পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেয়। খানিকটা চুপ করিয়া বসিয়া থাকে, আপন মনে বলে, আজ খুব ভাল আছি, আজ আর জর আসবে না। আমার-ওবেলা দুখানা রুটি আর আলুভাজা খাবো। একটু পরে হাই ওঠে, সে জানে ইহা জর আসার পূর্বলক্ষণ ! তবুও, সে মনকে বোঝায়, হাই উঠুক, এমনি তো হাই ওঠে, জর আর হবে না। ক্রমে শীত করে, রৌদ্রে গিয়া বসিতে ইচ্ছা হয়। সে রৌদ্রে না গিয়া মনকে প্রবোধ দেয় যে, শীত বোধ হওয়া একটা স্বাভাবিক শারীরিক ব্যাপার, জর আসার সহিত ইহার সম্পর্ক কি ? কিন্তু কোনো প্রবোধ খাটে না । রৌদ্র না পড়িতে পড়িতে জর আসে, সে লুকাইয়া গিয়া রৌদ্রে বসে, পাছে মা টের পায়। তাহার মন হু-হু করে, ভাবে -জরি জর ভেবে এরকম হচে, সত্যি সত্যি জর হয় নি রাঙা রোদ শেওলাধরা ভাঙ্গা পাচিলের গায়ে গিয়া পড়ে। বৈকালের ছায়া ঘন হয়। দুর্গার মনে হয়। অন্যমনস্ক হইয়া থাকিলে জর চলিয়া যাইবে। অপুকে বলে, বোস দিকি একটু আমার কাছে, আয় গল্প করি। একদিন আর-বছর ঘন বর্ষার রাতে সে ও অপু মতলব আঁটিয়া শেষরাত্রে পিছনে সেজঠাকুরুণদের বাগানে তাল কুড়াইতে গিয়াছিল, হঠাৎ দুর্গার পায়ে পটু করিয়া এক কঁাটা ফুটিয়া গেল। যন্ত্রণায় পিছু হটয়া বা পা খান যেখানে রাখিল, সেখানে বঁা পায়েও পটু করিয়া আর একটা !-সিকাল বেলা দেখা গেল, পাছে রাত্রে উহার কেহ তাল কুড়াইয়া লয়, এজন্য সতু তালতলার পথে সোজা করিয়া সারি সারি বেলকঁাটা পুতিয়া রাখিয়াছে। আর একদিন যা আশ্চর্য ব্যাপার ! কোথা লইতে সেদিন এক বুড়ে বাঙালি মুসলমান একটা বড় রং-চং করা কাচ বসানো টিনের বাক্স লইয়া খেলা দেখাইতে আসে। ওপাড়ায় জীবন চৌধুরীর উঠানে সে খেলা দেখাইতেছিল। দুৰ্গা পাশেই দাড়াইয়াছিল। তাহার পয়সা ছিল না । আর সকলে এক এক পয়সা দিয়া বাক্সের গায়ে একটা চোঙের মধ্যে চোখ দিয়া সব দেখিতেছিল। বুড়ে মুসলমানটি বাক্স বাজাইয়া সুর করিয়া বলিতেছিল, তাজ বিবিকা রোজা দেখো, হাতী বাঘক লড়াই দেখো ! এক একজনের দেখা শেষ হইলে যেমন সে চােঙ হইতে চােখ সরাইয়া লইতেছিল অমনি দুর্গা তাহাকে মহা আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিতেছিল, কি দেখলি রে ওর মধ্যে ? সব সত্যিকারের ? উঃ । সে কি অপূর্ব ব্যাপার দেখিয়াছে তাহা তাহারা বলিতে পারে না ! কিসে সব ! | 3 ዓ •