পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিনে দিনে এমন অদ্ভুত ধরণের উচ্ছসিত প্রাচুর্য্যে বাড়িয়া চলিয়াছে ? কেন পৃথিবীটা, পৃথিবী নয়-সারা বিশ্বট, সারা নাক্ষত্রিক বিশ্বটা এক অপরূপ রঙে তাহার কাছে রঙীন ? আর দিনে দিনে এ কি গহন গভীর রহস্য তাহাকে মুগ্ধ করিয়া প্রতি বিষয়ে আতি তীব্রভাবে সচেতন করিয়া দিতেছে ?-- সে দেখিতে পায় তার ইতিহাস, তার এই মনেব আনন্দের প্রগতির ইতিহাস, তার ক্রমবর্ধমান চেতনার ইতিহাস । এই জগতের পিছনে আর একটা যেন জগৎ আছে। এই দৃশ্যমান আকাশ, পাখির ডাক, এই সমস্ত সংসার-জীবন-যাত্রা-তারই ইঙ্গিত আনে মাত্র-দূর দিগন্তের বহুদূর ওপারে কোথায় যেন সে জগৎটা-পিয়াজের একটা খোসার মধ্যে যেমন আর একটা খোসা তার মধ্যে আর একটা খোসা, সেটাও তেমনি এই আকাশ, বাতাস, সংসারের আবরণে কোথাও যেন ঢাকা আছে, কোন জীবন-পারের মনের পারের দেশে । স্থির সন্ধ্যায় নির্জনে একা কোথাও বসিয়া ভাবিলেই সেই জগৎটা একটু একটু নজরে আসে। সেই জগতটার সঙ্গে যোগ-সেতু প্রথম স্থাপিত হয় তার বাল্যে-দিদি যখন মারা যায়। তারপর অনিল-মা-অপর্ণা-সর্বশেষে লীলা । দুস্তর অশ্রু পারাবার সারাজীবন ধরিয়া পাডি দিয়া আসিয়া আজ যেন বহু দূরে সে-দেশের তালীীবনরেখা অস্পষ্ট নজরে আসে । আজ গোলদীঘির বেঞ্চিখানায় বসিয়া তাই সে ভাবিয়া দেখিল, অনেক দিন আগে তার বন্ধু অনিল যে-কথা বলিয়াছিল, এ জেনারেশনের হাত হইতে কাজের ভার লওয়া-আর সবাই তা লইয়াছে, তার সকল সহপাঠীই এখন 'জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত, দিকে দিকে জীবনের সকল কর্মক্ষেত্রে তারা নামিয়া পডিয়াছে, কেবল ভবঘুরে হইয়াছে সে ও প্রণব। কিন্তু সত্য কথা সে বলিবে ? মন তার কি বলে ? তার মনে হয় সে যাহা পাইয়াছে জীবনে, তাহাতেই তার জীবন হইয়াছে সার্থক। সে চায় না। অর্থ, চায় না-কি সে চায় ? সেটাও তো খুব স্পষ্ট হইয়া উঠে না । সে কি অপরূপ জীবন-পুলক এক একদিন দুপুরের রোদে ছাদটাতে সে অনুভব করে, তাকে অভিভূত উত্তেজিত করিয়া তোলে, আকাশের দিকে উৎসুক চোখে চাহিয়া থাকে, যেন সে দেববাণীর প্রত্যাশা করিতেছে । • • • কাজল কি একটা বই আগ্রহের সঙ্গে পড়িতেছিল-অপু ঘরে ঢুকিতেই চোখ তুলিয়া ব্যগ্র উৎসাহের স্বরে উজ্জলমুখে বলিল-ও, কি চমৎকার গল্পটা বাবা।--শোনো না বাবা--(এখানে বসে- পরে সে আরও কি সব বলিয়। -2a