তারপর দেশ-বিদেশ– কাশ্মীর, কাবুল, ইস্পাহান, কান্দাহার, ইরান, তুরান জয় করলেন। বাপ্পার সকল সাধ পূর্ণ হল ; মালিয়া পাহাড় জয় করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধের সাধ পূর্ণ হল, আধখানা পৃথিবী চিতোর সিংহাসনের অধীনে এনে আত্মীয়বধের কষ্ট অনেকটা দূর হল, কিন্তু তবু মনের শান্তি প্রাণের আরাম কোথায় পেলেন ? বাপ্পা যখন সমস্ত দিন যুদ্ধের পর শ্রান্ত হয়ে নিজের শিবিরে বসে থাকতেন, যখন নিস্তব্ধ যুদ্ধক্ষেত্র কোনো দিন পূর্ণিমার চাদের আলোয় আলোময় হয়ে যেত, তখন বাপ্পার সেই ঝুলন-পূর্ণিমার রাত্রে চাপাগাছের ঝুলনায় শোলাঙ্কি-রাজকুমারীর হাসি-মুখ মনে পড়ত; যখন কোনো নতুন দেশ জয় করে বাপ্পা সেখানকার নতুন রাজপ্রাসাদে সোনার পালঙ্কে নহবতের মধুর স্বর শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তেন, তখন সেই পূর্ণিমার রাতে চাপাগাছের চারিদিকে ঘিরে-ঘিরে রাজকুমারীর সখীদের সেই ঝুলন-গান স্বপ্নের সঙ্গে বাপ্পার প্রাণে ভেসে আসত। শেষে যেদিন তিনি নগেন্দ্রনগরে গিয়ে দেখলেন তাদের পাতার কুটার মাটির দেওয়াল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, যখন দেখলেন শোলাঙ্কি-রাজবাড়ি জনশূন্ত, নিস্তব্ধ অন্ধকার হয়ে পড়ে আছে– সে রাজকুমারীও নেই সে সখীও নেই, তখন বাপ্পার মন একেবারে ভেঙে গেল, তিনি শান্তিহারা পাগলের মতো সেই দিগ্বিজয়ী সৈন্ত নিয়ে শান্তির আশায় এদেশওদেশ ঘুরে বেড়াতে লাগলেন ; চিতোরের প্রকাণ্ড রাজপ্রাসাদ, শূন্য সিংহাসন আর অন্দরে এক মহারানীকে নিয়ে পড়ে রশীল। এইরকম দেশ-বিদেশে ঘুরতে-ঘুরতে বাপ্পা একনি বল্লভপুরে গায়নী-নগরে— যেখানে দুটি ভাই-বোন গায়েব-গায়েবী পৃথিবীর আলো প্রথম দেখেছিলেন, সেইখানে উপস্থিত হলেন । একদিন ষোল বৎসর বয়সে রাজা মানের সেনাপতি হয়ে বাপ্পা মুসলমান সুলতান সেলিমের সমস্ত সৈন্য এই গায়নী-নগর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে চিতোর ফিরে গিয়েছিলেন ; আজ কত বৎসর পরে যখন কালে চুলে পাক ধরেছে, যখন চোখের কোলে কালি পড়েছে, গায়ের মাংস লাল হয়ে এসেছে, পৃথিবী যখন তার কাছে অনেকটা পুরোনো হয়ে এসেছে, ఫిరి
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।