কুঁকড়ে সোনালিকে নিয়ে গোলাবাড়ির বাইরের পাচিলে উঠলেন। সেখান থেকে তিনি দেখালেন দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে জলের মতো সাদা একটা সরু সাপ কতদিন ধরে যে নামছে তার ঠিক নেই । সব দেখে শুনে সোনালিয়া কুঁকড়োকে বললে, এইটুকু জায়গা, তাও আবার নেহাত কাজ-চলা-গোছের জিনিসপত্তরে ভরা, এখানে একঘেয়ে দিনগুলো কেমন করে তোমরা কাটাও বুঝি না । আকাশ দিয়ে যখন পাখিরা উড়ে চলে তখন তোমার মন নতুন দেশ বড়োপুথিবীটা দেখবার জন্যে একটুও আনচান কবে না ? কুঁকড়ো বললেন, একটুও নয়। পৃথিবীতে একঘেয়ে দিনও নেই, পুরোনোও কিছু হয় না। আমি এইটুকু জায়গাকেই প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবে দেখতে চাই। কিসের গুণে তা জান ? আলোর গুণে ।” মোনালি অবাক হয়ে বললে, ‘আলোর গুণে । সে আবার কী রকম ? $. ‘দেখোসে ' বলে কুঁকড়ে একটি স্থলপদ্মের গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘দিনের আলোর সঙ্গে এই ফুলের রং ফিকে থেকে গাঢ় লাল হবে দেখবে। এই খড়ের কুটিগুলো আর এই লাঙলের ফলাট আলো পেয়ে দেখে। কত রকমই রং ধরছে । ওই কাণে মইখানার দিকে চেয়ে দেখো ঠিক মনে হচ্ছে নাকি এটা যেমন দাড়িয়ে ঘুমচ্ছে আর ধানখেতের স্বপ্ন দেখছে। আর মানুষ যেন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে, ঠিক তেমনি করে ওই পি পড়েগুলো দেখে এই চিনেমাটির জালাটার চারি দিক প্রদক্ষিণ করে আসছে আট পল এক বিপলের মধ্যে ৷ পলকে পলকে এখানকার সব জিনিসই নতুন নতুন ভাব নিয়ে দেখা দিচ্ছে নতুন আলোতে। আর আমিও কুঁকড়ো ওই মইখানার মতো আপনার কোণটিতে দাড়িয়ে রোজ রোজ কত আশ্চর্য ব্যাপারই দেখছি। দেখে দেখে চোখ আর তৃপ্তি মানছে না ; চোখের দৃষ্টি আমার নতুনের পর নতুন, ছোটাে এই গোটাকতক २१
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।