পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
অথৈজল

 —ওসব দরকার নেই, আর একবার চা খেলেই আমার ঠিক হয়ে যাবে।

 —চাও করবো এখন আপনার স্টোভে। তার আর ভাবনা কি? চা যতবার খেতে চান, তাতে দুঃখ নেই। আপনি বসবেন, না, আসরে যাবেন?

 আসরে গিয়ে বসলাম। নিতাই শীলের কাপড়ের দোকান ও হরি ময়রার সন্দেশ মুড়কির দোকানের পিছনে যে ফাঁকা জায়গা, ওখানটায় পাল খাটানো হয়েচে। তার তলায় বড় আসর। আসরের চারিদিকে বাঁশের রেলিং। চাষাভুষো লোকের জন্যে আসরের বাইরে দরমা পাতা, ভেতরে বড় সতরঞ্চি ও মাদুর বিছানো। চার-পাঁচটা বড় বড় ঝাড় ও বেল ঝুলচে, দুটো হ্যাজাক লণ্ঠন। মোটের উপর বেশ আলো ফুটেচে আসরে। আমি যখন গেলুম, তখন খেমটা নাচ আরম্ভ হয়েছে।

 একপাশে খান কতক চেয়ার বেঞ্চি পাতা, স্থানীয় বিশিষ্ট ও সম্ভ্রান্ত লোকদের জন্যে। আমাকে সবাই হাত ধরে খাতির করে চেয়ারে নিয়ে গিয়ে বসালে।

 পাশে বসে আছে মঙ্গলগঞ্জ ইউনিয়ান বোর্ডের প্রেসিডেণ্ট রামহরি সরকার—পাশের গ্রামে বাড়ী, জমিজনাযুক্ত পাড়াগাঁয়ে সম্পন্ন গৃহস্থ। পেটে ‘ক’ অক্ষর নেই, ধূর্ত্ত ও মামলাবাজ। তার সঙ্গে বসেচে গোবিন্দ দাঁ, ভূষণ দাঁর জ্যেঠতুতো ভাই—কলিকাতায় ক্লাইভ স্ট্রীটে রংয়ের দোকান আছে, পয়সাওয়ালা, মূর্খ ও কিছু অহংকারী। সে নিজেকে কলিকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যবসাদারদের একজন বলে গণ্য করে, এখানে পাড়াগাঁয়ে এসে