পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুন্দরকাণ্ড । আসিয়াছি—আমি সুগ্রীবের মন্ত্রী এবং রামচন্ধের দাস। আমি যে ভাগ্যক্রমে জানকীকে দেখিতে পাই লাম ; তাহাতে আজ আমার প্রয়াস সফল হইল,— আমার এই সকল বাক্য শ্রবণ করিয়া জনকনন্দিনী, বিস্ময়-হৰ্ষ-বিক্ষরিত-নেত্রে বললেন;– শ্রবণে— অমৃততুল্য এই শুভাক্ষর বচন, কে আমাকে শুনা. ইল ? যদি ইহা সত্য হয় তাহ হইলে সে আমার নয়নগোচর হউক ’ হে প্রভো ! অনস্তর আমি ক্ষুদ্র বানরাকারে জানকীকে প্রণাম কয়িয়া কৃতাঞ্জলিপুটে দূরেই দাড়াইয়া রহিলাম। “তুমি কে?" ইত্যাদি অনেক কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। হে শত্রুনাশন ! আমি ক্রমে ক্রমে সে সকল কথার উত্তর করিয়া পরে আপনার প্রদত্ত অঙ্গুরীয়, দেবীকে অপর্ণ করি। তাহাতে তাহার আমার প্রতি অতিশয় বিশ্বাস জন্মিল, আমাকে এই কথা বলিলেন, “হনমন! রাক্ষসীগণের তর্জন গর্জনে আমি নিরস্তর দুঃখভোগ করিতেছি ; তুমিত স্বচক্ষে দেখিয়া গেলে, এসকল কথা রামচন্দ্রের নিকট বলিবে । আমি বলিলাম “দেবি । রাম ও অনবরত আপনার জন্য চিন্তা করিতেছেন ; তিনি আপনার সংবাদ না পাইয়া দিবারাত্র আপনার জন্য শোক করিতেছেন। আমি এখনই গিয়া আপনার বিবরণ রামকে নলিব। রাম, শুনিবামাত্র সুগ্রীব, লক্ষ্মণ এবং বানর সেনাপতিগণের সহিত আপনার নিকট আসি বেন : রাবণকে সবংশে ধ্বংস করিয়া আপনাকে নিজ নগরীতে লইয়া যাইবেন ; দেবি ! বিভু রামচন্দ্র যাহাতে আমার কথায় বিশ্বাস করেন, আমাকে এরূপ কোন অভিজ্ঞান চিহ্ন প্রদান করুন।” তামি এইকথা বলিলে তিনি কেশপাশে অবস্থিত প্রিয় চূড়ামণি আমার নিকট দিলেন ; পূর্ব্বে চিত্রকুট | ১ৈ১ লঙ্কা হইতে এখানে আসিবার সময় রাবণের সখের অশোক-বনিকা উৎপাটন করিয়া ক্ষণমধ্যে তথায় অনেক রাক্ষসকে এবং রাবণের একপুত্রকে বধ করিয়াছি ; পরে রাবণের সহিত কথোপকথন করিবার পর সম্পূর্ণরূপে লঙ্কা দগ্ধ করিয়া ক্ষণমধ্যে প্রত্যাগত হইয়াছি” হনুমানের বাক্য শ্রবণ করিয়া রাম অতীব সৃষ্টচিত্ত হইলেন এবং কহিলেন “হুনু. মন্‌ ! তুমি যে কাজ করিয়াছ, ইহা দেবগণেরও অতি দুষ্কর ; তুমি আমার যে উপকার করিয়াছ, তাহার প্রত্যুপকার ত দেখিতে পাইতেছি না। হুে মারুতি ! এখন আমি তোমাকে আমার সর্ব্বস্ব প্রদান করি”; এই বলিয়া রঘুবর সজলনয়নে বানরশ্রেষ্ঠকে আকর্ষণপূর্বক গাঢ় আলিঙ্গন করিলে, তাহাতে হনুমান পরমপ্রীত হইল * । ভক্তবৎসল রাঘব হনুমানকে এই কথা বলিলেন “আমি পরমেশ্বর, আমার আলিঙ্গন , জগতে দুলভ ; হে বানরশ্রেষ্ঠ ! তুমি তামার ভক্ত এবং প্রিয় ; সুতরাং তুমি ইহা প্রাপ্ত হইলে " যাহার পাদপদ্ম, যুগল তুলসীদল প্রভৃতি দ্বারা পূজা করিলে নিরুপম বিষ্ণুলোকে গমন করা যায়, এই পবন. নন্দন কত পুণ্যই করিয়াছে। সেই রামচন্দ্র ইহার দেহ আলিঙ্গন করিলেন ; সুতরাং এ যে বিষ্ণুলোকে গমন করিবে, ইহাতে আর কথা কি ? । পঞ্চমাধ্যায়ে সুন্দরকাণ্ড সমাপ্ত ! লঙ্কাকাণ্ড । প্রথম অধ্যায় । রামচন্দ্র হনুমানের যথাযথ বাক্য শ্রবণ করিয়! পর্ব্বতে কাকের সহিত যাহা হইয়াছিল, তাহাও ! মহা আনন্দে নিম্নলিখিত কথা বলিলেন;–“হনুমান বলিলেন এবং অগ্রপূর্ণ নয়নে বলিলেন, রঘু- যে কার্য্য করিয়াছে, তাহ দেবতাগণেরও অতি বরের নিকট আমার মঙ্গল-সংবাদ দিও; আর হুঙ্কর; আর পৃথিবীর মধ্যে ত অপর কেহ ইহ লক্ষ্মণকে বলিও?—“হে বংশ প্রীতিকর। আমি পূর্ব্বে যে কিছু দুর্ব্বাক্য বলিয়াছি, তাহা আমার অজ্ঞতামূলক বলিয়া মার্জনা করিবে ; রামচন্দ্র যাহাতে আমায় সত্বর বিপদ হইতে উদ্ধার করেন, দয়া করিয়া তাহা করিবে” । এই কথা বলিয়া সীতা মনে মনে কল্পনা করিতেও পারে না । শত যোজন বিস্তীর্ণ জলনিধি লজন করিতে কে সমর্থ হয় ? কে—বল রাক্ষসগণের রক্ষিত লঙ্গানগরীকে দুর্দশা, গ্রস্ত করিতে পারে ? হনুমান ভৃত্য-কার্য্য সম্পূর্ণরূপে করিয়াছে। সুগ্রীবের এই ভৃত্যুট যেমন, মহা দুঃখে রোদন করিতে লাগিলেন। ঐরাম! জগতে এরূপ কাহারও হয় নাই, হইবে না। হন, আমিও আপনার সমস্ত বিবরণ বলিয়া তাহাকে আশ্বাধিত করিলাম। রাম! অনস্তুর তাহার নিকট বিদায় লইয়া তোমার নিকট এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি। (ই ভাল কথা মনে হইয়াছে) মান আজ জানকী দর্শন করিয়া আমাকে, লক্ষ্মণকে, রঘুরাজের বংশকে এবং সুগ্রীবকে রক্ষা করিল।

  • "লিঙ্গন করিয়া রামচন্দ্র পরম প্রীতি লাঙ্ক করিলেন" এইরুপ অনুবাদ টকাকারের অনুমোদিত ।