পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ぐ。8 অর্থাৎ পুনরপি অদ্ভুত শব্দ করিয়া বালীকে জাহ্বান করিতে লাগিল। মহাবল পরাক্রান্ত বালী তাহ শুনিয় বিস্ময় ও ক্রোধে বদ্ধপরিকর হইয়া যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করিতে উদূযোগ করিল। অমস্তর তারা স্বামীর কর ধারণপূর্বক তাহাকে যুদ্ধে যাইতে নিষেধ করিয়া কহিল;—“হে নাথ! তুমি যুদ্ধ করিতে গমন করিও না, আমার অতিশয় শঙ্কা উপস্থিত হইয়াছে, যেহেতু সুগ্রীব এই যুদ্ধে ভঙ্গ । দিয়া গিয়াছিল,আবার সত্বর আসিয়া উপস্থিত হইল। নিশ্চয়ই তাহার কোন প্রবল সহায় আসিয়াছে।" অনন্তর বালী তারাকে কহিল ;–“হে সুভ্র ! তুমি সুগ্রীবের প্রতি আশঙ্গা করিও না, হে প্রিয়ে! এক্ষণে আমার কর পরিত্যাগ করিয়া গমন কর, আমিও গমন করি, শত্রু-বধ করিয়৷ শীঘ্র প্রত্যাগমন করিব ; কোন ব্যক্তি সেই দুরাত্মার সহয়তা করিবে ? আর যদি কেহ তাহার সহায়তাই করে, তাহ হইলে ক্ষণকাল মধ্যে উভয়কে নষ্ট করিয়া শীঘ্র প্রত্যাগমন | করিব। হে সুন্দরি । বীর পুরুষের শত্রু কর্তৃক আহূত হইয়া কখন কি গৃহে অবস্থান করিতে পারে ? অতএব তুমি শোক পরিত্যাগ কর, শীঘ্র শত্রু বিনাশ করিয়া প্রত্যাগমন করিব।” । তারা কহিল ;–“হে রাজেন্দ্র । আমার অন্ত কিছু বক্তব্য আছে, শ্রবণ করিয়া যাহা উচিত হয় করুন । পুত্র অঙ্গদ মৃগয়া করিতে গিয়া এই কথা শুনিয়াছে—যে অযোধ্যাধিপতি দশরথাত্মজ শ্রীমান রামচন্দ্র কনিষ্ঠ ভ্রাত লক্ষণ ও নিজ ভাষা সীতার সহিত দণ্ডকারণ্যে আগমন করিয়াছিলেন, সেই স্থানে রাসক্ষসাধিপতি রাবণ র্তাহার ভার্য্যা সীতাকে হরণ করিয়াছে, এক্ষণে লক্ষণ সমভিবাহারে সেই রাম জানকীকে অন্বেষণ করত ঋষ্যমূক পর্ব্বতে আসিয়া সুগ্রীবের সহিত মিলিত হইয়াছেন। মুগ্রীব তাহার সহিত অগ্নিসাক্ষিক সখা করিয়াছেন । রাম ও লক্ষ্মণ প্রতিজ্ঞাপূর্বক সুগ্রীবকে কহিয়াছেন যে, সমরে বালীকে বিনষ্ট করিয়া তোমাকে রাজা করিব। তাহার পরম্পরের সাহায্য করিতে প্রতিজ্ঞারুঢ় হইয়াছেন। আমার নিশ্চিত বাক্য শুন ; নতুবা সুগ্রীৰ ইতিপূর্ব্বে পরাজিত হইয়া পুনর্ব্বার যুদ্ধার্থে কেন আসিবে ? হে মহারাজ। আমার বাক্যানুসারে বৈর পরিত্যাগপূর্ব্বক সুগ্রীবকে জানয়ন করিয়া শীঘ্র যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত কর এবং ঐরামের শরণাগত হও । হে কপীন্দ্র । আমি, জম্বদ,রাজ্য ও বংশ–এই সমস্ত রক্ষা কর।” অশ্রুপূর্ণমুখী তারা বিনয় বচনে এইরূপ অধ্যাত্ম-রামায়ণ । হস্তযুগল দ্বারা বালীর চরণদ্বয় ধারণ করিয়া ভয়বিহরলান্তকরণে রোদন করিতে লাগিল। তখন বালী তারাকে আলিঙ্গন করিয়া সস্নেহ বচনে কহিল ;– “প্রিয়ে ! তুমি স্ত্রী জাতি বলিয়া ভয় করিতেছ, কিন্তু আমার কোন ভয় নাই, প্রভু ত্রীরাম যদি লক্ষ্মণের সহিত আগমন করিয়া থাকেন, তাহা হইলে র্তাহার সহিত আমার বন্ধুত্ব হইবে, সন্দেহ নাই । হে অনত্বে ! আমি পূর্ব্বে শুনিয়াছি ষে, সাক্ষাৎ অখিল ব্রহ্মাণ্ড-পতি নারায়ণ ভূভার-হরণের নিমিত্ত রামরূপে অবতীর্ণ হইয়াছেন, পরমাত্মা রামের স্বপক্ষ বা পরপক্ষ কেহই নাই। হে সাধিব ! আমি র্তাহার চরণ-কমলে প্রণাম করিয়া তাহাকে গৃহে আনয়ন করিব ; এই ভক্তিলভ্য মুরেশ্বর ভক্তজনের মনোরথ-পূরক ; যদি সুগ্রীব অসহায় অবস্থায় আসিয়া থাকে, তাহ হইলে ক্ষণকালের মধ্যে তাহার প্রাণ বিনাশ করিব । সুগ্রীবকে আনয়ন করিয়া যে যৌব রাজ্যে অভিষিক্ত করিতে বলিয়াছ—হে প্রিয়ে ! শুভলক্ষণে! সর্ব্বলোক-সমাজে আমি শুর বলিয়া বিখ্যাত ; এক্ষণে শত্রু কর্তৃক যুদ্ধার্থ আহত হইয়। নিতান্ত ভয়হুচক সেই কথা বালী কিরূপে বলিলে । হে সুন্দরি । অতএব শোক পরিত্যাগ করিয়া গৃহে অবস্থিতি কর, আমি যুদ্ধার্থ গমন করি । অনন্তর মহাবল পরাক্রান্ত বালী শোকাশ-পূর্ণ নয়ূন তারাকে এইরূপে আশ্বাসিত করিয়া সুগ্রীব বধের জন্য উদূযোগী হুইয়া গমন করিল । পুষ্প-মাল-শোভিত ভীম পরাক্রম সুগ্রীব বালীকে সমাগত দেখিয় পতঙ্গের দ্যায় লম্ফ প্রদান পূর্বক মুষ্টি দ্বারা তাড়ন। করিল, বালীও সুগ্রীবকে, সুগ্রাব বালকে, বালী সুগ্রীবকে, সেইরূপ প্রহার করিতে লাগিল । সুগ্রীব যুদ্ধস্থলে মধ্যে মধ্যে ঐরামের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করত যুদ্ধ করিতে লাগিল। মহাপ্রতাপশালী ঐরামচন্দ্র তৃণীর হইতে একটা ঐন্দ্রবাণ গ্রহণ করিয়া নিজ ধনুতে সন্ধান করিলেন। অনস্তর বৃক্ষসমূহের অন্তরালে অদৃষ্ঠভাবে অবস্থিত মহাবল রাম বালীকে অবলোকনপূর্বক উহার বক্ষঃস্থল লক্ষ্য করিয়া ঐ বজ্রতুল্য মহাবেগ বাণ পরিত্যাগ করিলেন। সেই বাণ বালীর বক্ষঃস্থল ভেদ করিল। বালী মহাশব্দে ঈষৎ লাফাইয় তৎক্ষণাৎ মেদিনী কম্পিত করত ভূতলে নিপতিত হইল। তখন বালী মুহূর্ত্ত কাল অচেতন থাকিয়া পরে সংজ্ঞালাভ করিবামাত্র সম্মুখে দেখিল ;–জটামুকুটধারী বিশাল-বক্ষঃস্থলে দোদুল্যমান বনমালা কহিয়া বালীর পাদযুগলে পতিত হইল। অনন্তর নিজ দ্বারা অলস্কৃত মন্দালন আজানুলম্বিত