পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৫
অথৈজল

 যদি কখনো না জানতাম এ জিনিস, জীবনের একটা মস্ত বড় রসের আস্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকতাম।

 সুরবালার চিন্তা আমাকে কখনো নেশা লাগায় নি।

 কিন্তু কেন? সুরবালা সুন্দরী ছিল না, তা নয়। আমাদের গ্রামের বৌদের মধ্যে এখনো সুন্দরী বলে সে গণ্য। এখন তার বয়েস পান্নার ডবল হোতে পারে কিন্তু একসময়ে সেও ষোড়শী কিশোরী ছিল। কিন্নরকণ্ঠি না হোলেও সুরবালার গলার সুর মিষ্টি। এখনো মিষ্টি। ষোড়শী সুরবালাকে আমি বিবাহ করেছিলাম। কিন্তু কিসের অভাব ছিল তার মধ্যে? অভাব কিসের ছিল তখন তা বুঝিনি। এখন বুঝতে পারি পান্নার ভালবাসা পেয়ে আমার এই যে নেশার মত আনন্দ, এই আনন্দ সে দিতে পারে নি। নেশা ছিল না ওর প্রেমে। ওর ছিল কি না জানি নে, আমার ছিল না। এতে যে নেশা হয় তাই জানতাম না, যদি পান্নার সঙ্গে পরিচয় না হোতো। এর অস্তিত্বই আমার অজ্ঞাত ছিল।

 রাস্তা দিয়ে মেলা লোক যাচ্চে। পার্কে মেলা লোক বেড়াচ্চে। এদের মধ্যে ক’জন লোক এমন ভালবাসার আনন্দ আস্বাদ করেছে জীবনে? ওই যে লোকটা ছাতি বগলে যাচ্চে, ও বোধ হয় একজন স্কুল মাষ্টার। ও জানে ভালবাসার আস্বাদ? ওর পাশের বাড়ির কোনো দুরধিগম্য সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে হয়তো ছাদে ছাদে দেখা হয়—না কি? হয়তো সেইজন্যে ও ছুটে ছুটে যাচ্ছে বাসায়?