পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাহাদের দিকে তাকাইয়া বুঝি ওষ্ঠে তর্জনী রাখিয়া চুপ করিতে সঙ্কেত করিতেছে। পাতলা জামা গায়ে কাজলের শীত করিতেছিল। ফিরিতে এত দেরী হইবে, তাহা সে বুঝিতে পারে নাই। পরমেশকে বলিল-চলো, রাত হয়ে এলো। ধৰ্মতলার মোড়ে একটা বাচ্চ মেয়ে, নোংরা জামা-পরা, কাজলের গায়ে ধাক্কা খাইল । কাজলের হাত হইতে বইখাতী ধূলায় পডিয়া গেল। পালায় নাই মেয়োট, ভয়ে পালাইতে পারে নাই। আতঙ্কে কেমন-যেন হইয়া গিয়া তাহায় দিকে তাকাইয়া আছে । বয়স বেশী নহে, নয় কি দশ হইবেহতদরিদ্রের চেহারা, কিন্তু চোখদুটি উজ্জল। কাজলের হঠাৎ “ওলাড কিউরিয়সিটি শপ’এর ডিক সইভেলারের ছোট বান্ধবীটির কথা মনে পড়িল । কাজল ভাবিল-ও ভেবেছে, আমি ওকে বকবো । কি সুন্দর চোখ দুটো ওর ” মেয়েটির হাতে এক আনা দামের পাউরুটি, এটা কিনিতেই সে আসিয়াছিল, রাস্তা পার হইয়া ফিরিবার সময় ধাক্কা লাগিয়াছে। পাউরুটি শক্ত করিয়া ধরিয়া মেয়েটি কাঠ হইয়া আছে। মেয়েটির চোখ, পাউরুটি আঁকড়াইয়া ধরিবার ভঙ্গি, সন্ধ্যাবেলার বিষন্নতা-সব মিলাইয়। কাজলের মনে একটা ঢেউ তুলিল-মেয়েটির চোখে চোখ রাখিয়া সে হাসিল। মেয়েটি হাসিল না। কাজল বুলিল-তোমার নাম কি খুকী ? কোথায় থাকো ? উত্তর না দিয়া মেয়েটি রাস্তার ওপারে তাকাইল, সেখানে এক অন্ধ ভিখারী ষোড়ায় জল খাইবার চৌবাচ্চার কিনারায় বসিয়া আছে। কাজল বলিল-ও কে হয় তোমার-বাবা ? মেয়েটি ঘাড় নাড়িল । কাজল পকেট হইতে একটা আনি বাহির করিয়া বলিল-—এটা তুমি নাও। কিছুতেই লইবে না। অনেক সাধ্যসাধনার পর হাত হইতে আনিটা লইয়া সে সঙ্কুচিত ভাবে হাসিল, তারপর হঠাৎ ফিরিয়া লোহার চৌবাচ্চাটা লক্ষ্য করিয়া দৌড় দিল । ট্রেনে জানলার পাশে বসিয়া কাজল সমস্ত রাস্তা ভাবিতে ভাবিতে চলিল । ঠাণ্ডা বাতাসে হাড়ের ভিতরে র্কাপন ধরে । গলা বাড়াইলে দেখা যায়, কালপুরুষ-মণ্ডলীর বেটেলজিয়ুস নক্ষত্রটা লালচে আভায় ঝকঝকি করিতেছে। কাহারা গোপন-ছাউনির নিচে আগুন করিয়া হাত-পা সেঁকিতেছে। হাওয়ায় শীতের ভ্রাণ, পোড়া ডালপালার ত্রাণ । বোমারুবিমানের ভয়ে উন্মুক্ত স্থানে আগুন জ্বালায় নাই । ট্রেনের এহিন হইতে বার দুয়েক হুইসুলের শব্দ ভাসিয়া আসিল । »Rb