পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্ধকারে মেঘে আকাশে-বাতাসে গাছপালায় সব একাকার! ঝড়বৃষ্টির শব্দে আর কিছু শোনা যায় না। এই হিংস্র অন্ধকার ও ক্রুর ঝটিকাময়ী রজনীর আত্মা যেন প্রলয়দেবের দূতরূপে ভীম। ভৈরব বেগে সৃষ্টি গ্রাস করিতে ছুটয়া আসিতেছে-অন্ধকারে, রাত্রে, গাছপালায়, আকাশে, মাটিতে তাহার গতিবেগ বাধিয়া শব্দ উঠিতেছেসু-ই-শ-সু-উ-উ-ইশ-সু-উ-উ-উ-ইশ -এই শব্দের প্রথমাংশের দিকে বিশ্বগ্রাসী দূতটা যেন পিছু হটয়া বলসঞ্চয় করিতেছে-সু-উ-উ এবং শেষের অংশটায় পৃথিবীব উচ্চ নীচ তাবৎ বায়ুস্তর আলোডন, মন্থন করিয়া বায়ুস্তরে বিশাল তুফান তুলিয়া তাহার সমস্ত আসুরিকতার বলে সর্বজয়াদের জীর্ণ কোঠােটাৰ পিছনে পাক্কা দিতেছে ই-ই-শ্য ! কোঠা দুলিয়া দুলিয়া উঠিতেছে, আব্ব থাকে না । ইহার মধ্যে যেন কোন অধীরতা, বিশৃঙ্খলতা, ভ্রমন্দ্রান্তি নাই--- যেন দৃঢ়, অভ্যস্ত, প্রণালীবদ্ধ ভাবের কর্তব্য কার্য । বিশ্বটাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চূর্ণ কবিয়া উড়াইযা দেওয়ার ভার যে লইয়াছে, যুগে যুগে এরকম কত হাস্যমুখী সৃষ্টিকে বিধ্বস্ত করিয়া অনন্ত আকাশের অন্ধকারে তারাবাজির মত ছডাইয়া দিয়া আসিয়াছে যে মহাশক্তিমান ধ্বংসদূত-এ তার অভ্যস্ত কার্য এতে তার অধীরতা ठन्मख७1 जIख न আতঙ্কে সর্বজয়া দোর বন্ধ কবিয়া দিল-আচ্ছা, যদি এখন একটা কিছু ঘরে ঢোকে ? মানুষ কি অন্য কোনো জানোয়াবা ? চারদিকে ঘন বঁাশবন, জঙ্গল, লোকজনের বসতি নাই-মাগো । জলের ছাটে ঘর ভাসিয়া যাইতেছে । হাত দিয়া দেখিল ঘুমন্ত অপুর গা জলে ভিজিয়া ন্যাত হইয়া যাইতেছে- সে কি করে ? আর কত স্নাত আছে ?-সে বিছানা হাতড়াইয়া দেশলাই খুজিয়া কেরোসিনের ডিবাটা জালে। ডাকে-ও অপু ওঠ, তো ? শুনছিস, ও অপু? ওঠা দিকি। দুৰ্গাকে বলে-পাশ ফিরে শো তো দুগগ। বড় জল পড়ছে-একটু স’রে পাশ ফের দিকি অপু উঠিয়া বসিয়া ঘূমচােখে চারিদিকে চায়-পরে আবাৰ শুইয়া পড়ে। হুড়ুম করিয়া বিষম কি শব্দ হয়, সর্বজয়া তাড়াতাডি আবার দুয়ার খুলিয়া যাক্টিরের দিকে উকি মারিয়া দেখিল-বঁাশবাগানের্ব দিকটা কঁকা ফাকা দেখাইতেছে-রান্নাঘরের দেওয়াল পিডিয়া গিয়াছে !!--তাহার বুক কঁপিয়া ওঠে-এইবার বুঝি পুরানো কোঠাট-? কে আছে, কাহাকে সে এখন ডাকে ? মনে মনে বলে-হে ঠাকুর, আজকের রাতটা কোনো রকমে কাটিয়ে --দাও, হে ঠাকুর, ওদের মুখেয় দিকে তাকাও তখনও ভাল করিয়া ভোর হয় নাই, বড় থামিয়া গিয়াছে কিন্তু বৃষ্টি তখনও