পূর্ণিমায় সেই জ্যোৎস্না-রাত্রি, সেই শোলাঙ্কি-রাজকুমারীর মধুর হাসি, স্বপ্নের মতো আমার এখনো মনে আসে ! আমি কতবার কত লোককে জিজ্ঞাসা করেছি, কিন্তু পৃথিবীতে তিনটে-চুড়ে পাহাড় কত আছে, কে তার সন্ধান পাবে ! আমি যদি বলতে পারতেম যে সেই মেঘের মতো তিনটে পাহাড়ের ঢেউকে ত্রিকূট বলে, যদি বলতে পারতেম সেই ছোটো শহরের নাম নগেন্দ্রনগর, যদি জানতে পারতেম সেই ঘন বন, যেখানে আমি রাখালদের সঙ্গে খেলে বেড়াতাম, যেখানে ঝুলন-পূর্ণিমায় শোলাঙ্কি-রাজকুমারীকে বিয়ে করেছিলেম, সেটি পরাশর-অরণ্য, তবে কোনো গোলই হত না ; হায় হায়! জন্মাবধি লেখা-পড়া ন শিখে এই ফল ! এতকাল পরে কি আর সেই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ, সেই শোলাঙ্কি-রাজনন্দিনীকে ফিরে পাব ? পড় তো শুনি আর কী লেখা আছে ? রানী কবচের আর-এক পিঠ উলটে পড়তে লাগলেন – জন্মস্থান মালিয়া-পাহাড়, পিতা নাগাদিতা, মাত চিতোর কুমারী, নাম বাপ্পা । মহারানীর বড়ো-বড়ো চোখ মহাবিস্ময়ে আরও বড়ো হয়ে উঠল— তিনি তামার সেই কবচ হাতে বাপ্পার পায়ের তলায় ফুলের বিছানার মতো সুন্দর গালিচায় অবাক হয়ে বসে রইলেন ; আর গজদন্তের পালঙ্কের উপর বাপ্পা ডান হাতের আঙলে এক ফোটা রক্তের মতো বড়ো একখানা প্রবালের আঙটির দিকে চেয়ে ভাবতে লাগলেন, হায়হায়! কী পাপ করেছি ! এই হাতে পিতৃহন্ত৷ ভীলদের শাসন না করে, মামার প্রাণহন্ত হয়ে আমি সিংহাসনে বসেছি। মহারানী ! আমি মহাপাপী, আমি চিতোরের সিংহাসনে বসবার উপযুক্ত নই। এখন পিতৃহত্যার প্রতিশোধ তার আত্মীয়-বধের প্রায়শ্চিত্ত আমার জীবনের ব্রত হল ? একলিঙ্গের দেওয়ান বাপ্পা সেইদিনই সকলের কাছে বিদায় হয়ে, দশ হাজার দেওয়ানী ফৌজ নিয়ে চিতোর থেকে বের হলেন । র্তার সমস্ত রাগ মালিয়া-পাহাড়ে ভীল রাজত্বের উপর গিয়ে পড়ল। বাপ্পা মালিয়া পাহাড় জয় করে, ভীল-রাজত্ব ছারখার করে চলে গেলেন। &२
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।