পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুগীর বামুন বলিয়া পাড়ায় জল খাইতে চাহিলে লোকে ঘটিতে করিয়া জল খাইতে দেয়; তাহাও আবার মাজিয়া দিতে হয়! বিনি দু-একবার ইতস্তত করিয়া অপুর গ্লাসটা দেখাইয়া বলিল-আমার গাসে একটু জল ঢেলে দেও তো অপু ? জল তেষ্টা পেয়েছে! অপু বলিল-নাও বিনি দি, তুমি নিয়ে চুমুক দিয়ে খাও না ! তবু যেন বিনির সাহস হয় না। দুৰ্গা বলিল-নে না বিনি, গেলাসটা নিয়ে খা না ! খাওয়া-দাওয়া হইয়া গেলে দুৰ্গা বলিল-হাড়িটা ফেলা হবে না। কিন্তু, আবার আর-একদিন বনভোজন করবো-কেমন তো ? ওই কুলগাছটার ওপরে টাঙিয়ে রেখে দেবো ? অপু বলিল-হঁ্যা, ওখানে থাকবে কিনা ? মাতোর মা কাঠ কুড়োতে আসে, দেখতে পেলে নিয়ে যাবে দিদি-ভোরি চোর একটা ভাঙা পাচিলের ঘুলঘুলির মধ্যে ছোবাটা দুৰ্গা রাখিয়া দিল । অপুর বুক টিপ, টিপ করিতেছিল। ঐ ঘুলঘুলিটার ওপিঠে আর একটা ছোট ঘুলঘুলি আছে, তাহার মধ্যে অপু লুকাইয়া চুরুটের বাক্স রাখিয়া দিয়াছে, দিদি সেদিকে যদি যাইয়া পড়ে ! নেড়াদের বাড়ীতে কিছুদিন আগে নেড়ার ভগ্নীপতি ও তাহার এক বন্ধু আসিয়াছিল। কলিকাতার কাছে কোথায় বাড়ী। খুব বাবু, খুব চুরুট খায়। এই একবার খাইল, আবার এই খাইতেছে। অপুর মনে মনে অত্যন্ত ইচ্ছা! হইয়াছিল। সেও একবার চুরুট খাইয়া দেখিবে, কেমন লাগে। সে নেড়ার সঙ্গে পরামর্শ করিয়া গ্রামের হরিশ যুগীর দোকান হইতে তিন পয়সার রাঙা কাগজে মোড়া দশটি চুরুট কিনিয়া আনে। সেদিন এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে এক বসিয়া চুপি চুপি একটা চুরুট ধরাইয়া খাইয়াছিল-ভাল লাগে নাই, তেতো, তেতো, কেমন একটা বাঁজ-দুটান খাইয়া সে আর খাইতে পারে। নাই, কিন্তু তাহার ভাগের বাকী চারটি চুরুট সে ফেলিয়াও দিতে পারে নাই, নেড়ার ভগ্নীপতির নিকট সংগৃহীত একটি খালি চুরুটের বাক্সে সে-কয়টি সে ওই পোড়োভিটার জঙ্গলে ভাঙা পাচিলের ঘুলঘুলিতে লুকাইয়া রাখিয়া দিয়াছে! প্রথম চুরুট খাইবার দিন চুরুট টানা শেষ হইয়া গেলে ভয়ে তাহার বুকের মধ্যে কেমন করিয়া উঠিতেছিল, পাছে মুখের গন্ধ মা টের পায়। পাকাকুল অনেক করিয়া খাইয়া নিজের মুখের হাই হাত পাতিয়া ধরিয়া অনেকবার পরীক্ষা করিয়া তবে সে সেদিন পুনর্বার মনুষ্য-সমাজে প্রবেশ করিয়াছিল। ষায় বুঝি আজ বামালম্বুদ্ধ ধরা পড়িয়া ! S@尊