পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতিভূষণ W3 কাজলের পশ্চাৎপট। ১৯৪০ সনের ৩রা ডিসেম্বর আমার বিয়ে হয়। সে সময়ে উনি ৪১ নম্বর মির্জাপুর স্ত্রীটের ‘প্যারাডাইস লজে' থাকতেন। আমার বিয়ের প্রায় এক বছর পবে ঐ মেসের বাস তিনি উঠিয়ে দেন। ঐ, মেসে ছিলেন উনি বহুদিন, কাগজ-পত্র বই-খাতা জিনিসপত্র জন্মেছিল ওখানে অপর্যাপ্ত। মেসের বাস যখন তুলে দেন তখন তার কিছু জিনিস উনি পাঠিয়ে দেন। ঘাটশীলায়, কিছু আমাদের দেশের বাড়ী গোপালনগর বারাকপুরে। ঘাটশীলায় যে ঘরে আমি শুতাম তার পায়ের দিকের দেওয়ালে টাঙানো ছিল। ভাবী সুন্দর একটি শিশুর ছবি, অপূর্ব ছবিটি। খয়েরী রংয়ের সঙ্গে সাদা মেশানো বিলিতি ছবি। নীচে ইংরেজীতে ছবিটির নাম লেখা ছিল ‘বাবলাস’। ছেলেটিব কোলের উপর একটি বাটীতে কিছু সাবান-গোলা জল। একটি কাঠিতে ফু দিয়ে ছেলেটি বুদবুদ তৈরী করছে। ওঁব কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম, কোনও বিলাতী কোম্পানীর বিজ্ঞাপনেব ক্যালেণ্ডাব ওটা । উনি ছবিটি আমাকে দেখিয়ে বলেছিলেন, ঐ ছবি দেখেই নাকি উনি কাজলের চরিত্র লিখতেন। অমনি নিষ্পাপ, দেব-দুর্লভ রূপবান, কোমল, সুন্দর ছেলেটি-কাজল নাকি ওঁর কল্পনায় ঐ রূপেই ছিল। উনি নিজে আমাকে বহুদিন বলেছেন, এক সময়ে নাকি উনি সন্তান-সন্তান করে ক্ষেপে গিয়েছিলেন । বহু লোকের কাছে শুনেছি, অনেককে উনি নাকি বলতেন-আমাকে বাবা ডাকবি ?-ডাক না। আবও শুনেছি, উনি নাকি এই পিতৃ-সম্বোধন শুনবার জন্য নানা প্রকার ধূসও দিতেন। কাউকে কাউকে । আজ আরও অনেক কথাই মনে পড়ছে। ওঁর ধর্মমেয়ে, নাম তার রেণু। বেণুর উল্লেখ আছে ওঁর অনেক বইতে, দিনপঞ্জিগুলিতে। ওঁর বিচিত্র জগৎ বইখানা রেণুকে উৎসর্গ করেছিলেন। রেণুর সঙ্গে ওঁর মেহের সম্পর্ক গভীরতর ছিল। রেণুকে নিয়েই ওদের পরিবারের সঙ্গে ওঁর গভীর শ্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী কালে ওদের সকলের সঙ্গেই ওঁর আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হয়েছিল।