পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেদিকে হাসরা নেমেছে, সেদিকে খানিক জঙ্গল অন্ধকারে কালে৷ দেখাচ্ছে। জঙ্গল ছাড়িয়ে খোলা মাঠ, সেদিকে মানুষ কি গরু কিছুই নেই। চারিদিক সুনসান। মেঘনার মাঝে লাল ফামুসের মতে রাঙা সূয্যি পশ্চিম-আকাশে রামধনুকের রঙ টেনে দিয়ে আস্তে-আস্তে জলে ডুবছে । রিদয়ের মনে হল সে যেন কোথায় কতদূরে মানুষের বসতি ছেড়ে পৃথিবীর শেষে এসে পড়েছে! বেচারা সমস্ত-দিন খেতে পায়নি। তার কেবল কান্ন। আসতে লাগল। " এই একলা চরে কেউ কোথাও নেই –কোথায় খায়, কোথায় যায় ? আর যদি বাঘ আসে, কে তাকে বাচায় ? আর যদি বিষ্টি আসে, কোথায় সে মাথা গুজবে ? কোথা রইলেন বাপ-মা, কোথা রইল ঘর-বাড়ি ! সূর্য লুকিয়ে গেছেন ; জল থেকে উঠছে কুয়াশা ; আকাশ থেকে নামছে অন্ধকার ; চারদিকে ঘনিয়ে আসছে ভয় । ওধারে বনের তলাটা যেন নিঝুম হয়ে আসছে ! ঝিমঝিম সেখানে ঝি ঝি ডাকছে, আর লতায়-পাতায় খুসখাস শব্দ উঠছে। রিদয়ের মনে আকাশে উঠে যে ফুর্তিটা হয়েছিল, এখানে নেমে সেটুকু একবারে নিভে গেল। এখন এই হাসগুলো ছাড়া সঙ্গী আর কেউ নেই। রিদয় দেখলে সুবচনীর হাস একেবারে কাবু হয়ে পড়েছে। বেচার মাটিতে পা দিয়েই শুয়ে পড়েছে। কাদার উপর গলা বাড়িয়ে দুই-চোখ বুজে সে কেবলি জোরে-জোরে শ্বাস টানছে –যেন আধ-মরা ! রিদয় তার সঙ্গের সাখী খোড়া হাসকে বললে –‘একটু জল খেয়ে নাও—এই তো দু’পা গেলেই নদী | কিন্তু খোড়া সাড়া-শব্দ দিলে না। রিদয় আর এখন টু নেই। এই খোড়া হাস এখন আর শুধু হাস নয়—তার বন্ধু, সাখী সবই । সে আস্তে-আস্তে তার গলাটি ধরে উঠিয়ে জলের ধারে নিয়ে চলল। রিদয় ছোটো, হাস বড়ে ; কিন্তু প্রাণপণে সে হাসকে টেনে নিয়ে জলের কাছে নামিয়ে দিলে । হাস জলে কাদায় খানিক মুখ ডুবিয়ে চুক-চুক-করে জল খেয়ে নিয়ে く>8