পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঁটা লজেঞ্ছস আছে ?--পরে বোতল হইতে গোটাকতক বাহির করিয়া মুখে পুরিয়া দেয়। ভাবে, আসছে মাসের টাকা পেলে ঐ যে আনারসের একরকম আছে, তাই কিনে আনবো এক শিশি-কি চমৎকার। এগুলো খেতে ! এ ধরণের ফলের আস্বাদযুক্ত লজেঞ্জুস সে আর কখনও খায় নাই ! কম্পাউণ্ডে নামিয়া লাইব্রেরীর কোণটা দিয়া যাইতে সে হঠাৎ অবাকৃ হইয়া দাড়াইয়া গেল। একজন বেঁটে-মত লোক ইদারার কাছে দাড়াইয়া স্কুলের কেরাণী ও বোডিং-এর বাজার-সরকার গোপীনাথ দত্তের সঙ্গে আলাপ করিতেছে । তাহার বুকের ভিতরটা কেমন ছ্যাৎ করিয়া উঠিল-সে কিসের টানে যেন লোকটার দিকে পায়ে পায়ে আগাইয়া গেল।--লোকটা এবার তাহার দিকে মুখ ফিরাইয়াছো-হাতটা কেমন বঁাকাইয়া আছে, তখনি কথা শেষ করিয়া সে ইদারার পাডের গায়ে ঠেস দেওয়ানো ছাতাটা হাতে লইয়া কম্পাউণ্ডের ফটক দিয়া বাহির হইয়া গেল । অপু খানিকক্ষণ একদৃষ্টি সেদিকে চাহিয়া বহিল। লোকটাকে দেখিতে অবিকল তাহার বাবার মত । কতদিন সে বাবার মুথ দেখে নাই । আজ চার বৎসর । উদগত চোখের জল চাপিয়া জবাতলায় গিয়া যে গাছের ছায়ায় চুপ৷ করিয়া বসিল । অন্যমনস্কভাবে বইখানা সে উল্টাইয়া যায়। তাহার প্রিয় সেই তিন-রঙা ছবিটা বাহির করিল, পাশের পৃষ্ঠায় সেই পদ্যটা। স্বদেশ হইতে বহুদূরে, আত্মীয়স্বজন হইতে বহুদূরে, আলজিরিয়ার কর্কশ, বন্ধুর, জলহীন মরুপ্রান্তে একজন মুম্ষু তরুণ সৈনিক বালুশয্যায় শায়িত। দেখিবার কেহ নাই। কেবল জনৈক সৈনিকবন্ধু পাশে হাটু গাড়িয়া বসিয়া মুখে চামড়ার বোতল হইতে একটু জল দিতেছে। পৃথিবীর নিকট হইতে শেষ বিদায় লইবার সময় সম্মুখের এই অপরিচিত, ধূসর উঁচুনিচু বালিয়াড়ি, পিছনের আকাশে সান্ধ্যসূর্যরক্তচ্ছটাি, দূরে খজুরকুঞ্জ ও উধ্বমুখ উষ্ট্ৰশ্রেণীর দিকে চোখ রাখিয়া মুমূর্ষু সৈনিকটির কেবলই মনে পড়িতেছে বহুদূরে রাইন নদীতীরবর্তী তাহার জন্মপল্পীর কথা।--তাহার মা আছেন সেখানে। বন্ধু, তুমি আমার মায়ের কাছে খবরটা পৌছাইয়া দিও, তুলিও না।-- For my home is in distant Bingen, Fair Bingen on the Rhine . . . মাকে অপু দেখে নাই আজ পাঁচ মাস - সে আর থাকিতে পারে মা--