হাজার-হাজার আগুনের শিখার মতো দপ-দপ করে জ্বলতে লাগল । লক্ষ্মণসিংহ দেখলেন— চিতোরেশ্বরী উবরদেবী ! ভয়-ভক্তি বিস্ময়ে মহারানার সর্বশরীর অবশ হয়ে এল— পরমানন্দে দুর্বল র্তার হাত থেকে সোনার প্রদীপ খসে পড়ল। তারপর, সব অন্ধকার ! সেই অন্ধকারে মহারানা স্বপ্ন দেখছেন, কি জেগে আছেন, বঝতে পারলেন না ! তিনি যেন শুনতে লাগলেন, দেবী বলছেন– “মায় ভুখা হু – বড়ো ক্ষুধা, বড়ো পিপাসা, আমি মহাবলি চাই – রক্ত না হলে এ পিপাসার শান্তি নেই ! মহারান ! ওঠে, জাগো, দেশের জন্য বুকের রক্তপাত করো— আমার খপর রক্তের শতধারায় পরিপূর্ণ করে । রাজা-প্রজা বালক-বৃদ্ধ যদি চিতোরের জন্তে প্রাণ উৎসর্গ করে, তবেই কল্যাণ ! না হলে, সূর্যবংশের রাজপরিবার আর কখনো চিতোরের সিংহাসন পাঠানের হাত থেকে ফিরে পাবে না ! পর্বতে গুহায় প্রতিধ্বনি যেমন ঘুরতে থাকে, তেমনই সেই প্রকাণ্ড ঘরে দেবীর শেষ কথা অনেকক্ষণ ধরে গম গম করতে লাগল ! রাত্রি শেষ হয়ে গেল ! উষাকালে সোনার তালে। আর শীতল বাতাসের মাঝখানে চিতোরেশ্বরী কোথায় অন্তর্ধান করলেন ! অনেকদূরে পার্বতীমন্দিরে নহবতের সুরে ভৈরবী-রাগিণীতে মহাদেবীর স্তুতি-গান বাজতে লাগল । প্রত্যুষে রাজদরবারে মহারান লক্ষ্মণসিংহ যখন রাত্রের ঘটনা আর দেবীর আদেশ সকলের সম্মুখে প্রকাশ করলেন, তখন সকলে বিস্মিত হল বটে, কিন্তু তানেকেই সে-কথা বিশ্বাস করলে না। যাদের হৃদয়ে বিশ্বাস অটল, ভক্তি আচল ছিল, যার চিতোরের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত, তার উৎসাহে উন্মত্ত হয়ে উঠল। আর যাদের প্রাণ নিরুৎসাহ, মন দুর্বল, যার। পাঠানের সঙ্গে সন্ধি হলে সুখে-স্বচ্ছন্দে দিন কাটাবে ভেবেছিল তারা ম্ৰিয়মাণ হয়ে পড়ল। কিন্তু সেই রাত্রে মহারানার আদেশে মেবারের ছোটে-বড়ো সামন্তসর্দারেরা 9९०
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।