পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরণ্য-কাণ্ড য়ার্থ গমন করিয়ছিলাম; ঐ অবসরে কোন দুরাত্মা রাক্ষস তাহাকে হরণ করিয়াছে, আমরা তাহার অন্বেষণ করিতে করিতে এই স্কোর বনে আসিয়াছি। হে দৈত্যেন্ত্র ! আমরা তোমার বাহুমধ্যে পতিত হইয়া প্রাণ-রক্ষার্থ ত্বদীয় বাহুযুগল ছেদ করিয়াছি। হে মহাবল ! তোমার বিকট রূপ দেখিয়া আমরা বিস্ময়াপন্ন হইয়াছি ; এক্ষণে নিজ পরিচয় প্রদান করিয়া আমাদিগের অভিলাষ পূরণ কর।” কবন্ধ কহিল, “হে রাম! অদ্য তুমি আমার সম্মুখে আসিয়া দর্শন দিয়াছ, ইহাতে আমি ধন্য হইলাম । আমার পূর্ববৃত্তান্ত শ্রবণ কর আমি গন্ধর্ব্বদিগের রাজ; পূর্ব্বকালে বরাঙ্গনাদিগের মনোহারী ও রূপ-যৌবনদৰ্পে মন্ত হইয়া সমস্ত লোক বিচরণ করতাম। হে রঘুবর। আমার ঘোরতর কঠিন তপস্যায় সন্তুষ্ট হইয়া ব্রহ্ম৷ আমাকে অবধ্যত্ব বর দিয়াছিলেন। একদিন মহাপ্রভাব অষ্টবক্র মুনিকে দেখিয়া আমি হান্ত করিয়াছিলাম, মহাতপ অষ্টাবক্র ক্রুদ্ধ হইয়। আমাকে অভিসম্পাত করিলেন—“রে দৃশ্মতে, দুষ্ট স্বভাব ! তুই রাক্ষস হইয়া কালাতিপাত কর " আমি শাপ বাক্য শ্রবণ মাত্র ব্যাকুল হইয়া তপোধনকে বহুবিধ বিনয় ও বন্দনাদি দ্বারা পরিতুষ্ট করিলাম। অনন্তর দয়াস্বভাব সম্পন্ন, তপঃপ্রদীপ্ত ঋষিবর আমুকে শাপাস্ত সময় কহিলেন যে, “ত্রেতাযুগে ভগবান নারায়ণ দাশরথি-রূপে স্বয়ং অবতীর্ণ হইয়া এই স্থানে আগমন করিয়া তোমার যোজন পরিমিত বাহুদ্বয় ছেদন করিবেন ; তুমি তখন শাপ হইতে মুক্ত হইয়া পূর্ব্বরূপ প্রাপ্ত হইবে ।" মহর্ষি আমাকে এইরূপ কহিয়া অন্তর্হিত হইবামাত্র আমি আপনাকে রাক্ষসীকৃতি দেখিতে লাগিলাম । হে রঘুনন্দন! একদিন আমি ক্রোধপূর্ব্বক রাক্ষসরূপে দেবরাজের অনুসরণ করিয়াছিলাম । অনস্তর দেবরাজ ক্রুদ্ধ হইয়া আমার মস্তকে বজ্রঘাত করিলেন, ঐ বজ্রাঘাত দ্বারা আমার মস্তক ও পাদদ্বয় কুক্ষিদেশে প্রবিষ্ট হইল; কেবল ব্রহ্মদত্ত-বরপ্রভাবে বজ্রাঘাতেও মৃত্যু হইল না। আমাকে মুখরহিত দেখিয়া সকল লোকেই দয়াপরতন্ত্র হইয়। দেবরাজকে কহিল;—“হে দেবরাজ! এই রাক্ষস মুখবর্জিত হইয়া কিরূপে জীবনধারণ করবে ? অনন্তর দেবরাজ কহিলেন ;—“হেরাক্ষস! তোমার বক্ষঃস্থলে মুখ ও বাহুদ্বয় যোজন পরিমিত হইবে, এখান হইতে গমন কর। হে রাম! আমি দেবরাজকর্তৃক এইরূপ কথিত হইয়া তুৎকালাবধি এইস্থানে বাস করতেছি এবং বিস্তৃত-মূহুযুগল দ্বারা বস্ত «ፃ জন্তসকল গ্রহণ করিষ্ণু ভক্ষণ করি । এক্ষণে তোমা কর্তৃক আমার জীবন-সাধন সেই বাহুযুগল ছিন্ন হইল । হে করুণাময় ! বিলম্ব করিও না, অতি সত্বর আমাকে ভূলস্ত-কাষ্ঠপূর্ণ গর্ত্তমুখে নিক্ষেপ কর । হে রবৃত্তম ! তোমাকর্তৃক অগ্নিদ্বারা দগ্ধ হইলে আমি পুর্ব্বরূপ প্রাপ্ত হইয়া সীতার সকল বৃত্তাস্ত কহিব । রাক্ষস এইরূপ কহিয়া নিবৃত্ত হইলে লক্ষ্মণ অতি শীঘ্র একটা বুহুং গর্ত্ত নির্ম্মাণ করিয়া তন্মধ্যে তাহাকে নিক্ষেপপুর্ব্বক কাঠস্বারা দাহ করিতে লাগিলেন । অনস্তর রাহ্মসের দেহ হইতে কদৰ্প সদৃশ পরম সুন্দর সর্লাভরণভূষিত একটী পুরুষ নিৰ্গত হইয়া ঐaামকে প্রদক্ষিণ করণানস্তর সাষ্ট্রাঙ্গ প্রণিপাত করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে ভক্তিগদগদ বাক্যে কহিল ;–“হে রাম । তোমাকে সর্ব্বব্যাপী অনাদি অনন্ত এবং বাক্য ও মনের অগোচর জানিয়াও ৯ আমার মন অতিশয় প্রীতিহেতু স্তব করিতে উৎসাহ করিতেছে। হে ভগবনৃ ! সে সকল স্তব-বাক্য বিফল মাত্র, তোমার হিরণ্য-গর্ভ মুক্তি ও বিরাট মুক্তি হইতে বিভিন্ন যে জ্ঞান স্বরূপ স্বক্ষ মূর্ত্তি, তাহ যোগিদিগেরও দুজ্ঞে ; এতদ্ভিন্ন দৃশু বস্তু মাত্রেই জড় পদার্থ, সুতরাং তোমা হইতে বিভিন্ন মন তোমাকে কিরূপে জানিলে । চিত্ত এবং চিত্তে আত্ম প্রতিবিম্ব, এই উভয়ের অভেদ-জ্ঞান বিষয়-পদার্থই, জীল । ঐ জীব এই সমস্ত জড় পদার্থের সাক্ষী নহে । শুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ ব্রহ্মপদার্থই সমস্ত জড় জগতের সাক্ষী ও অন্তর্যামী, যেহেতু বায়ুনের অগোচর সেই ব্রহ্ম-পদার্থে এই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড অবস্থান করিতেছে, হে রঘুনন্দন ! মনুষ্যেরা আপনাকে সেই নিলিকার সর্বস্বরূপ ব্রহ্মপদার্থ জানিয়া ভাপনাতে অজ্ঞানবশতঃ সমস্ত লিঙ্গদেহ-সমষ্টিরূপ হিরণ্যগর্ভ-মুক্তির ও স্থল-দেহ-সমষ্টি-রূপ-বিরাট-মুর্ত্তির আরোপ করিয়া থাকে। হে রাম ! আপনি নিশ্চিস্ত নহেন, কারণ যাহারা আপনার স্মরণ করে, তাহদিগকে নিজলোক প্রদানরূপ মঙ্গল চিস্ত আপনার হৃদয়-কমলে সর্ব্বদা জাগরুক ; ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্ত্তমান সমস্ত পদার্থও ঐ চিন্তার বিষয়। হে ভগবন্‌ ! আপনার মহত্তত্ত্বাদি পরিবৃত স্থূলতম বিরাড়দেহে বিশ্বধারণ-শক্তি আছে, হে জগদীশ্বর! আপনিই সকলের মুক্তি-দাতা; এই সমস্ত লোক আপনার বিরাড় মূর্ত্তিরই অবয়বে বাস করিতেছে ; যে হেতু পাতাল ঐ দেহের পাদমূলে, মহীতল পাঞ্চি দেশে, রসাতল গুল ফদ্বয়ে এবং তলাতল