তাল-চড়াই মনুয়াটিকে দেখছে কিন্তু সেই একটুখানি মনুয়াকে ধরবার জন্যে অত বড়ো ফাস-লাগানো আটার্কাঠিটা যে এগিয়ে আসছে, সেটা তার চোখে পড়ে নি। সে আপনার-মনেই বকে যাচ্ছে, মন-মনুয়া, বনের টিয়া । হঠাৎ দূর থেকে কুঁকড়োর সাড়া এল, খবরদারি...। আমনি চমকে উঠে-মল্লয়া-পাখি ডান মেলে উড়ে পালাল, আটাকাঠিটা সা করে একবার আকাশ আঁচড়ে বেড়ার ওধারে আস্তে আস্তে লুকিয়ে পড়ল। চড়াইট অমনি ব্যঙ্গ করে বলে উঠল, দেখলে কুঁকড়োর কীর্তি। এইবার কর্তা আসছেন।” 俞 কুঁকড়ে আসছেন শুনে সবাই শশব্যস্ত। পায়রা এদিক-ওদিক ঘাড় ফিরিয়ে দেখছে, তালচড়াই সেটা সইতে না পেরে বললে, ‘এমনি কী অদ্ভুত কুঁকড়োর চেহারাখানা। পাক ফুটিতে দুটি শজনেখাড়া গুজে দাও, মাথার দিকে একটা বিটপালং কিংবা কতকটা লাল পুইশাক, চোখের জায়গায় ছটো পাকা কুল, কানের কাছে ঝোলাও লাল দুটে পুলি-বেগুন, লেজের দিকে বেঁধে দাও আনারসের মুকুটি-বস, জলজ্যাস্ত কুঁকড়োটা গড়ে ফেলো।’ পেরু এই কুঁকড়োর রূপ-বর্ণনা খুব মন দিয়ে শুনছিল, আর তালচড়াইয়ের বুদ্ধির তারিফ করছিল। পায়রা গলা ফুলিয়ে বললে, চড়াই ভায়, তোমার কুঁকড়ে যে সাড়া দেয় না, খি।’ চড়াই বললে, “ওই ডাকটুকু ছাড়া আর সবগ্লানি ঠিক কুঁকড়ে হয়েছে, না। পায়রা রেগে গলা ফুলিয়ে বলে উঠল, “বোকো না, বোকো না, মোটে না, মোটে না, বোকো না । ঠিক সেই সময় বেড়ার উপরে ঝুপ করে এসে কুঁকড়ে বসলেন। পায়রা দেখলে মানিকের মুকুট আর সোনার বুক-পাটায় সেজে যেন এক বীরপুরুষ এসে দাড়িয়েছেন। সন্ধ্যার আলো তার সকল গায়ে পলকে পলকে রামধমুকের রঙ ধরে ঝিকমিক ঝিকমিক করছে, দৃষ্টি ত্বার আকাশের দিকে স্থির। মিষ্টি মধুর স্বরে তিনি ডাকবেন, আলে; আলো। আ-লো। তার পর তার বুকের মধ্যে থেকে যেন স্বর উঠল, S
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।