পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ লিপ্ত হুইবে না।” তামার কথিত এই উপদেশ সর্ব্বদ স্থদয়ে স্তাবনা'কর, তাহা হইলে আর কখনই কোন সংসারদুঃখে দুঃখিত হুইবে না । মা ! আমি যাহা বলিলাম, আপনিও সর্ব্বদা ইহা মনে মনে চিন্তা করুন । আমার পুনরাগমনকাল প্রতীক্ষা করুন ; বহুদিন দুঃখ-কাতর হইতে হইবে না। নদীপ্রবাহে ভাসমান উডুপগণের হায় কর্ম্ম পথ মুসারীদিগের সর্ব্বদা একত্র সহবাস ঘটে না । চতুর্দশ বৎসরের দিন গণনা—সময় বিশেষে ক্ষণার্থের দ্যায় হইয় থাকে। মা ! দুঃখকে দূরে পরিত্যাগ করিয়া আমাকে বনগমনে অনুমতি করুন, তাহা হইলে আমি মুখে বনবাস করিতে পারি," এই বলিয়া জননীর চরণে অনেকক্ষণ সাষ্ট্রাঙ্গে পতিত হইয়া রহিলেন। তখন কৌসল্যা তাহাকে উঠাইয়া ক্রোড়ে বসাইলেন এবং আশীর্ব্বাদ করিলেন, “ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর প্রভৃতি দেবগণ ও গন্ধর্ব্বগণ, তোমাকে গমনে—শয়নে—স্বপনে সর্ব্বদা রক্ষা করুন;" কৌসল্যা এই বলিয়া বারবার আলিঙ্গন করিয়া, রামকে বিদায় দিলেন । লক্ষ্মণও তখন রামকে প্রণাম করিয়া আনন্দাশগদগদ স্বরে বলিতে লাগিলেন;–“রাম । আজ আপনি আমার মনের সন্দেহ দূর করিলেন ; রাম! আমি আপনার সেবা করিবার জন্য পশ্চাদ্বী হইব ; আপনি ইহা আদেশ করুন ; রাম! আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নতুবা আমি প্রাণত্যাগ করিব।” ; রামও লক্ষ্মণকে বলিলেন;–“তথাস্তু, চল ; বিলম্ব করিও না ;" বলিয়া মাতৃ-ভবন হইতে প্রস্থান করিলেন এবং বিভু সীতা পতি সীতাকে সাস্তুনা করিবার জন্য স্বীয় গুহে গমন করিলেন। সুস্মিত-ভাষিণী সীতা, পতিকে আগত দেখিয়া স্বর্ণপাত্রস্থ জলে ভক্তিভাবে তাহার চরণযুগল প্রক্ষালন করিয়া দিলেন । অনস্তর, স্বামীকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন;–“তুমি দেব। সেন সঙ্গে না লইয়া কোথায় গিয়াছিলে ? এবং সঙ্গে না লইয়া কেন আসিলে ? তোমার শ্বেতচ্ছত্র কোথায় ? বাদ্য-ধ্বনি হইতেছে না কেন ? কিরীট প্রভৃতি রাজেচিত ভূষণ নাই কেন ? অধীনস্থ রাজগণের সহিত সন্ত্রম সহকারে আসিলে না কেন ?" সীতা এই রূপ জিজ্ঞাস করিলে রাম ঈষৎ হাস্য করিতে করিতে কহিলেন ; "হে শুভে! রাজা আমাকে দণ্ডকারণ্যের সমগ্র রাজ্য প্রদান করিয়াছেন ; অতএব সেই রাজ্য পালন করিতে, হে ভামিলি । সত্বর তথায় যাইতেছি। আমি আজই বনে যাইব ; তুমি শ্বশুর নিকটে অধ্যাত্ম-রামায়ণ । থাকিয়, তোমার শ্বশ্রী—আমার জননীর সেবা কর ; ইহা উপহাস ভাবিও না, আমরা মিথ্যাবাদী নহি ;" শ্রীরাম এই বলিলে সীতা সভয়ে তাহাকে বলিলেন, “তোমার মহাত্মা পিতা তোমাকে বন-রাজ্য প্রদান করিলেন কি জন্ত ?” রাম তাহাকে বলিলেন ; “হে পুণ্যবতি । রাজপ্রীত হইয়া কৈকেয়ীকে বর দিয়াছেন; তাহাতে ভরতকে রাজ্য এবং আমাকে বনবাস দেওয়া স্থির হইয়াছে। যাহাতে আমি বনে চতুর্দশ ংসর বাস করি, কৈকেয়ী দেবী তাহা প্রার্থনা করেন; দয়ালু সত্যবাদী রাজ সে প্রার্থনা পূর্ণ করিয়াছেন । অতএব শীঘ্র গমন করিব; হে ভামিনি । বিঘ্ন করিও না " জানকী রামের সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া নিরানন্দ না হইয়া বলিলেন ;–“অগ্রে আমি । বনে যাইব, পাশ্চাৎ তুমি আসিবে; রাঘব ! আমাকে ত্যাগ করিয়া গমন করা তোমার উচিত নহে ।” রাঘব, প্রীত হইয়৷ সেই প্রিয়ভাষিণী—নিজ প্রিয়তমাকে বলিলেন ; ব্যাঘ্রাদি বিবিধ হিংস্র জন্তুপূর্ণ বনে তোমাকে আমি কিরূপে লইয়া যাইব ? তথায় মনুষ্য-ভোজী বিকটাকার রাক্ষসসকল আছে ; সিংহ, ব্যাঘ্র ও বরাহগণ চারিদিকে বিচরণ করে ; হে সুমধ্যমে। তথায় কটু-অম্ন ফল-মূল ভোজন করিতে হয় ; কখনই পিষ্ট্রক বা ব্যঞ্জন মিলে না। হে সুন্দরি । সময়ে সময়ে সেখানে ফলও পাওয়া যায় না ; কোথায়ও বা পাওয়া যায় ; পথের চিহ্নমাত্র দৃষ্টিগোচর হয় না ; যদি কোন খানেও বা দেখা যায়, তাহ আবার কঙ্কর ও কণ্টকে আবৃত ; ঐ বন গুহা-গহ্বরময় এবং ঝিল্লী ও দংশাদি দ্বারা পূর্ণ; দণ্ডকারণ্য এইরূপ বিবিধ দোষাশ্রিত। শীত, বায়ু ও রৌদ্রাদি সহ করত পদ-ব্রজে গমন করিতে হইবে । তুমি সেই বনে রাক্ষসাদি বিকটাকার প্রাণী দেখিয়া অবিলম্বে জীবন ত্যাগ করবে। অতএব হে ভদ্রে ! তুমি গৃহে থাক ; আমাকে পুনরায় সত্বর দেখিতে পাইবে।” রামের বাক্য শ্রবণ করিয়া সীতা অতি দুঃখিত ও কিঞ্চিং কুপিত হইলেন। কোপে ও দুঃখে তাহার অধর ওষ্ঠ কঁাপিতে লাগিল; তিনি প্রত্যুত্তর করিলেন, আমি তোমার অৰ্দ্ধাঙ্গ ; নির্দোষ পতিব্রত ধর্ম্মপত্নী; তুমি ধর্ম্মজ্ঞ এবং দয়ালু হইয়া আমাকে ত্যাগ করিতে ইচ্ছা করিতেছ কিরূপে ? রাম ! বনে আমি তোমার নিকটে থাকিব, কে আমাকে আক্রমণ করিতে পারবে ? তোমার ভুক্ত বশিষ্ট যাহা কিছু ফলমূলাদি থাকিবে, তাম্বুই আমার অমৃত তুল্য হইবে ; তাহাতেই আমি তুষ্ট হইয়৷ আনন্দে থাকিব । তোমার সহিত বিচরণ করিতে