দূরে, গঙ্গামাটির উপরেই। তোমার বোতাম ঘরের ফুলটি খুব তাজা রয়েছে, সুতরাং বুঝতে পারলুম ওটি তুমি কলকাতা থেকে সঙ্গে ক'রে ওপারে নিয়ে যাওনি, তাহ'লে এতক্ষণে ফুলটি অল্পবিস্তর নেতিয়ে পড়ত। অতএব ফুলটিও তুলেছ অল্পক্ষণ আগে, গঙ্গার ওপারে গিয়েই—খুব সম্ভব, কলকাতায় ফেরবার সময়ে। আর বিলাতী মর্সুমী-ফুল ‘কার্নেশান’ তো ওপারের পথে-ঘাটে বনে-জঙ্গলে ফোটে না, সুতরাং ধ'রে নিলুম ওটি চয়ন করেছ তুমি কোন বাগান থেকেই। তোমার জুতোর গঙ্গামাটি এখনো শুকোবার সময় পায় নি। ঐ ভিজে মাটি দেখেই বুঝেছি, তুমি নৌকো থেকে নেমেই সিধে আমার বাড়ীতে এসে উঠেছ! দেখছ বন্ধু, একটু চেষ্টা করলেই মানুষ দেখে কত কথা আবিষ্কার করা যায়?”
আমি বললুম, “তুমি আশ্চর্য্য লোক, হেমন্ত! আমার সঙ্গে অনর্গল গল্প করতে করতে এত খুটিনাটি লক্ষ্য আর সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা করেছ!”
হেমন্ত বললে, “সবই অভ্যাসের ওপরে নির্ভর করে। আর মানুষের মন আর মুখ এক নয়। সে মুখে যখন এক কথা বলে, তার মন তখন অন্য কথা ভাবতে পারে।"
আমি বললুম, “কিন্তু চা কই—আমার চা?...এই মধু! জল্দি এক কাপ্ চা নিয়ে আয়!” মধু হচ্ছে হেমন্তের চাকরের নাম।
হেমন্ত বললে, “দালানে পায়ের শব্দ শুনছি। যখন খবর না দিয়েই আসছে, নিশ্চয় তখন চেনা লোক!”
১৬