কুঁকড়োর একেবারে খুব কাছে এসে বললে, ‘ভালোবাসি গে। ভা-লো-বা-সি। কুঁকড়ে বললেন, ‘সোনালিয়, তোমার সোনালিয়া রূপটি সোনালি কাজের মতো আমার চোখের কোলে লাগল, তোমার মধুর মতে মিষ্টি আর সোনালি কথা প্রাণের মধ্যেটা সোনায় সোনায় ভরে দিয়েছে। এত সোনা আজ পেয়েছি যে মনে হচ্ছে এখনি ওই সামনের উচু পাহাড়টা আমি আগাগোড়া সোনায় মুড়ে দিতে পারি।” সোনালিয়া আদর করে বললে, ‘দাও-না পাহাড়টা গিলটি করে, আমি তোমাকে রোজ রোজ ভালোবাসব। কুঁকড়ে হাক দিলেন, ‘সো-না-র জল সো-না-লি-য়া, অমনি পাহাড়ের চুড়োয় সোনা ঝকঝক করে উঠল, তার পর সোনা গলে ঢালু বেয়ে আস্তে আস্তে নিচের পাহাড়ের গোলাপিতে এসে মিশল, শেষে গোলাপি ছাপিয়ে একেবারে তলায় মাঠের উপর গড়িয়ে পড়ল । দেখতে দেখতে দূর আর কাছের রাস্তা-ঘাট মাঠ-ময়দান ঘর-ভুয়োর গ্রাম-নগর বন-উপবন সোনাময হয়ে দেখা দিলে। কিন্তু দূরে পাহাড়ের গায়ে এখানে ওখানে নদীর ধারে গাছগুলোর শিয়রে এখনো একটু-আধটু কুয়াশা মাকড়সার জালের মতে জড়িয়ে রয়েছে, ওগুলো তো থাকলে চলবে না, কুঁকড়ো প্রথম আস্তে বললেন, ‘সাফাই, সোনালি ভাবলে, কুঁকড়ো বুঝি হাপিয়ে পড়েছেন আর বুঝি পারেন না গান করতে, কিন্তু একি যে-সে কুঁকড়ে যে কাজ বাকি রেখে যেমন-তেমন সকাল করেই ছেড়ে দেবে, আরো আলো চাই বলে কুঁকড়ে আবার গা-ঝাড় দিয়ে এমন গলা চড়িয়ে ডাক দিলেন যে মনে হল বুঝি, তার বুকটা ফেটে গেল, আলোর ফুল আলোর ফুল, ফু-উ-উ-উল-কি-ই-ই আলো-র-র-র’ । দেখতে দেখতে আকাশের শেষ তারাটি সকালের আলোর মধ্যে একেবারে হারিয়ে গেল, তার পর দূরে দূরে গ্রামের কুটিরের উপর জলন্ত আখার সাদ ধুয়া কুগুলী পাকিয়ে সকালের আকাশের দিকে উঠে চলল আস্তে আস্তে। সোনালি তাকিয়ে দেখলে কুঁকড়ো কী সুন্দর। সে সকালের শিল্পী কুঁকড়োকে মাথা নিচু করে নমস্কার করলে। আর (tર
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।