আকাশ দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে উড়ে চলল ! শেষে, ক্রমে-ক্রমে আস্তে-আস্তে, ভয়ে-ভয়ে যে ওমরাহের হাতে একটি খাচায় ডানাভাঙা তার সঙ্গী তোতা ছটফট করছিল, সেই খাচার উপর নির্ভয়ে এসে বসল। ওমরাহ আশ্চর্য হয়ে বলে উঠলেন, ‘কী আশ্চর্য সাহস ! তোতার বিপদ দেখে তুতী এসে আপনি ধরা দিয়েছে ! আল্লাউদ্দীন তখন পদ্মিনীর কথা ভাবতে-ভাবতে চলেছিলেন ; হঠাৎ ওমরাহের মুখে এই কথা শুনে তার মনে হল— যদি ভীমসিংহকে ধরা যায়, তবে হয়তো সেই সঙ্গে রানী পদ্মিনীও ধরা দিতে পারেন । বাদশা শিবিরে এসে সমস্ত রাত্রি ভীমসিংহকে বন্দী করবার ফন্দি আঁটতে লাগলেন । দু-একদিন পরেই রানার সঙ্গে কথাবার্তা স্থির হল যে আল্লাউদ্দীন সমস্ত পাঠান সৈন্য নিয়ে বিনা-যুদ্ধে দিল্লীতে ফিরে যাবেন, তার বদলে একমাত্র তিনি একখানি আয়নার ভিতবে রাজপুত-রানী পদ্মিনীকে একবার দেখতে পাবেন, আর চিতোরের কেল্লার ভিতর বাদশা যতক্ষণ এক থাকবেন ততক্ষণ র্তর কোনো বিপদ না ঘটে সেজন্য স্বয়ং মহারানা দায়ী রইলেন । বাদশা চিতোর যাবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন । শিকার যে এত শীঘ্র ফাদে পা দেবে, আল্লাউদ্দীন স্বপ্নেও ভাবেননি ; তিনি মহা আনন্দে পাঠানওমরাহদের নিয়ে সমস্ত পরামর্শ স্থির করলেন । তারপর বৈকালে গোলাপ-জলে স্নান করে, কিংখাবের জামাজোড়া, মোতিব কণ্ঠমালা, হীরে-পাল্লার শিরপ্যাচ পরে শাহেনশা শাদ ঘোড়ার উপর সোনার রেকাবে পা দিয়ে বসলেন— সঙ্গে প্রায় শোজন পাঠান-বীর— যার প্রাণের ভয় রাখে না, যুদ্ধই যাদের ব্যবসা। বাদশা ঘোড়ায় চড়ে একা পাহাড় ভেঙে কেল্লার দিকে উঠে গেলেন ; আর সেই পাঠান সওয়ারেরা পাহাড়ের নিচে থেকে প্রথমে নিজের শিবিরে ফিরে গেল, তারপর আবার একে-একে সন্ধ্যার অন্ধকারে কেল্লার কাছে ফিরে এসে পথের ধীরে প্রকাণ্ড একটা আমবাগানের তলায় লুকিয়ে রইল । সূর্যদেব যখন চিতোরের পশ্চিমদিকে প্রকাণ্ড একখানা মেঘের আড়ালে অস্ত গেলেন, সেই সময় পাঠান বাদশা আল্লাউদ্দীন রান 6 ఆ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।