পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উহাকে কোন অনন্ত হইতে সৃষ্টি করিয়াছে।--তাহার পর সংসারে আনিয়া অবোধ নিষ্পাপ বালককে একা এভাবে সংসারে ছাডিয়া দিয়া পালানো কি অপর্ণাই সন্থা করিবে ? কিন্তু এখন কোথায়ই বা লইয়া যায় ? প্রাচীন গ্রীসের এক সমাধির উপর সেই যে স্মৃতিফলকটির কথা সে পড়িয়াছিল। ফ্রেডরিক হ্যারিসনের বই-এ- This child of ten years Philip, his father laid here His great hope, Nikoteles. সে দূর কালের ছোট্ট বালকটির সুন্দর মুখ, সুন্দর রং, দেব-শিশুর মত সুন্দর দৃশ বৎসরের বালক নিকোটিলিসকে আজ রাত্রে যেন নির্জন প্রান্তরে খেলা করিতে দেখিতে পাইতেছে--সোনালী চুল, ডাগর ডাগর চােখ। তাহার স্নেহস্মৃতি গ্রীসেব নির্জন প্রান্তরের সমাধিক্ষেত্রের বুকে অমর হইয়া আছে। শত শতাব্দী পূর্বে সেই বিরহী পিতৃ-হৃদয়ের সঙ্গে সে যেন আজ নিজের বাড়ীর যোগ অনুভব কবিল। মনে হইল, মানুষ সব কালে, সব অবস্থায় এক, এক । কিংবা “দেবতার মন্দির-দ্বারে আরোগ্যকামী বহু যাত্রী জড হইয়াছে নানা দিকৃদেশ হইতে-ছোট ছেলেটি গরীব বাবা তাহাকে আনিয়াছে "ছেলেটি অসুখে ভোগে, রুগণ, স্বপ্নে দেবতা আসিয়া বলিলেন --যদি তোমার রোগ সারিয়ে দিই, আমায় কি দেবে ইউফেনিস? উঃ, সত্যি ! অসুখ সারিলে বঁাচে 1 ছেলেটি উৎসাহের সুরে বলিল-দশটা মার্বেল আমার আছে, সব কটাই দিয়ে দেব-দেবতা খুশীর সুরে বলিলেনস-ব ক-টা ! বলে কি ?--বেশ বেশ, রোগ সারিয়ে দেব তোমার। বাৎসল্যরসের এমন গভীর অনুভূতি জীবনে তাহার এই প্রথম -- অনেক দিন পরে উপরের ঘরটাতে শুইল। সেই তাহার ফুলশয্যার খাটটাতে। কাজল পাশেই ঘুমাইতেছে-কিন্তু কত রাত পর্যন্ত তাহার নিজের ঘুম আসিল না। জানালার বাহিরে চাহিয়া চাহিয়া কি ভাবিতে লাগিল। গত পাঁচ ছয় বৎসর বিদেশে সম্পূর্ণ অন্য ধরণের জীবনযাত্রা ও নবতর অনুভূতিরাজির ফলে পুরাতন দিনের অনেক অনুভূতিই অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে-এখানকার তো আরও, কারণ আট নয়। বৎসর এখানকার জীবনের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ যোগ নাই। তাই আজ এই চিলে-কোঠার বহু পরিচিত ঘরটা, এই পালঙ্কটা, ঐ সুপারি বনের সারি-এসব যেন স্বপ্ন বলিয়া মনে হইতেছে। ঠিক আবার পুরানো দিনের মত জ্যোৎস্না উঠিয়াছে, ঠিক সেই সব দিনের মত নাটমন্দির হইতে নৈশ কীর্তনের খোলের আওয়াজ আসিতেছে vév