শকুন্তলা এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে ছিল বড়ো বড়ো বট, সারিসারি তাল তমাল, পাহাড় পর্বত, আর ছিল— ছোটো নদী মালিনী । মালিনীর জল বড়ো স্থির— আয়নার মতো। তাতে গাছের ছায়া, নীল আকাশের ছায়, রাঙা মেঘের ছায়— সকলি দেখা যেত। আর দেখা যেত গাছের তলায় কতগুলি কুটিরের ছায়া । নদীতীরে যে নিবিড় বন ছিল তাতে অনেক জীবজন্তু ছিল । কত হাস, কত বক, সারাদিন খালের ধারে বিলের জলে ঘুরে বেড়াত। কত ছোটো ছোটো পাখি, কত টিয়াপাখির বাঁক গাছের ডালে ডালে গান গাইত, কোটরে কোটরে বাসা বাধত। দলে দলে হরিণ, ছোটো ছোটো হরিণশিশু, কুশের বনে, ধানের খেতে, কচি ঘাসের মাঠে খেল৷ করত। বসন্তে কোকিল গাইত, বর্ষায় ময়ুব নাচত । এই বনে তিন হাজার বছরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কশ্বদেবের আশ্রম ছিল । সেই আশ্রমে জটাধারী তপস্বী কশ্ব আর ম-গৌতমী ছিলেন, তাদের পাতার কুটির ছিল, পরনে বাকল ছিল, গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকলপর কতগুলি ঋষিকুমার। তারা কশ্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তৰ্পণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলে দেবতার অঞ্জলি দিত। আর কী করত ? বনে বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো গাই ধলো গাই মাঠে চরাতে যেত। সবুজ মাঠ ছিল তাতে গাই-বাছুর চরে বেড়াত, বনে ছায়া ছিল তাতে রাখাল-ঋষিরা খেলে বেড়াত। তাদের ঘর গড়বার বালি ছিল, ময়ুর গড়বার মাটি ছিল, বেণুর্বাশের বঁাশি ছিল, বটপাতার ভেলা ছিল ; আর ছিল— খেলবার সাথী বনের হরিণ, WS)
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।