পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১
অথৈ জল

দুশ্চরিত্র হোক, সে আমার সাহায্য চেয়েছিল চিকিৎসক বলে। রোগীর গুপ্ত কথার প্রকাশের অধিকার নেই ডাক্তারের, সাহায্য আমি তাকে করি না করি সে আলাদা কথা।

 বৃদ্ধ চৌধুরী মশাই আমায় বললেন—যথেষ্ট হয়েছে বাবাজী, হাজার হোক ব্রাহ্মণের ছেলে, ওকে ছেড়ে দাও এবার। কাঁদো কাদো হয়ে গিয়েছে।

 কিন্তু রামপ্রসাদ কাঁদো কাঁদো হয়নি, ওটা বৃদ্ধের ভুল। ভয়ে ও এমন হয়ে গিয়েছে। বাপের অনেক সম্পত্তি ছিল, তার বলে সে বাবুগিরি করছে, লোকের উপর কিছু কিছু প্রভুত্বও করেছে কিন্তু লেখাপড়া না শেখার দরুন দারোগা পুলিশকে তার বড় ভয়। পুলিশের দারোগা দিন দুনিয়ার মালিক—এই তার ধারণা। আমি এটুকু জানতাম বলেই আজ দারোগাকে এনে তাকে শাসনের এই আয়োজন। নইলে অনেক ভাল কথা বলে দেখেছি, অনেক শাসিয়েছি, তাতে কোন ফল হয় নি। আমি চৌধুরী মশাইকে বললাম—ওকে ভাল করে শিক্ষা না দিয়ে আজ ছাড়ছি নে। এ ধরনের দুর্নীতির প্রশ্রয় দিতে পারি নে গাঁয়ে।

 রামপ্রসাদ হাতজোড় করে বলেল—এবারের মত আমায় মাপ করুন দারোগাবাবু—

 দারোগা বললে—আমি তোমার কাছে থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নেবো—যাতে এমন কাজ আর কখনো ভদ্রলোকের গ্রামে না করো। তাতে লিখে দিতে হবে।

 রামপ্রসাদ আরও ঘাবড়ে গিয়ে বললে—এবারের মত আমায় মাপ করুন দারোগাবাবু।