পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুনতে শুনতে কখন আস্তে-আস্তে হাতের সেলাই কোলে রেখে জানলার ধারটিতে ঘুমিয়ে পড়লেন, আর একটি ছোটাে মেয়ের মতে,অমনি আস্তে আস্তে সোনার মা'র মনের মধ্যেকার সবুজ খাতায় একটি ছবি পড়ল । আতগাছের বাসায় ঘুঘু পুতুকে ঘুম পাড়িয়ে নদীতে চান করতে গেল। পুতু এতক্ষণ মটকা মেরে চোখ বুজে ছিল। অমনি আস্তেআস্তে উঠে বাসা ছেড়ে আতাগাছের ডালে পা বুলিয়ে বসে একটা বঁশি বাজাতে লাগল। মানুষ হয়ে পুতু ঘুঘুর বাসায় ঘুমোচ্ছে। সে পাখির মতো আতার ডালে উঠে বসল। এ সব সোনার মায়ের কাছে কিছুই আশ্চর্ষ বোধ হল নী, মনে হলো পুতু যেন কত দিনের চেনা। তিনি দেখলেন, সোনা আর আঙুটি পাণ্ডটি জানলা দিয়ে মুখ গলিয়ে ডাকলে, পুতু-উ-উ । অমনি পুতু হিজুলি পাতার জাম বাতাসে মেলে দিয়ে ঘরের মধ্যে উড়ে এল, সঙ্গে তার জোনাকপোকার মতো একটুখানি আলো। ঘরের মধ্যে এসে ঝুম-কুম করে ঘুঙর বাজিয়ে খেলাঘরের কোণটিতে গিয়ে বসল। ঘুঙুরের শব্দেই বোধহয় সোনার মা চমকে উঠলেন। ঘুম ভেঙেই পুতুকে দেখে তিনি চমকে উঠলেন, ওগো দেখসে কে ? পুতু তার দুধে দাত দুটি কিড়মিড় করে ছোটো একটি কিল দেখিয়ে জানালা দিয়ে যেমন উড়ে পালাবে অমনি তক্তার নিচ থেকে বোহিম ধরলুম' বলে পুতুর দিকে তাড়া করে গেল। পুতু জানালার ওপর উঠল দেখে, সোনার মা ভয়ে চেচিয়ে উঠলেন, ‘পলে রে পলে রে ; পুতু তখন পালিয়েছে। সোনার মা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলেন, ছোট্রো ছেলেটি একতলা থেকে পড়ে হাত পা ভাঙলে নাকি ? কিন্তু কিছুই দেখা গেল না । তিনি তাড়াতাড়ি বাগানে গিয়ে খুজে দেখলেন সেখানে কেউ নেই। আকাশের দিকে চেয়ে দেখলেন, কেবল দেখা গেল একটি ছোটো পাখি কতদূরে উড়ে যাচ্ছে। রাঙা ফিতেয় বাধা পুতুর সবুজ খাতাটি, পালাবার সময়, বোহিম কুকুরটা চেপে ধরেছিল। ফিতে ছিড়ে পুতুর বই বোহিমের কাছে রয়ে গেল, ১২৬