পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ পর্যাঙ্কাদি পরিত্যাগ করিয়া ভূতলে শয়ন করিয়া রহিয়াছ কেন ? তুমি আমার সহিত কথা কহিতেছ না বলিয় আমি দুঃখিত হইতেছি । অলঙ্কার ত্যাগ করিয়া মলিনবসনে ভূমিশয্যায় কেন ?—বল; ভ্যামি তোমার সকল অভিলাষ পূর্ণ করিব । রমণী আমার দণ্ডনীয় ; এমন কি, তাহাকে আমি বধ করিতে পারি ; সন্দেহ নাই । হে দেবি ! যাহাতে তোমার প্রতি হয়। তাহা আমার সম্মুখে বল ; অত্যন্ত দুল্ল ভ হইলেও ক্ষণমধ্যে তাহ অবশু সম্পাদন করিব। তুমি আমার হৃদয় জান ; আমি তোমার বশতাপন্ন স্বামী ইহাও জান ; তথাপি আমাকে কষ্ট দিতেড় ; তোমার পরিশ্রম নিরর্থক মাত্র। ( যখন ইঙ্গিতে বলিলে অতি স্থঙ্কর কার্য্যও সম্পাদন করিব ইহা জান, তখন অধ্যাত্ম-রামায়ণ । কিছুমাত্র বিলম্ব করে তাহ হইলে তোমার সম্মুখেই আমি প্রাণত্যাগ করিব। ইহাই আমার প্রিয় ; এক্ষণে তুমি আপনার প্রতিজ্ঞা পালন কর” । কৈকেয়ীর এই নিদারুণ লোমহর্ষণ বাক্য শ্রবণ করিয়া মহীপতি বজ্রাহত পর্ব্বতের ন্যায় নিপতিত হইলেন । অনন্তর ন। পুরুষ, কে তোমারে অনিষ্ট করিয়াছে —সে । আমি কি দুঃস্বপ্ন দেখিলাম ;–না আমার মতিভ্রম হইল ভাবিয়া নয়নদ্বয় মার্জনা করিয়া ধীরে ধীরে উীলনপূর্বক সম্মুখে অবস্থিত ব্যাস্ত্রীর তায় পত্নীকে সভয়ে সম্মুখে দেখিলেন; অনন্তর বলিলেন,—“ভদ্রে। এ কি বলিতেছ ? এ যে আমার প্রাণনাশক বাক্য । কমললোচন রাম তোমার কি অপরাধ করিয়াছে ? তুমি পূর্ব্বে আমার সম্মুখে সর্ব্বদা ঐরামের শুভ গুণরাশি বর্ণন করিতে ; এবং বলিতে রাম, কোঁসল্যাকে এবং তামাকে সমানচক্ষে দর্শনকরত নিরস্তর আমার শুশ্রষা করে " এখন তবে অন্যরূপ বলি এত পরিশ্রম করিতেছ কেন ? আমাকে কষ্ট দিতেছ। তেছ কেন ? তুমি পুত্রের জন্য রাজ্যগ্রহণ কর; কিন্তু কেন ? ) বল ;–তোমার প্রিয়কারী কোন দরিদ্রকে ধনী করিব ; বা তোমার অপকারী কোন ধনীকে ক্ষণ মাত্রে নিৰ্দ্ধন করিব । বল ; কাহাকেও বধ করিব— না কোন বধ্য ব্যক্তিকে মুক্ত করিয়া দিব ? প্রিয়ে! এ বিষয়ে অধিক আর কি বলিব ? আমার প্রাণ তোমার হস্তে দিতে পারি (ইচ্ছা করিলে আমাকে বধ করিতে বা জীবিত রাখিতে পার ) ; কমললোচন রাম আমার প্রাণ অপেক্ষ প্রিয়তর ; সেই রামের উপর শপথ করিতেছি, তোমার কোন হিতকার্যা করিতে হুইবে বল, আমি তাহা করিতেছি । রাজা রাঘবের উপর শপথ করত ইহা বলিলে, কৈকেয়ী ধীরে ধীরে নেত্র মার্জনা করিয়া রাজাকে বলিতে লাগিল ;–যখন শপথ করিতেছ, যদি সত্যপ্রতিজ্ঞ হও, তাহা হইলে, শীঘ্রই আমার প্রার্থনা সফল করা তোমার উচিত । পূর্ব্বকালে দেবালুর যুদ্ধে আমি তোমাকে রক্ষা করি, তখন তুমি তুষ্টচিন্তু হইয়া আমাকে দুইট বর দিয়াছিলে। হে সুব্রত ! সে দুইটী বরই আমি তোমার নিকট গচ্ছিত স্বরূপে রাখি —তাহার এক বরে এই সকল সংগৃহীত উপকরণ দ্বার আমার প্রিয়পুত্র ভরতকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত কর ; অপর বরে, রাম অবিলম্বে দগুকারণ্যে গমন করুকৃ। শ্রীমান রাম, জটা-বস্তল ভূষিত কলামূলফল ভোজী হইয়া মুনিবেশে চতুর্দশ-বৎসর তথায় অব. স্থান করুকৃ; তাহার পর প্রত্যাগতও হইতে পারে । আর স্ব-ইচ্ছায় বনে থাকিতেও পারে। কমললোচন রাম প্রভাতেই যেন বন-গমন করে। যদি যাইতে রাম আমার গৃহে থাকুক —প্রতিকূলে! আমার প্রতি অনুগ্রহ কর; রাম হইতে তোমার কোন আশঙ্কা নাই; এই বলিয়া অশ্রুপূর্ণনয়নে তাহার পদযুগলোপরি পতিত হইলেন ; তখন সেই কৈকেয়ীও আরক্তনয়নে এই প্রত্যুত্তর করিল,—“রাজেন্দ্র ! তোমার কি মতিভ্রম হইল যাহা প্রতিজ্ঞা করিলে তাহার বিপরীত বলিতেছ। যদি নিজের প্রতিজ্ঞ মিথ্যা কর, তাহ হইলে তোমার নরক হইলে । যদি রামচন্দ্র প্রাতঃকালে চৗরাজিন পরিধান করিয়া বনগমন না করে, আমি উদ্বন্ধন অথবা বিষ ভোজন করিয়া তোমার সম্মুখে প্রাণত্যাগ করিব। তুমি এই জগতে সকল সভামধ্যেই “ আমি সত্য প্রতিজ্ঞ " বলিয়া শ্রাবা কর; কিন্তু তুমি রামের উপর শপথ করিয়া যে প্রতিজ্ঞা করিলে তাহাও পালন করিলে না, তবে তুমি নরকে গমন করিবে।" প্রিয় এই কথা বলিলে, দুঃখসমুদ্রে মগ্ন কাতর মহারাজ মূচ্ছি ত হইয়া শবের ন্যায় অচৈতন্যভাবে ভূতলে পতিত হইলেন। এইরূপে মহারাজের পক্ষে সংবৎসর সদৃশ কালরজনী অতি কষ্ট্রে অতীত হইল ; অরুণোদয় সময়ে বন্দীগণ ও গায়কগণ গান করিতে লাগিল। কৈকেয়ী । তাহাদিগকে নিবারণ করিয়া অধিকতর ক্রুদ্ধ ভাবে রহিল। এদিকে প্রভাতকালে, ব্রাহ্মণগণ, ক্ষত্রিয়গণ, বৈগুগণ, ঋষিগণ, কুমারীগণ, শ্বেতচ্ছত্র দিব্য চামর, হস্তী ও অশ্ব—এতদ্ভিন্ন বারবিলাসিনীগণ এবং পৌরজনপদগণ, মধ্যকক্ষে উপস্থিত হইল। বসিষ্ঠ, যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিলেন, তৎসমস্তই তথায় অবস্থিত হইল । সেই রজনীতে আবাল- ,