পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুৰ্গা হাসিমুখে বলিল-একটা ছড়া জানিস?--পিসি বলতো, বালুচরের বালুর চ’রে একটা কথা কই-- মোষের পেটে ময়ুর ছানা দেখে এলাম সই। পথের পাঁচালী অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ অপু কাউকে একথা এখনো বলে নাই-তাহার দিদিকেও না। সেদিন চুপি চুপি দুপুরে সে যখন তাহার বাবার ঐ বই-বোঝাই কাঠের সিন্দুকটা লুকাইয়া খুলিয়াছিল, সিন্দুকটার মধ্যে একখানা বইএর মধ্যেই এই অদ্ভুত কথাটার সন্ধান পাইয়াছে। উঠানের উপর বঁাশঝাড়ের ছায়া তখন পূর্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ হয় নাই, ঠিকদুপুরে সোনাডাঙার তেপান্তর মাঠের সেই প্রাচীন অশ্বখ গাছের ছায়ার মত এক জায়গায় একরাশ ছায়া জমাট বাধিয়া ছিল । একদিন সে দুপুরবেলা বাপের অনুপস্থিতিতে ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া চুপি চুপি বইয়ের বাক্সটা লুকাইয়া খুলিল। অধীর আগ্রহের সহিত সে এ-বই ও-বই খুলিয়া খানিকটা করিয়া ছবি দেখিতে এবং খানিকটা করিয়া বইএর মধ্যে ভাল গল্প লেখা আছে কিনা দেখিতে লাগিল । একখানা বইয়ের মলাটি খুলিয়া দেখিল নাম লেখা আছে। ‘সর্ব-দৰ্শন-সংগ্রহ' ! ইহার অর্থ কি, বইখানা কোন বিষয়ের তাহা সে বিন্দুবিসৰ্গও বুঝিল না। বইখানা খুলিতেই একদল কাগজ-কাটা পোকা নিঃশব্দে বিবর্ণ মার্বেল কাগজের নীচে হইতে বাহির হইয়া উধ্বশ্বাসে যেদিকে দুই চোখ যায় দৌড় দিল । অপু বইখানা নাকের কাছে লইয়া গিয়া ভ্রাণ লইল, কেমন পুরানো গন্ধ! মেটে রঙের পুরু পুরু পাতাগুলার এই গন্ধটা তাহার বড় ভাল লাগে- গন্ধটায় কেবলই বাবার কথা মনে করাইয়া দেয়। যখনই এ গন্ধ সে পায় তখনই কি জানি কেন তাহার বাবার কথা মনে পড়ে! অত্যন্ত পুরানো মার্বেল কাগজের বাধাই করা মলাটের নানাস্থানে চটা উঠিয়া গিয়াছে। এই পুরানো বইএর উপরই তাহার প্রধান মোহ। সেইজন্য সে বইখানা বালিশের তলায় লুকাইয়া রাখিয়া অন্যান্য বই তুলিয়া বাক্স বন্ধ করিয়া দিল । লুকাইয়া পড়িতে পড়িতে এই বইখানিতেই একদিন সে পড়িল বড় অদ্ভুত কথাটা । হঠাৎ শুনিলে মানুষ আশ্চর্য হইয়া যায় বটে-কিন্তু ছাপার অক্ষরে معشقشناسی