পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফুটপাতে একজন ভিখারী বসিয়া। কাজল ভয়ের সুরে বলিল-শিগগির একটা পয়সা দাও বাবা, নইলে ছুয়ে দেবে-তাহার বিশ্বাস, কলকাতার যেখানে যত ভিখারী বসিয়া আছে ইহাদের পয়সা দিতেই হইবে, নতুবা ইহারা আসিয়া ছুইয়া দিবে, তখন তোমাকে বাড়ি ফিরিয়া স্নান করিতে হইবে, সন্ধ্যাবেলা কাপড ছাডিতে হইবে।-সে এক মহা হাঙ্গামা । বর্ষাকালের মাঝামাঝি অপুর চাকরিটি গেল। অর্থের এমন কষ্ট সে অনেক দিন ভোগ করে নাই। ভাল স্কুলে দিতে না পারিয়া সে ছেলেকে কর্পোরেশনের ফ্রি স্কুলে ভতি করিয়া দিল । ছেলেকে দুধ পর্যন্ত দিতে পাবে না, ভাল কিছু খাওয়াইতে পারে না । বইয়ের বিশেষ কিছু আয় নাই। হাত এদিকে একেবারে কপর্দকশূন্য। কাজলের মধ্যে অপু একটা পৃথক জগৎ দেখিতে পায়। দু’টা টিনের চাকতি, গোটা দুই মার্বেল, একটা কল টেপা খেলনা, মোটর গাড়ি, খান দুই বই হইতে যে মানুষ কিসে এত আনন্দ পায়-অপু ত্যাহা বুঝিতে পারে না । চঞ্চল ও দুষ্ট ছেলে-পাছে হারাইয়া যায়, এই ভয়ে অপু তাহাকে মাঝে মাঝে ঘরে চাবি দিয়া রাখিয়া নিজের কাজে বাহির হইয়া যায়-এক একদিন চার পাঁচ ঘণ্টাও হইয়া যায়--কাজলের কোনো অসুবিধা নাই-সে। রাস্তার ধারের জানালাটায় দাড়াইয়া পথের লোকজন দেখিতেছে-না হয়, বাবার বইগুলো নাড়িয়া চাড়িয়া ছবি দেখিতেছে-মোটের উপর বেশ আনন্দেই আছে। এই বিরাট নগরীর জীবনস্রোত কাজলের কাছে অজানা দুর্বোধ্য। কিন্তু তাহার নবীন মন ও নবীন চক্ষু যে-সকল জিনিস দেখে ও দেখিয়া আনন্দ পায়। -বয়স্ক লোকের ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাহা অতি তুচ্ছ । হয়তো আঙল দিয়া দেখাইয়া বলে-দ্যাখো বাবা, ওই চিলটা একটা কিসের ডাল মুখে ক’রে নিয়ে যাচ্ছিল, সামনে ছাদের আলসেতে লেগে ডালটা-ওই দ্যাখো বাবা রাস্তায় পড়ে গিয়েছে বাবার সঙ্গে বেড়াইতে বাহির হইয়া এত ট্রাম, মোটর, লোকজনের ভিড়ের মাঝখানে কোথায় একটা কাক ফুটপাতের ধারে ড়েনের জলে স্নান করিতেছে তাই দেখিয়া তাহার মহা আনন্দ-তােহা আবার বাবাকে না দেখাইলে কাজলের মনে তৃপ্তি হইবে না। সব বিষয়েই বাবাকে আনন্দের ভাগ না দিতে পারিলে, কাজলের যেন আনন্দ পূর্ণ হয় না। থাইতে খাইতে বেগুনিটা, কি তেলে-ভাজী S Rye