিদান,
হে বিশ্ব, হে অচ্যুত, হে মনুজকেশরী,
তোমার চরণে বই প্রণিপাত করি। ২৬
কর্ণ উবাচ।
নান্যদ্ বদামি ন শৃণোমি ন চিন্তয়ামি
নান্যং স্মরামি ন ভজামি ন চাশ্রয়ামি।
ভক্ত্যা ত্বদীয়-চরণাম্বুজমাদরেণ
শ্রীশ্রীনিবাস পুরুষোত্তম দেহি দাস্যম॥ ২৭
তুমি ভিন্ন অন্য নাম ওহে নারায়ণ,
না কহিব, না শুনিব, না নিব শরণ,
না চিন্তিব, না ভাবিব, ওহে দয়াময়,
চরণ-পঙ্কজে তব লইনু আশ্রয়;
ভক্তিভরে সমাদরে পুরুষ-প্রধান,
শ্রীনিবাস, কর মোরে দাসত্ব প্রদা। ২৭
ধৃতরাষ্ট্র উবাচ।
নমোনমঃ কারণ-কারণায়
নারায়ণায়ামিত-বিক্রমায়।
শ্রীশার্ঙ্গ-চক্রাব্জ-গদাধরায়
নমোহস্তু তস্মৈ পুরুষোত্তমায়॥ ২৮
অনুপম বলশালী দেব নারায়ণ
নিখিল ব্রহ্মাণ্ড স্থষ্টিকরণকারণ,
শঙ্খ চক্র গদা পদ্ধ করেন ধারণ,
প্রণিপাত করি আমি সেই জনার্দ্দন। ২৮
গান্ধার্য্যুবাচ।
ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব
ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব।
ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিণং ত্বমের
ত্বমেব সর্ব্বং মম দেবদেব॥ ২৯
তুমি বন্ধু, তুমি সখা, তুমি মাতাপিতা,
তুমি বিদ্যা, তুমি ধন, দেবের দেবতা। ২৯
দুর্য্যোধন উবাচ।
যজ্ঞেশাচ্যুত গোবিন্দ মাধবানন্ত কেশব।
কৃষ্ণ বিষ্ণো হৃষীকেশ বাসুদেব নমোহস্তু তে॥ ৩০
যজ্ঞেশ্বর, হে অচ্যুত, গোবিন্দ, মাধব,
কৃষ্ণ, বিষ্ণো, হৃষীকেশ, অনন্ত, কেশব,
দয়াময় বাসুদেব চরণে তোমার,
ভক্তিভরে করযোড়ে করি নমস্কার। ৩০
জয়দ্রথ উবাচ।
নমঃ কৃষ্ণায় দেবায় ব্রহ্মণেহনন্তমূর্ত্তয়ে।
যোগেশ্বরায় কৃষ্ণায় ত্বামহং শরণং গতঃ॥ ৩১
অনন্ত মূরতিধারী ব্রহ্ম সনাতন,
যোগেশ্বরে প্রণিপাত, লইনু শরণ। ৩১
বিকর্ণ উবাচ।
কৃষ্ণায় বাসুদেবায় দেবকীনন্দনায় চ।
নন্দগোপকুমারায় গোবিন্দায় নমোনমঃ॥ ৩২
ওহে কৃষ্ণ, বাসুদেব, দেবকীনন্দন,
নন্দসুত, হে গোবিন্দ, বন্দি হে চরণ। ৩২
সোমদত্ত উবাচ।
নমঃ পরম-কল্যাণ নমস্তে বিশ্বভাবন।
বাসুদেবায় শাস্ত্রীয় যদনাং পতয়ে নমঃ॥ ৩৩
পরম কল্যাণময়, করি, প্রণিপাত,
শান্ত মূর্ত্তি বাসুদেব, কৃষ্ণ, যদুনাথ। ৩৩
বিরাট উবাচ।
নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ॥ ৩৪
ব্রহ্মণ্যদেবের পদে প্রণিপাত করি,
যিনি হন জগতের অতি হিতকারী,
গো ব্রাহ্মণে করে যেই সতত রক্ষণ,
প্রণমামি বহুবার গোবিন্দ চরণ। ৩৪
শল্য উবাচ।
অতসীপুষ্পসংকাশং পীতবাসসমচ্যুতম।
যে নমস্যন্তি গোবিন্দং ন তেষাং বিদ্যতে ভয়ম্॥ ৩৫
অতসীকুসুমসম যাহার বরণ,
পীতবাস যে অচ্যুত করেন ধারণ,
এ হেন গোবিন্দে যারা প্রণিপাত করে
কোন ভয় নাহি থাকে ভুবন মাঝারে। ৩৫
বলভদ্র উবাচ।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালো ত্বমগতীনাং গতির্ভব।
সংসারার্ণব-মগ্নানাং প্রসীদ পুরুষোত্তম॥ ৩৬
কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপাসিন্ধু অগতির গতি,
কৃপাকর ভবাণবে মগ্নজন প্রতি। ৩৬
কৃষ্ণ কৃষ্ণ মধুসূদন বিষ্ণো, কৈটভান্তক মুকুন্দ মুরারে।
বাসুদেব ঘনসুন্দর দেব, ত্বং সদৈব কলুষঘাতন রক্ষ॥ ৩৭
কৃষ্ণ কৃষ্ণ ওহে বিষ্ণো শ্রীমধুসূদন,
মুকুন্দ মুরার হরে কৈটভ-দমন,
হে ঘন-সুন্দর দেব কলুষঘাতন,
বাসুদেব নিজ গুণে রক্ষ অনুক্ষণ। ৩৭
শ্রীকৃষ্ণ উবাচ।
কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি কৃষ্ণেতি যো মাং স্মরতি নিত্যশঃ।
জলং ভিত্ত্বা যথা পদ্মং নরকাদুদ্ধরাম্যহম্॥ ৩৮
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে যেই স্মরে অনিবার,
করে নীর বিদারণ
যথা পদ্ম আহরণ—
তেমনি নরক হ’তে করিব উদ্ধার। ৩৮
সত্যং ব্রবীমি মনুজাঃ, স্বয়মূর্দ্ধবাহু
র্যো মাং মুকুন্দ নরসিংহ জনার্দ্দনেতি।
জীবো জপত্যনুমুদিনং মরণে রণে বা
পাষাণ-কাষ্ঠ-সদৃশায় দদাম্যভীষ্টম্॥ ৩৯
সত্য বলি নরগণ উর্দ্ধবাহু হয়ে,
নরসিংহ জনার্দ্দন মুকুন্দ বলিয়ে
জপে যেই অনুদিন মরণে বা রণে
ফল দেই শিলাকাষ্ঠ সম[৩] সেই জনে। ৩৯
মহেশ্বর উবাচ।
সকৃন্নারায়ণেতৃক্ত্বা পুমান্ কল্পশতত্রয়ম্।
গঙ্গাদি-সর্ব্বতীর্থেষু স্নাতো ভবতি পুণ্যকৃৎ॥ ৪০
তিনশত কল্পকাল গঙ্গাদি তীর্থেতে
হয় যত পুণ্য লাভ অবগাহনেতে,
‘নারায়ণ’ নাম মাত্র করে উচ্চারণ
তাদৃশ পুণ্যের ভাগী হয় নরগণ। ৪০
পার্ব্বত্যুবাচ।
তত্রৈব গঙ্গা যমুনাচ তত্র
গোদাবরী তত্র সরস্বতী চ।
সর্ব্বাণি তীর্থানি বসন্তি তত্র
যত্রাচ্যুতোদারকথাপ্রসঙ্গঃ॥ ৪১
উদার কেশব কথা যথায় কীর্ত্তন
সমুদয় তীর্থ তথা করে আগমন।
গোদাবরী, সরস্বতী, জাহ্নবী, যমুনা
করে অবস্থান যথা কৃষ্ণ আলোচনা। ৪১
যম উবাচ।
নরকে পচ্যমানে তু যমেন পরিভাষিতম্।
কিং ত্বয়া নার্চ্চিতো দেবঃ কেশবঃ ক্লেশনাশনঃ॥ ৪২
ভোগে পাপী নরকেতে দেখে কালান্তক
কহে ‘কেন পূজ নাই সে দুঃখ-নাশক’? ৪২
নারদ উবাচ।
জন্মান্তরসহস্ৰেষু তপোদানসমাধিভিঃ।
নরাণাং ক্ষীণ-পাপানাং কৃষ্ণেভক্তিঃ প্রজায়তে॥ ৪৩
সহস্ৰ সহস্ৰ জন্ম করে আরাধন,
তপোদান সমাধিতে ভেবে নারায়ণ,
ক্ষীণ-পাপ ভবে যেই মানব-নিচয়
নৈষ্ঠিক ভকতি কৃষ্ণে তাহাদের(ই) হয়। ৪৩
প্রহ্লাদ উবাচ।
নাথ যোনিসহস্ৰেষু যেষু যেষু ব্রজাম্যহম্।
তেষু তেষ্বচলা ভক্তিরচ্যুতাস্তু সদা ত্বয়ি॥ ৪৪
অসংখ্য যোনির মধ্যে ওহে নারায়ণ,
যেই যেই স্থানে করি জনম গ্রহণ,
সেই সেই জনমেতে ওতে পীতাম্বর,
তোমাতে অচলা ভক্তি থাকে নিরন্তর। ৪৪
যা প্রীতিরবিবেকানাং বিষয়েষ্বনুযায়িনী।
ত্বামনুস্মরতঃ সা মে হৃদয়ান্নাপসর্পতু॥ ৪৫
বিবেক-বিহীন হয় যেই নরগণ
ইন্দ্রিয়ের অনুকুল বিষয়ে যেমন,
লভে প্রীতি, সেই মত তব ভাবনায়
যে আনন্দ পাই হৃদে নাহি যেন যায়। ৪৫
বিশ্বামিত্র উবাচ।
কিংতস্য দানৈঃকিংতীররথৈঃ কিংতপোভিঃকিমধ্বরৈঃ।
যো নিত্যং ধার্য্যতে দেবং নারায়ণমনন্যধীঃ॥ ৪৬
একমনে কৃষ্ণে রাখে হৃদয় মাঝার,
দান, তীর্থ, তপ, যজ্ঞে কি কাজ তাহার? ৪৬
জমদগ্নিরুবাচ।
নিত্যোৎসবো ভবত্যেষাং নিত্যং শ্রীনিত্যমঙ্গলম্।
যেষাং হৃদিস্থো ভগবান্ মঙ্গলায়তনো হরিঃ॥ ৪৭
শ্রীহরি মঙ্গলময় যার হৃদি স্থিত,
উৎসব ‘মঙ্গল’ শ্রী, তাহার নিয়ত। ৪৭
ভরদ্বাজ উবাচ।
লাভস্তেষাং জয়স্তেষাং কুতস্তেষাং পরাজয়ঃ।
যেষামিন্দীবরশ্যামো হৃদয়স্থো জনার্দ্দনঃ॥ ৪৮
নীলপদ্ম-শ্যাম কৃষ্ণ যাঁর হৃদে রয়,
লাভ, জয়, সদা তাঁর, কোথা পরাজয়? ৪৮
গৌতম উবাচ।
গো-কোটি-দানং গ্রহণেষু কাশী-
প্রয়াগগঙ্গা-যুত-কল্পবাসী।
যজ্ঞাযুতং মেরু-সুবর্ণ-দানং
গোবিন্দনাম-স্মরণে ন তুল্যম্॥ ৪৯
গ্রহণকালেতে কোটি গো দান করিলে,
কাশী গঙ্গা কি প্রয়াগে কল্পবাসী হলে,
অযুত-সংখ্যক যজ্ঞ করে অনুষ্ঠান,
কিংবা যদি সুবর্ণের মেরু করে দান,
এই সব কর্ম্মে যত পুণ্যলাভ হয়
গোবিন্দ-স্মরণ তুল্য তবু কভু নয়। ৪৯
অত্রিরুবাচ।
গোবিন্দেতি সদা ধ্যানং সদা গোবিন্দ-কীর্ত্তনম্।
গোবিন্দেতিসদা স্নানং গোবিন্দেতি সদা জপঃ॥ ৫০
হে হৃদয়, কর সদা গোবিন্দের ধ্যান,
নিয়ত গোবিন্দ-গুণ কর তুমি গান,
গোবিন্দের নামামৃতে কর নিমজ্জন,
‘গোবিন্দ’ ‘গোবিন্দ’ মন জপ অনুক্ষণ। ৫০
অক্ষরং হি পরং ব্রহ্ম গোবিন্দেত্যক্ষরত্রয়ম্।
তস্মাদুচ্চরিতং যেন ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে॥ ৫১
ব্রহ্মরূপ তিন অক্ষর গোবিন্দের নাম,
করে যেই উচ্চারণ পায় মোক্ষধাম। ৫১
বাদরায়ণিরুবাচ।
অচ্যুতঃ কল্পবৃক্ষোসাবনন্তঃ কামধেনবঃ।
চিন্তামণিশ্চ গোবিন্দো হরের্নাম বিচিন্তয়েৎ॥ ৫২
অচ্যুত নামেতে কল্পবৃক্ষ বুঝা যায়
অনন্ত এ নাম হয় কামধেনু প্রায়,
গোবিন্দ এ নাম চিন্তামণির সদৃশ,
ভাব কৃষ্ণে হয়ে জীব সুস্থির মানস। ৫২
হরিরুবাচ।
জয়তু জয়তু দেবো দেবকী-নন্দনোহয়ং
জয়তু জয়তু কৃষ্ণো বৃষ্ণিবংশ-প্রদীপঃ।
জয়তু জয়তু মেঘশ্যামলঃ কোমলাঙ্গো
জয়তু জয়তু পৃথ্বীভার-নাশো মুকুন্দঃ॥ ৫৩
জয় জয় জয় কৃষ্ণ দেবকী নন্দন,
জয় যদুবংশদীপ, জয় নারায়ণ,
ঘনশ্যাম কোমলাঙ্গ জয় দয়াময়,
ভূভার-হরণকারী কৃষ্ণ জয় জয়। ৫৩
পিপ্পলায়ন উবাচ।
শ্রীমন্নৃসিংহবিভবে গরুড়ধ্বজায়
তাপত্রয়োপশমনায় ভবৌষধায়।
কৃষ্ণায় বৃশ্চিক-জলাগ্নি-ভুজঙ্গ-রোগ-
ক্লেশব্যপায় হরয়ে গুরবে নমস্তে॥ ৫৪
নরহরি-রূপধারী গরুড় বাহন,
ভবরোগ-মহৌষধ ত্রিতাপনাশক,[৪]
বৃশ্চিক জলাগ্নি সর্প ব্যাধিনাশকারী,
জগতের-গুরুরূপী প্রণমি শ্রীহরি। ৫১
আবির্হোত্র উবাচ
কুষ্ণ ত্বদীয়-পদপঙ্কজ-পিঞ্জরান্তে
অদ্যৈব মে বসতু মানস-রাজহংসঃ।
প্রাণ-প্রয়াণ-সময়ে কফবাত-পিত্তৈঃ
কণ্ঠাবরোধন-বি্ধৌ শরণং কুতস্তে॥ ৫৫
পাদপদ্ম-পিঞ্জরেতে কৃষ্ণ হে তোমার,
অদ্য মন-রাজহংস করুক বিহার;
এ প্রাণ যাবার কালে, কফবাত পিত্ত মিলে,
কণ্ঠ অবরোধ হ’লে কৃষ্ণ হে, তখন
কিরূপে লইব আমি তোমার শরণ? ৫৫
বিদুর উবাচ
হরের্নামৈব নামৈব নামৈব মম জীবনম[৫]
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা॥ ৫৬
হরিনাম হরিনাম জীবন আমার,
নাই নাই কলিযুগে অন্য গতি আর। ৫৬
বশিষ্ঠ উবাচ।
কুষ্ণেতি মঙ্গলং নাম যস্য বাচি প্রবর্ত্ততে।
ভস্মীভবন্তি তস্যাশু মহাপাতক-কোটয়ঃ॥ ৫৭
পরম মঙ্গলময় কৃষ্ণ নাম যার,
রসনাতে উচ্চারিত হয় অনিবার,
সে জনের কোটি কোটি মহাপাপচয়
নামের প্রভাবে আশু ভস্মীভূত হয়। ৫৭
অরুন্ধত্যুবাচ।
কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে।
প্রণত-ক্লেশনাশায় গোবিন্দায় নমোনমঃ॥ ৫৮
পরমাত্মারূপ কৃষ্ণ বাসুদেব হরি
দুঃখ হারি হে গোবিন্দ, প্রণিপাত করি। ৫৮
কশ্যপ উবাচ।
কৃষ্ণানুস্মরণাদেব পাপুসংঘাতপঞ্জরম্।
শতধা ভেদমাপ্নোতি গিরি বজ্রহতো যথা॥ ৫৯
পাপরাশিরূপ জ্বরে স্মরিলে কৃষ্ণেরে,
বজ্রহত গিরি প্রায় শতধা বিদর। ৫৯
দুর্য্যোধন উবাচ।
জানামি ধর্ম্মং ন চ মে প্রবৃত্তি-
জানাম্যধর্ম্মং ন চ মে নিবৃত্তিঃ।
ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদি স্থিতেন
যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি॥ ৬০
ধর্ম্মজ্ঞান আছে, কিন্তু মন নাহি যায়,
অধর্ম্ম বিদিত মম বিরাম কোথায়?
অতএব হৃষীকেশ, হয়ে হৃদিস্থিত
করি তাহা, যাহে তুমি কর নিয়োজিত। ৬০
যন্ত্রস্য গুণদোষৌ ন ক্ষম্যতাং মধুসূদন।
অহং যন্ত্রো ভবান্ যন্ত্রী মম দোষো ন বিদ্যতে॥ ৬১
আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী, কিবা দোষ তবে?
যন্ত্রের এ দোষ গুণ ক্ষমহ মাধবে। ৬১
ভৃগুরুবাচ।
নামৈব তব গোবিন্দ নাম ক্রতুশতাধিকম্।
দদাত্যুচ্চারণান্মুক্তিং ভবানষ্টাঙ্গযোগতঃ॥ ৬২
যেই ফল অষ্ট অঙ্গ যোগ আচরণে,
যেই ফল শতাধিক যজ্ঞ সম্পাদনে,
হে গোবিন্দ, তব নাম হ’লে উচ্চারিত,
সেই মুক্তি-ফল পায় মানব নিয়ত॥ ৬২
লোমশ উবাচ।
নমামি নারায়ণ-পাদ-পঙ্কজং
করোমি নারায়ণ-পূজনং সদা।
বদামি নারায়ণ-নাম নির্ম্মলং
স্মরামি নারায়ণ-তত্ত্বমব্যয়ম্॥ ৬৩
নারায়ণ-পাদপদ্মে প্রণিপাত করি,
ভক্তি ভরে অর্চ্চি যেন সতত মুরারি।
নির্মল কৃষ্ণ নাম উচ্চারি বদনে
অব্যয় কেশব-তত্ত্ব যেন জাগে মনে॥ ৬৩
শৌনক উবাচ।
স্মৃতে সকল-কল্যাণ-ভাজনং যত্র জায়তে।
পুরুষং তমজং নিত্যং ব্রজামি শরণং হরিম্॥ ৬৪
যে মধুর হরিনাম করিলে স্মরণ
সকল-কল্যাণ-ভাগী হয় নরগণ,
পুরুষ-প্রধান নিত্য জনম-রহিত,
শ্রীহরির পদে এবে হইনু আশ্রিত। ৬৪
গার্গ্য উবাচ।
নারায়ণোতি নামাস্তি বাগস্তি বশবর্ত্তিনী।
তথাপি নরকে ঘোরে পতন্তীত্যদ্ভুতং মহৎ॥ ৬৫
‘নারায়ণ’ এই নাম রয়েছে ধরায়,
উচ্চারিতে বাক্শক্তি বিদ্যমান হয়!
তথাপিও কি আশ্চর্য্য করিতে বর্ণন,
ঘোরতর নরকেতে যায় জীবগণ। ৬৫
দাল্ভা উবাচ।
কিং তয়ায় বহুভির্মন্ত্রৈর্ভক্তির্যস্য জনার্দ্দনে।
নমো নারায়ণায়োতি মন্ত্রঃ সর্ব্বার্থ-সাধকঃ॥ ৬৬
কিবা বহু মন্ত্রে তার
জনার্দ্দনে ভক্তি যার?
‘নমো নারায়ণ’ মন্ত্র সর্ব্বমন্ত্র সার।
সর্ব্বার্থসাধক ইহা বিদিত সসার। ৬৬
বৈশম্পায়ন উবাচ।
যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুৰ্দ্ধরঃ।
তত্র শ্রীবিজয়ো ভূতির্ধ্রুবাণীতি মতির্মম॥ ৬৭
যোগেশ্বর-রূপে কৃষ্ণ আছে যেই স্থান,
ধনুর্দ্ধর ধনঞ্জয় যথা বিদ্যমান,
তথায় ঐশ্বর্য্য, লক্ষ্মী, বিজয় নিশ্চয়,
হইবেক অবশ্যই মোর মনে লয়। ৬৭
অঙ্গিরা উবাচ।
হরির্হরতি পাপানি দুষ্টচিন্তৈরপি স্মৃতঃ।
অনিচ্ছয়াপি সংস্পৃষ্টো দহত্যেব হি পাবকঃ॥ ৬৮
দুষ্টচিত্তে করে যদি শ্রীহরি স্মরণ,
হরি তার পাপরাশি করেন হরণ,
অনিচ্ছাতে অনল করিলে পরশন,
অবশ্যই পুড়াইবে পাবক তখন। ৬৮
পরাশর উবাচ।
সকৃদুচ্চারিতং যেন হরিরিত্যক্ষরদ্বয়ম্
বদ্ধঃ পরিকরস্তেন মোক্ষায় গমনং প্রতি॥ ৬৯
একবার বলে যেই হরি দু অক্ষর,
সেই জন মোক্ষলাভে বদ্ধপরিকর। ৬৯
পৌলস্ত্য উবাচ।
হে জিহেব রস-সারজ্ঞে সর্ব্বদা মধুর-প্রিয়ে।
নারায়ণাখ্য-পীযূষং পিব জিহ্বে নিরন্তরম্॥ ৭০
হে রসনে, জ্ঞাত তুমি সব রস সার,
নেহরি মাধুর্য্যরসে আনন্দ অপার,
নারায়ণ-নামামৃত পিও নিরন্তর,
(মধুর নাইকো কিছু ভবে অন্যতর)। ৭০
ব্যাস উবাচ।
সত্যং সত্যং পুনঃ সত্যং ভুজমুত্থাপ্য চোচ্যতে।
ন বেদাচ্চ পরং শাস্ত্রং ন দেবঃ কেশবাৎপরঃ॥ ৭১
উৰ্দ্ধবাহু হ’য়ে বলি ত্রিসত্য উচ্চারি,
বেদ বিনে শাস্ত্র নাই, দেব বিনে হরি। ৭১
অচ্যুতানন্ত গোবিন্দ নামোচ্চারণ-ভেষজা।
নশ্যন্তি সকলা রোগাঃ সত্যং সত্যং বদাম্যহম্॥ ৭২
গোবিন্দ অচ্যুত, অনন্ত নামত্রয়,
ঔষধ রূপেতে আছে এই ধরাময়,
উচ্চারণে সর্ব্বরোগ বিনাশে নিশ্চয়,
সত্য সত্য কহি আমি নাহিক সংশয়। ৭২
মার্কণ্ডেয় উবাচ।
সা হানিস্তন্মহচ্ছিদ্রং স মোহঃ স চ বিভ্রমঃ।
যন্মুহূর্ত্তং ক্ষণং বাপি বাসুদেবং ন চিন্তয়েৎ॥ ৭
যে মূহূর্ত্তে যেই ক্ষণে কৃষ্ণে লোক ভুলে,
হানি, ছিদ্র[৬]মোহ, ভ্রম, জানিও সেকালে। ৭৩
অগস্ত্য উবাচ
নিমিষং নিমিষাৰ্দ্ধং বা প্রাণিনাং বিষ্ণুচিন্তনম্।
ক্রতুকোটি-সহস্রাণাং ধ্যানমেকং বিশিষ্যতে॥ ৭৪
নিমেষ কি নিমেষোর্দ্ধ শ্রীবিষ্ণু-চিন্তন,
কোটি যজ্ঞ হতে শ্রেষ্ঠ লয় মোর মন। ৭৪
মনসা কর্ম্মণা বাচা যে স্মরন্তি জনাৰ্দনম্।
তত্র তত্র কুরুক্ষেত্রং প্রয়াগো নৈমিষং বনম্॥ ৭৫
কায়মনোবাক্যে যেই জনার্দ্দনে স্মরে,
সেই স্থানে কুরুক্ষেত্র, সে প্রয়াগ সুপবিত্র,
নৈমিষ-অরণ্যতীর্থ অবস্থান করে। ৭৫
শুক উবাচ।
আলোচ্য সর্ব্বশাস্ত্রাণি বিচার্য্য চ পুনঃ পুনঃ।
ইদমেকং সুনিষ্পন্নং ধ্যেয়ো নারায়ণঃ সদা॥ ৭৬
করে বহু আলোচনা নিখিলশাস্ত্রের,
পুনঃ পুনঃ বিচারণে, এহেন ধারণা মনে,
একমাত্র নারায়ণে জানিবে ধ্যানের। ৭৬
ধন্বন্তরিরুবাচ
শরীরং নবচ্ছিদ্রন্তু ব্যাধিগ্রস্তং কলেবরম্।
ঔষধং জাহ্নবীতোয়ং বৈদ্যো নারায়ণো হরিঃ॥ ৭৭
নবচ্ছিদ্রময় দেহ ব্যাধির আলয়,
ঔষধ জাহ্নবী-বারি,
বৈদ্য নারায়ণ হরি,
বিদ্যমান ধরাতলে বল কিবা ভয়? ৭৭
শৌনক উবাচ।
ভোজনাচ্ছাদনে চিন্তা বৃথা কুর্ব্বস্তি বৈষ্ণবাঃ।
যোহসৌ বিশ্বম্বরো দেবঃ কথং ভক্তানুপেক্ষতে॥ ৭৮
এবং ব্রহ্মাদয়ো দেবা ঋষয়শ্চ তপোধনাঃ।
কীর্ত্তয়ন্তি সুরশ্রেষ্ঠং দেবং নারায়ণং বিভুম্॥ ৭৯
গ্রাস আচ্ছাদন চিন্তা মিছে ভক্তগণ,
বিশ্বম্ভরে অনাদরে ভক্তেরে কখন?
ব্রহ্মা আদি দেবখষি তপস্বি-নিচয়ে
তাই হরিগুণ গানু করে মত্ত হয়ে। ৭৮-৭৯
শেষ উবাচ।
ন ভূম্যাঃ পর্ব্বতানাঞ্চ নৈব ভারো বনস্পতেঃ।
বিষ্ণুভক্তি বিহীনস্য তস্য ভারঃ সদা মম॥ ৮০
পৃথিবী পর্ব্বত কিংবা মহান্ যে তরু,
এ সবের ভার আমি নাহি ভাবি গুরু,
কিন্তু বিষ্ণুভক্তিহীন হয় যেই নর,
তার ভারে নিরন্তর হই যে কাতর। ৮০
সনৎকুমার উবাচ।
যস্য হস্তে গদাচক্রং গরুড়ো যস্য বাহনম্।
শঙ্খং করতলে যস্য স মে বিষ্ণুঃ প্রসীদতু॥ ৮১
গরুড় বাহন যাঁর গর্দা চক্র করে।
করতলে শঙ্খ যাঁর, সেই বিষ্ণু অবতার,
প্রসন্ন হউন তিনি আমার উপরে। ৮১
চিত্তে মুকুন্দো বদনে মুকুন্দো
নেত্রে মুকুন্দঃ শ্রবণে মুকুন্দঃ।
যেষাং সদা সর্ব্বগতো মুকুন্দ
স্তে মানবাঃ কিং ন মুকুন্দতুল্যাঃ॥ ৮২
হৃদয়ে মুকুন্দ যার, মুকুন্দ বদনে,
নয়নে মুকুন্দ হেরে, মুকুন্দ শ্রবণে,
মুকুন্দ দেবেরে যারা হেরে সর্ব্বময়,
মুকুন্দের তুল্য ভবে তাহারা কি নয়? ৮২
৮৩-৮8
ইদং পবিত্রমায়ুষ্যং পুণ্যং পাপপ্রণাশনম্।
যঃ পঠেৎ প্রাতরুত্থায় বৈষ্ণবস্তোত্রমুত্তমম্।
সর্ব্বপাপ-বিনির্মুক্তো বিষ্ণুসাযুজ্যমাপ্নুয়াৎ।
ধর্ম্মার্থকামমোক্ষার্থং পাণ্ডবৈঃ পরিকীর্ত্তিতম্॥
আয়ুস্কর পুণ্যময় পাপ-বিনাশন
এই স্তব প্রাতে যেই করে অধ্যয়ন,
সর্ব্বপাপ নাশ হয়, মোক্ষপদ পায়,
মুক্ত হয়, পুনঃ কভু না আসে ধরায়,
ধর্ম্ম অর্থ কাম মোক্ষ লাভের কারণ,
পাণ্ডব করিলা এই স্তবের কীর্ত্তন।
ইতি শ্রীপাণ্ডবকৃতা পাণ্ডবগীতা সমাপ্তা।
এই লেখাটি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারির পূর্বে প্রকাশিত এবং লেখক অজ্ঞাত বা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সেই সমস্ত দেশে পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত যেখানে অজ্ঞাত বা ছদ্মনাম ব্যবহারকারী লেখকের লেখার কপিরাইট প্রকাশসাল হতে ৯৫ সাল বা তার কম।
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত বলে অনুমান করা হচ্ছে কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।
বিঃদ্রঃ এই লেখা/রচনা/বইয়ের লেখকের মৃত্যুসাল কোনও তথ্যসূত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। ভবিষ্যতে কোনো তথ্যসূত্র দ্বারা লেখকের মৃত্যুসাল সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে এলে, এই লেখকের রচনার প্রকৃত কপিরাইট অবস্থা যাচাই করা সম্ভব হবে। নতুন তথ্য অনুসারে এই বইটির কপিরাইট অবস্থা ভবিষ্যতে বিচার করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্গত কারণ এই লেখাটি ১লা জানুয়ারি ১৯২৯ সালের আগে প্রকাশিত। এই লেখাটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কপিরাইটেড হতে পারে। (বিস্তারিত জানার জন্য এই সাহায্য পাতা দেখুন)।