পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈজল
২০৫

বাইরের বারন্দায় শুয়েছিলাম—কিন্তু ও বলেছিল আমার কাছে এসে শোবে রাত্তিরে, নয়তো নতুন জায়গা ভয় ভয় করবে। নীলি এবার আসেনি, ও একাই মুজরো করতে এসেচে। ভয় ওর করতেই পারে, তাই রাত্রে আমি ঘরের মধ্যেই এলাম।

 পান্না অঘোরে ঘুমুচ্ছে, ওর গলায় সোনার হার। মেয়েমানুষ সত্যিই বড় অসহায়। যে কেউ ওর গলা থেকে হার ছিনিয়ে খুন করে রেখে যেতে পারে এ সব বিদেশ বিভুঁয়ে। আর ওর যখন ওই উপজীবিকা, বাইরে না গিয়ে ওর তখন উপায় নেই। আমি ওকে ফেলে অনায়াসে পালাতে পারি, আমার মহাভিনিষ্ক্রমণ এই মুহূর্ত্তেই সংঘটিত হতে পারে—কিন্তু তা আমি যাবো না। আমার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে ও আত্মীয় স্বজন ছেড়ে চলে এসেচে, একে আমি অসহায় অবস্থায় ফেলে যেতে পারি?

 পান্না আমার পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে উঠলো। জড়িত স্বরে বললে—কে?

 —আমি।

 —শোও নি?

 —না। আমি তোমার গলার হার চুরি করবো ভাবছিলাম।

 —সত্যি?

 —আমি মিথ্যে বলচি?

 —বোসো এখানে। হ্যাঁগা, তুমি তা পারো?

 —কেন পারবো না। পুরুষ মানুষ সব পারে!