পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈ জল
৬৬

টানা টানা ডাগর চোখ দুটিতে যেন কিসের স্বপ্ন মাখা। ওর সারা দেহে কি হাড় নেই? এমন লীলায়িত ভঙ্গিতে দেহ লতায় হিল্লোল তুলেচে তবে কি করে? নারীদেহ এমন সুন্দরও হয়!

 মেয়েটি আমার দিকে আবার এগিয়ে আসচে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে। কিন্তু ওর মুখে চোখে বেপরোয়া ভাব নেই, ব্রীড়া ও কুণ্ঠায় চোখের পাতা দুটি যেন আমার দিকে এগিয়ে আসার অর্দ্ধ পথেই নিমীলিত হয়ে আসচে। সে কি অবর্ণনীয় ভঙ্গি!

 আর গান?

 সে গানের তুলনা হয় না। কিণ্ণরকণ্ঠ বলে একটা কথাই শোনা ছিল, কখনো জানতাম না সে কি জিনিস। আজ ওর গলা শুনে মনে হোল, এই হোল সেই জিনিস। এ যদি কিণ্ণরকণ্ঠী না হয়, তবে কার প্রতি ও-বিশেষণ সুষ্ঠুভাবে প্রযুক্ত হবে?

 আবদুল হামিদ এতক্ষণ কি বলেচে আমি শুনতে পাইনি। সে এবার আমার পা ঠেলতেই আমি যেন অনেকটা চমকে উঠলাম। দুপাটি দাঁত বের করে আমার সামনে একটা সিগারেট ধরে সে বলচে—শুনতে পান না যে ডাক্তারবাবু! নিন্—

 আমার লজ্জা হোল। কি ভেবে আবদুল হামিদ একথা বলচে কি জানি। ও কি বুঝতে পেরেচে যে আমি ওই মেয়েটিকে এক দৃষ্টে চেয়ে দেখচি? বোধ হয় পায়নি। কত লোকই তো দেখচে, আমার কি দোষ?

 গোবিন্দ দাঁ বললে—একবার কলকাতায় গেলে আমার দোকানে পায়ের ধুলো দেবেন।