সম্মাদকীয় ভূমিকা অক্ষয়কুমারের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কনকাঞ্জলি’ প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রদীপ’-প্রকাশের ঠিক দেড় বৎসরের মধ্যে ১২৯২ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে বাহির হয়—ইংরেজী ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। তখন কবি সবে পচিশ বৎসর উত্তীর্ণ হইয়াছেন। পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ৯০। প্রদীপে অক্ষয়কুমার “রোমাটিক” কাব্যস্থষ্টির যে খ্যাতি অর্জন করেন, কনকাঞ্জলি’তে তাহা অব্যাহত থাকে। খ্যাতি সত্ত্বেও প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ হইতে দীর্ঘ বারো বৎসর কাটিয়া যায়। তখন বাংলা দেশে কবিতা-পুস্তকের চাহিদা ছিল না বলিলেও হয়। রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যও অধিকতর স্বপ্রসন্ন ছিল না। ১৩০৪ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে বাধতাকারে অর্থাৎ ১৩৩ পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ দ্বিতীয় সংস্করণ বাহির হয়। গ্রন্থকার ভূমিকায় লেখেন, “এই দ্বিতীয় সংস্করণের অৰ্দ্ধাধিক কবিতা নূতন এবং গ্রন্থিসম্বদ্ধ। অবশিষ্টাংশ কনকাঞ্জলির প্রথম সংস্করণে ও ভুলে প্রচারিত হইয়াছিল।” আরও কুড়ি বৎসর পরে ১৩২৪ বঙ্গাব্দে ১৯৭ পৃষ্ঠায় পরিমার্জিত তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয় ইহার “ভূমিকা” লিখিয়া দেন। আমরা এই “ভূমিকা’সহ তৃতীয় সংস্করণের পাঠই বর্তমান গ্রন্থাবলীতে গ্রহণ করিয়াছি। কবি-সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার তাহার “অক্ষয়কুমার বড়াল” প্রবন্ধে কনকাঞ্জলি’ সম্বন্ধে বলিয়াছেন:
- 'কনকাঞ্জলি'র কবি যে পেলব স্বক্ষ রস-মূর্ছনায় নব্য গীতিকাব্যে একটি নূতন স্বর যোজনা করিয়াছিলেন তাহা জাতির নহে, যুগের; সে কাব্য কল্পনায় বড় নহে-দৃষ্টি-স্বাক্টর যাদুশক্তি তাহাতে নাই।” - কনকাঞ্জলি'র তৃতীয় সংস্করণ সম্বন্ধে ডক্টর মুশীলকুমার দে তাহার নান
নিবন্ধে যে মন্তব্য করিয়াছেন তাহাও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন ঃ * 'কনকাঞ্জলি'র তৃতীয় সংস্করণ উল্লেখযোগ্য নয়। ইহাতে কবি র্তাহার পূর্ব্ব রচনাগুলিকে কাটিয়া ছাটিয়া যে আকার দিয়াছেন তাহাতে তাহাদের স্বাভাবিক মাধুর্ঘ্য ও ঐ লুপ্ত হইয়াছে ৰলিয়াই মনে হয়।” এতদসত্ত্বেও কবির স্বকৃত পরিবর্তন আমরা উপেক্ষা করিতে পারি নাই। শ্রীসজনীকান্ত দাস