পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহার মাথায় এক খেয়াল আসিয়া গেল। পরদিন সে বাকী টাকা হাতে বৈকালে আসিয়া চোরাবাজারে ঢুকিল। মনে ভাবিল-এইবার একটু ভাল ভাবে থাকবো, ওরকম গোয়াল ঘরে থাকতে পারি নে-যেমন নোংরা তেমনি অন্ধকার। প্রথমেই সে ফুলদানিজোড়া কিনিল । দোয়াতদানের উপর অনেকদিন হইতে ঝোক, সেটিও কিনিল। একটা জাপানী পর্দা, খানচারেক ছবি, খানকতক প্লেট, একটা আয়না, ঝুটা পাথর-বিসানো ছোট একটা আংটি । ছেলেমানুষের মত আনন্দে শুধু জিনিষগুলিকে দখলে আনিবার ঝোঁকে যাহাই চােখে ভাল লাগিল, তাহাই কিনিল। দাও বুঝিয়া দু’একজন দোকানদার বেশ ঠিকাইয়াও লইল । ডাবল-উইকের একটা পিতলের টেবিলল্যাম্প পছন্দ হওয়াতে দোকানীকে জিজ্ঞাসা করিল,-এটার দাম কত ? দোকানী বলিল,- সাডে তিন টাকা। অপুর বিশ্বাস এ-রকম আলোর দাম পনেরো ষোল টাকা । এরূপ মনে হওয়ার একমাত্র কারণ এই যে, অনেকদিন আগে লীলাদের বাড়ি থাকিবার সময় সে এই ধরণের আলো লীলার পডিবার ঘরে টেবিলে জ্বলিতে দেখিয়াছিল । সে বেশী দর কষিতে ভরসা করিল না, চার আনা মাত্র কমাইয়া তিন টাকা চার আনা মূল্যে সেই মান্ধাতার আমলের টেবিল ল্যাম্পটা মহা খুশীর সহিত কিনিয়া ফেলিল ! মুটের মাথায় জিনিসপত্র চাপাইয়া সে সোৎসাহে ও সাগ্রহে সব বাসায় আনিয়া হাজির করিল ও সারাদিন খাটিয়া ঘরদোর কাট দিয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়া ছবিগুলি দেওয়ালে টাঙ্গাইল, সস্তা জাপানী পর্দাটা দরজায় ঝুলাইল, আয়নাটাকে গজাল আঁটিয়া বসাইল, ফুলদানির জন্য ফুল কিনিয়া আনিতে ভুলিয়া গিয়াছিল, সেগুলিকে ধুইয়া মুছিয়া আপাতত: জানালার ধারে রাখিয়া দিল, দোয়াতদানটা তেঁতুল দিয়া মাজিয়া ঝাকৃঝকে করিয়া রাখিল । বাহিরে অনেকদিনের একটা খালি প্যাকবাক্স পডিয়াছিল। সেটা ঝাড়িয়া মুছিয়া টেবিলে পরিণত করিয়া সন্ধ্যার পর টেবিল ল্যাম্পটা সেটার উপর রাখিয়া পড়িতে বসিল। বই হইতে মুখ তুলিয়া সে ঘন ঘন ঘরের চারিদিকে খুশীর সহিত চাহিয়া দেখিতেছিল-ঠিক একেবারে যেন বড়লোকদের সাজানো ঘর। ছবি, পর্দা, ফুলদানি, টেবিল-ল্যাম্প সব -এতদিন পয়সা ছিল না, হয় নাই। কিন্তু এইবার কেন সে মহিষের মত বিলের কাদায় লুটাইয়া পড়িয়া থাকিতে যাইবে ? বাহাদুরি করিবার ঝোঁকে পরদিন সে ক্লাসের বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়া নিজের ঘরে খাওয়াইল-প্রণব, জানকী, সতীশ, অনিল এমন কি সেণ্ট জেভিয়ার কলেজের সেই ভূতপূর্ব ছাত্র চালাবাজ মন্মথকে পর্যন্ত । মন্মথ ঘরে চুকিয়া বলিল-হুরূরে!'-আরে আমাদের অপূর্ব এসব করেছে। S SV)