পাতা:অধ্যাপক - সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ অধ্যাপক স্তর দিয়ে, ক্রমশঃ ধীরে ধীরে যায় বালু ধুতে ধুতে ; ক্রমশঃ অস্তর্দেশ দিয়ে ঢোকে জল, প্রবেশ করে গিয়ে গ্রামের প্রাঙ্গণ পর্য্যস্ত, বাইরে থেকে পাওয়া যায় না কোনও চিহ্ন। পাড়ের উপর খেলা করে ছেলেমেয়ের, চাষারযায় তার উপর দিয়ে নিরুদ্বেগে, গৃহস্থ বধূ দেয় তুলসী মঞ্চে তার প্রদীপ, সন্ধ্যায় কেরোসিন-কুপীর চারিদিকে বসে যায় গ্রাম্য বধূদের বৈঠক, চলে রামায়ণ পাঠ—সীতার বিবাহ। হঠাৎ দেখা দেয় গ্রামের মাঝখানে একটা ফাটল । তখন গ্রামবাসী বুঝতে পারে আর ভাঙ্গনের দেরী নেই। অতি দ্রুত গতিতে তারা সরে যায় গ্রামান্তরে, আর কোনও নিশীথ রাত্রিতে নিস্তব্ধ গ্রামের বুকখানি বজনির্ঘোষে পদ্মা করে গ্রাস। স্বকুমারের হৃদয়ের বালু কোন স্রোতে যে ধুয়ে যাচ্ছিল তা সে নিজেই টের পায় নি । কিন্তু মঞ্জরীকে কি সে ভালবাসে না ? মঞ্জরীর আকর্ষণ, মঞ্জরীর লাশুলীলাযুক্ত গতিভঙ্গী, তার উদাম রূপ, তার অযত্নকৃত খরস্পর্শ তার হৃদয়কে কি তরঙ্গিত করে তোলে নি ? আবার সে শক্ত হয়ে নিজের মনকে দিত বাধা । মঞ্জরীকে ভাল লাগে বৈ কি । কিন্তু এ হ’ল অন্য কথা । নৃত্যগীতের কলোৎসবে আমাদের চিত্ত আলোডিত হয়ে ওঠে বলে’ সে কি স্নিগ্ধভাবে মন্দিরের মঙ্গলারতির সামনে স্থির হয়ে বসতে পারে না ? কিন্তু স্বজাত ত তাকে ভালবাসে না । আবার মন বললে—ভালবাসে না বল কি করে, তার কি তুমি ছাড়া দ্বিতীয় গতি ছিল ? কোরক যখন ফোটে না তখন সে কি পরাগধূসর হয়ে ভ্রমরকে করতে পারে আমন্ত্রণ ? ভ্রমর আসে যায়, অপেক্ষা করে কখন কোরকের হৃদয় হবে বিকসিত । সেটিই হল আসল লগ্ন । তখন ছিল তার শিশুভাব, তার মাতৃভাব । কৃত্তিকারই স্নেহক্ষীরের ন্যায় সে ঢেলেছে কত না স্নিগ্ধ ভালবাসার ধার ! তার বলিষ্ঠ সেনানীতুল্য মুকুমারদা'র প্রতি এই কৃত্তিকার উদয় দেখে’