ছিল। তাই বুঝি এই শেষ যুদ্ধে সমরসিংহ জন্মের মতো বন্ধুত্বের সমস্ত ধার শুধে দিয়ে চলে গেলেন। যখন যুদ্ধের দিনে প্রলয়ের ঝড়-বৃষ্টির মাঝে পৃথ্বীরাজের লক্ষ-লক্ষ হাতি-ঘোড়া, সৈন্তাসামন্ত ছিন্ন-ভিন্ন, ছারখার হয়ে গেল, যখন জয়ের আর কোনো আশা নেই, প্রাণের মায়া কাটাতে না পেরে যখন প্রায় সমস্ত রাজাই পৃথ্বীরাজকে বিপদের মাঝে রেখে একে-একে নিজের রাজত্বের মুখে পালিয়ে চললেন, তখন একমাত্র সমরসিংহ স্ত্রী-পুত্র-পরিবার, রাজমুকুট, রাজসিংহাসন তুচ্ছ করে প্রাণের বন্ধু পৃথ্বীরাজের জন্য মুসলমানের সঙ্গে ঘোর যুদ্ধে প্রাণ দিলেন। আগে সেই ধর্মাত্মা মহাবীর সমরসিংহ, র্তার ষোলো বছরের ছেলে কল্যাণ, আর সেই তেরে হাজার রাজপুতের বুকের রক্তে কাগার নদীর বালুচর রাঙা হয়ে গেল, তবে পৃথ্বীরাজ বন্দী হলেন, তবে দিল্লীর হিন্দু-সিংহাসন মুসলমান বাদশ শাহাবুদ্দীনের হস্তগত হল। এখন সে শাহাবুদ্দীন কোথায়, কোথায় বা সেই দিল্লীর রাজতক্ত ! কিন্তু যে ধর্মাত্মা বন্ধুর জন্যে নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করলেন, সেই মহাবীর সমরসিংহের নাম রাজপুত-কবিদের সুন্দর গানের মধ্যে চিরকাল অমর হয়ে আছে, এখনো রাজপুতানায় সেই গান গেয়ে কত লোক রাস্তায়-রাস্তায় ভিক্ষা করে । সমরসিংহের পর থেকে প্রায় একশ বৎসর কেটে গেছে । চিতোরের রাজসিংহাসনে তখন রানা লক্ষ্মণসিংহ আর দিল্লীতে পাঠানবাদশা আল্লাউদ্দীন। সেই সময় একদিন রানা লক্ষ্মণসিংহের কাক৷ ভীমসিংহ, সিংহল-দ্বীপের রাজকুমারী পদ্মিনীকে বিয়ে করে সমুদ্রপার থেকে চিতোরে ফিরে এলেন । পদ্মের সৌরভ যেমন সমস্ত সরোবর প্রফুল্ল করে ক্রমে দিগদিগন্তে ছড়িয়ে যায়, তেমনি কমলালয়া লক্ষ্মীর সমান সুন্দরী সেই পদ্মমুখী রাজপুত-রানী পদ্মিনীর রূপের মহিমা, গুণের গরিমা দিনে দিনে সমস্ত ভারতবর্ষ আমোদ করলে ! কি দীনদুঃখীর সামান্ত কুটির, কি রাজাধিরাজের রাজপ্রাসাদ– এমন সুন্দরী, হেন গুণবতী কোথাও নেই। వb*
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।