ভূমিকা n বিক্রমাদিত্যের তিরোভাবের পর পুরাতন ‘রসবত্তা কালক্রমে ‘বিহতা' হইয়াছিল;–তখন এক নূতন (নবকা) ‘রসবত্তা বিলসিত হইয়া উঠিয়াছিল – তাহার উচ্ছম্বল প্রবল প্রভাবের দিনে কে না কাহাকে অতিক্রম করিত? বাসবদত্তার মুখবন্ধে মহাকবি স্ববন্ধু তাহার বর্ণনা করিবার জন্য লিখিয়াছিলেন,— “সা রসবত্তা ৰিহতা, নবকা বিলপস্তি, চরতি ন কং কং?” বাসবদত্তা প্রত্যক্ষর-শ্লেষনিবদ্ধ গন্ত কাব্য। এক অর্থ এক রূপ, অন্ত অর্থ অন্ত রূপ। এখানেও অন্ত অর্থ আছে। তাহার সন্ধান পাইতে হইলে, শ্লোকান্ধটি একটু ভিন্নভাবে পদচ্ছেদ করিয়া পাঠ করিতে হয়। যথা— "সারসবত্তা বিহতা, ন বকা বিলসস্তি, চরতি ন কঙ্ক:!” ইহাও করুণ-রসাত্মক। বিক্রমাদিত্য-রসসরোবর শুষ্ক হইয়া গিয়াছে,—‘এখন আর সারস নাই; বকেরাও বিলাসলীলা প্রকাশিত করে না; এমন কি, মাছরাঙ্গণটি পর্য্যন্ত বিচরণ করে না। স্ববন্ধুর এই স্বপরিচিত উক্তি সংস্কৃত কাব্য-সাহিত্যের ইতিহাসের একটি বিপ্লবযুগের আভাস প্রদান করে। অনেকে মনে করেন,—বজকাব্য-সাহিত্যের ইতিহাসেও এইরূপ এক বিপ্লব-যুগের আবির্ভাব হইয়াছে। এখন আর বড় কবি নাই;—সারসগুলা মরিয়াছে, বকেরা উজাড় হইয়াছে, মাছরাঙ্গাটি পর্য্যন্ত দেখিতে পাওয়া যায় না। এখন যাহার শুষ্কসরোবর তীরে কলরব করিতেছে, তাহারা আর একশ্রেণীর জীব-অধিকাংশই দর্দর! এরূপু সমালোচনা স্থলভ ও সরস হইলেও, সর্ব্বাংশে সমীচীন বলিয়া গৃহীত হইতে পারে না। সকল যুগেই প্রকৃত কবির সংখ্যা অল্প। যে যুগে জনসমাজে কাব্যের জাদর প্রবল থাকে, সে যুগে রসজ্ঞের অভাব হয় না। তখন যে কেহ রসজ্ঞের মজলিসে বীণা বাধিয়া অগ্রসর হইতে সাহস করে না। যে যুগে জনসমাজে কাব্যের আদর অল্প হইয় পড়ে, সেই যুগেই উচ্চ খলতা প্রশ্রয় লাভ করে, এবং প্রকৃত কবি-প্রতিভার পক্ষে সমুচিত বিকাশলাভের অন্তরায় হইয়া দাড়ায়। বঙ্গকাব্য-সাহিত্যের বর্তমান যুগে মুকবির একান্ত অভাব উপস্থিত হয় নাই; কিন্তু প্রকৃত কাব্য-রসজ্ঞের কিছু অভাৰ উপস্থিত হইয়াছে বলিয়াই বোধ হয়। তজ্জন্য পুরাতন ‘রসবত্তা কিয়ৎপরিমাণে “বিহতা’ হইতেছে —‘নৰকা রসবত্তা উদ্বেল হইয়া উঠিতেছে,—ভাবের হাট ভাজিয়া যাইবার উপক্রম হইতেছে! এমন দিন স্বকবির সাধু কাব্যের সমুচিত বিকাশলাভের দিন নয়। র্যাহারা মুকবি, তাহারা অনেকেই অরণ্যে রোদন করিতেছেন। র্তাহীদের গানে ‘আগমনী অপেক্ষ “বিজয়া’র করুণ মুরই অধিক
পাতা:অক্ষয়কুমার বড়াল গ্রন্থাবলী.djvu/৮৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।