প্রকাশের সময় তিনি ইহাকে ঢালিয়া সাজান। এই সংস্করণের “বিজ্ঞাপনে” কবি লেখেন- “প্রথম সংস্করনের সাত আটটি কবিতা রাখিলাম। তাহাও আমূল পরিশধিত, এমন কি, নূতন কবিতাও বলা যায়। সূত্রানুসারে কনকাঞ্জলি ও ভূলের দুইটি কবিতা স্থান পাইয়াছে। অবশিষ্টগুলি নূতন।” দ্বিতীয় সংস্করনের পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ১১৩।
কবি ইহাতেও 'প্রদীপ' সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হইতে পারেন নাই। ১৩১৯ সালের ফাল্গুন মাসে- তাঁহার সর্বশেষ কাব্য 'এষা' প্রকাশেরও সাত মাস পরে কবি 'প্রদীপের' দ্বিতীয় রূপান্তর ঘটান। তৃতীয় সংস্করনের পৃষ্ঠা-সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৫। কবিতাগুলি আবার আমূল সংস্কৃত হয়। কোন কোন সমালোচক মনে করেন, ইহাতে কাব্যখানির অপকর্ষই ঘটে। 'সাহিত্য'- সম্পাদক সুরেশচন্দ্র সমাজপতি মহাশয় এই সংস্করনের জন্য “প্রস্তুতি” নামীয় ভূমিকা লিখিয়া দেন। কবির জীবিতকালে 'প্রদীপের' আর সংস্করন হয় নাই। আমরা সমাজপতি মহাশয়ের “প্রস্তুতি"সহ এই তৃতীয় সংস্করনের পাঠই এই 'গ্রন্থাবলী'তে গ্রহণ করিয়াছি।
ডক্টর নরেন্দ্রনাথ লাহা তাঁহার “৺কবিবর অক্ষয়কুমার বড়াল ও তাঁহার কাব্য-প্রতিভা” শীর্ষক বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-স্মৃতিসভায় পঠিত প্রবন্ধে (২১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯) 'প্রদীপ' সম্বন্ধে বলেনঃ
“প্রদীপ” কবির প্রথম গ্রন্থ। এই প্রথম রচনাতেই তাঁহার কবি-প্রতিভার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। ইহার একটী মাত্র কবিতা “হৃদয়-সংগ্রাম” পাঠ করিলেই−− আমার কথার সার্থকতা বুঝা যাইবে। অন্তরের সহিত বাহিরের এই দুর্ব্বার দ্বন্দ্বকে লক্ষ্য করিয়াই ডাক্তার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাশয়, এই খানেই আধুনিক বাঙ্গলা সাহিত্যে Romanticism-এর জন্ম বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথের কাব্য-সৃষ্টির একস্তরে ইহা আছে। বড়ালকবিতেও ইহা আছে।—
"কি ভীষণ চলেছে সংগ্রাম
প্রিয়জন সনে অবিরাম!
পূজ্য বৃদ্ধ পিতা মাতা, স্নেহের পুত্তলী ভ্রাতা,
সহোদরা−−বালিকা সুঠাম,
তাহারাও জনে জনে উন্মত্ত এ মহারণে!
হা জীবন, হায় ধরাধাম!
সখা সখী আত্মীয় স্বজন–
তারাও যুঝিছে অনুক্ষণ!