পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা মনে আসিয়া তাহার চোখ জলে ভিজিয়া যায়। এই রকম কত ছড়া যে পিসিমা বলিত । খোকা দেখিতে পাড়ার লোক ভাঙিয়া আসে । সকলে দেখিয়া বলে, ঘর-আলো-করা খোকা হয়েছে, কি মাথার চুল, কি রং । বলাবলি করিতে করিতে যায়-কি হাসি দেখোচ ন-দি ? খুকী কেবল ভাবে, তাহার পিসিমা একবার যদি আসিয়া দেখিত! সবাই দেখিতেছে, আর তাদের পিসিমাই কোথায় গেল চলিয়া-আর কখনো ফিরিয়া আসিবে না ? সে ছেলেমানুষ হইলেও একটু বুঝিয়াছে যে, এ বাড়িতে বাবা কি মা কেহই পিসিমাকে ভালবাসে না, তাহাকে আনিবার জনা কেহ গা করিবে না। দিনমানে পিসির ঘরের দিকে চাহিলে মন কেমন করে, ঘরের কবাটটা এক একদিন খোলাই পডিয়া থাকে। দাওয়ায় চামচিকার নাদি জমিয়াছে। উঠানে সে রকম আর ঝাট পড়ে না, এখানে শেওড়ার চারা, ওখানে কচু গাছ—পিসিম বুঝি হইতে দিত। খুকীর বড় বড় চোখ জলে ভরিয়া যায় - -সেই ছড়া, সেই সব গল্প খুকী কি করিয়া ভোলে ? সেদিন হরি পালিতের মেয়ে আসিয়া তাহার মাকে বলিল, তোমাদের বুড়ী ঘাটের পথে দেখি মাঠের দিক থেকে একটা ঘটি আর পুটুলি হাতে করে আসছে-(এসে চকোক্তি মশায়দের বাডিতে ঢুকে বসে আছে, যাও দুগগাকে পাঠিয়ে দাও, হাত ধরে ডেকে আনুক, তাহ’লে রাগ পড়বে এখন হরি পালিতের বাড়ী বসিয়া বুভী তখন পাড়ার মেয়েদের মুখে হরিহরের ছেলে হওয়ার গল্প শুনিতেছিল । ও পিতি । বুড়ী চমকিয়া চাহিয়া দেখিল দুৰ্গা হাপাইতেছে, যেন অত্যন্ত ছুটয়া আসিয়াছে। বুড়ী ব্যগ্রভাবে দুর্গাকে হাত বাডাইয়া ধরিতে গেলি-সঙ্গে সঙ্গে দুৰ্গা কঁপাইয়া বুড়ীর কোলে পডিল—তাহার মুখে হাসি। অথচ চোখে জলউঠানে বি-বউ যাহারা উপস্থিত ছিলেন, অনেকের চোখে জল আসিল । প্রবীণা হরিপালিতের স্ত্রী বলিলেন-নেও ঠাকুরবি, ও তোমার আর জন্মে মেয়ে ছিল, সেই মেয়েই তোমার আবার ফিরে এসেছে বাড়ি আসিলে খোকাকে দেখিয়া তো বুড়ী হাসিয়া কঁাদিয়া সারা হইল। কতদিন পরে ভিটায় আবার চাদ উঠিয়াছে। বুড়ী সকালে উঠিয়া মহা খুশিতে ভিতর উঠানে বাট দেয়, আগাছার জঙ্গল পরিষ্কার করে । দুর্গার মনে হয় এতদিনে আবার সংসারটা যেন ঠিকমত চলিতেছে, এতদিন যেন কেমন ঠিক ছিল না। S8