কিন্তু কাঠঠোকরার গল্প শুনতে কুঁকড়ে সত্যি ভালোবাসেন ; সে যে কত কালের সব পাখিদের কথা জানে, তার ঠিক নেই । একদিন সন্ধেবেলা কাঠঠোকরা কুঁকড়োকে সন্ধ্যা-পাখির গান শোনালে। সে অতি চমৎকার। ছুটি টুনটুনি মুর ধরলে আর বনের সব পাৰি তাদের গানে আস্তে আস্তে যোগ দিলে। প্রথম পাখিটি গাইলে, ও আমাদের বন্ধু। জুড়ি-টুনটুনিটি অমনি ধরলে, ও অনাথের নাথ ? হাজার হাজার পাখির মিষ্টি সুর অমনি গাছে গাছে সাড়া দিলে, ওগো বন্ধু। ওগো বন্ধু। তার পরে বন্দন শুরু হল – ‘নমস্কার নমস্কার । আকাশে নমস্কার, আলোতে নমস্কার, বাতাসে নমস্কার, রাতে নমস্কার, দিনে নমস্কার— তোমাকে নমস্কার । তোমার দেওয়া চোখের আলো, তোমার দেওয়া মিষ্টি জল, তোমার এই ঘন বন, তোমার এই মধু ফল, তোমার এই কাটার বেড়া, তোমার এই সবুজ ঘাস। মিষ্টি মুর এও তোমার, তোমার এ নিশ্বাস । তোমার এই পাতার বাসা, তোমার এই ছোটো পাখি । আমার এই ছোটো সুরে তোমারেই আমি ডাকি ... ছোটো বাসার ছোটাে পাখি—সন্ধ্যা হলতোমায় ডাকি, বন্ধুএসো, তোমায় ডাকি । এ পাখি থেকে ও পাখি, এ গাছ থেকে ও গাছ, এমনি করে বনের শেষ পর্যন্ত বন্ধু এসো’ বলে সবাই ডাক দিয়ে গেয়ে উঠল। কুঁকড়োও ডাক দিলেন, ‘বন্ধু বন্ধু? তার পর একটি একটি করে সব ছোটাে পাখির পাতার আড়ালে ঘুমিয়ে পড়ল। দেখতে দেখতে চাদের আলো বনের ফঁাক দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ঝরনার মতো নেমে এল – লতাপাতার কিনারায়, পাথরের উপর, শেওলার গায়ে। কুঁকড়ে দেখলেন, একটুখানি মাকড়সার জালে হীরের মতো কা ঝলক দিচ্ছে। মৰে হল, বুঝি একটা জোনাক-পোকা জালে পড়েছে। কাছে গিয়ে দেখেন, বিষ্টির একটি ফোটায় চাদের আলো এসে লেগেছে। এমনি সব স্তন-নূতন কত কী দেখতে দেখতে সেই মহাবনে কুঁকড়োর দিন আর রাতগুলি আনন্দে কাটছে।
- 8 。