তোমায় দেখেছিলাম— কী সুন্দর মুখ, কী প্রকাণ্ড শরীর! আর আজ তোমায় কী দেখছি! সে শরীর নেই, সে হাসি নেই! এমন দশা তোমার কে করলে ? কোন রাজপুত-কুমারীর আশায় তুমি পাগলের মতো দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছ ? বাপ্পা বললেন—সে কথা থাক ; তুমি আবার সেই গান গাও। ভিখারিণী গাইতে লাগল—“আজ কী আনন্দ ! ঝুলত বুলনে শুমর চন্দ। বাপ্পা সমস্ত দুঃখ ভুলে সেই ভিখারিণীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। গান শেষ হল ; বাপ্পা বললেন— ‘নবাবজাদী তোমায় কী দেব বল ? ভিখারিণী বললে— ‘তামবি যদি রাজ্য থাকত তবে তোমায় বলতেম আমায় বিয়ে করে তোমার বেগম কর— কিন্তু সে আশা এখন নেই, এখন আমি ভিখারিণী যে ! আমাকে তোমার বাদী করে কাছেকাছে রখ ! বাপ্প| বললেন– “তুমি বাদী হবার যোগ্য নও, আমি তোমায় বেগম করব, তুমি চিরদিন আমার কাছে বসে এই গান গাইবে ।" তাব পরদিন সেই মুসলমান কন্যাকে বিয়ে করে বাপ্পা খোরাসান দেশে চলে গেলেন । সেখানে গুলবাগে খাসমহলে গোলাবের ফোয়াবার ধারে সিরাজিব পেয়ালা হাতে বেগম-সাহেবার মুখে আরবী গজল অব সেই হিন্দুস্থানের ঝুলন-গান শুনতে-শুনতে বাপ্পা প্রাণের অবিমি, মনের শান্তি পেয়েছিলেন কিনা কে জানে ! একশত বৎসর বয়সে বাপ্পার মৃত্যু হল। পূবদিকে— হিন্দুস্থানে তার হিন্দু মহিষী, হিন্দু প্রজারা ; পশ্চিমে ইরানীস্থানে তার মুসলমানী বেগম আর পাঠানের দল, হিন্দুরা তাদের মহারাজকে চিতায় তুলে দিতে চাইলে, আর নৌসেরা পাঠানেব দল তাকে মুসলমানের কবর দিতে ব্যস্ত হল । শেষে যখনু একপিঠে সূর্যের স্তব আর একপিঠে আল্লার দোয় লেখা প্রকাণ্ড কিংখাবের চাদর বাপ্পার ওপর থেকে খুলে নেওয়া হল, তখন সেখানে আর কিছুষ্ট দেখা গেল না— কেবল রাশিরাশি পদ্মফুল আর গোলাপফুল। চিতে্বর মহারানী সেই দুফুল বাণমাতাজীর মন্দিরে মানস-সরোবরের জলে রেখে দিলেন। ইরানী ፭¢
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।