যখন দেবীর নিজের মুখের আদেশ শোনার জন্য অন্তঃপুরে সেই ঘরে একত্র হলেন, যখন দ্বিপ্রহরের স্তন্ধ রাজপুরে হাজার-হাজার রাজপুত বীরের চোখের সম্মুখে আবার সেই দেবীমূর্তি ‘ম্যয় ভূখ হু ? বলে প্রকাশ হলেন, তখন আর কারো মনে কোনো সন্দেহ রইল না— সকলের মন থেকে সমস্ত অবিশ্বাস, সকল দুর্বলতা নিমেষের মধ্যে দূর হল— আগুনের তেজে অন্ধকার যেমন দূব হয়ে যায় ! সকলেই বীরত্বের নেশীয় উন্মন্ত হয়ে উঠল ; কেবল রানা ভীমসিংহ যেন সেই দেবীমূর্তির ভিতরে পদ্মিনীকে দেখে মনে-মনে তোলা-পাড়া করতে লাগলেন– একি দেবী, না পদ্মিনী ? পদ্মিনী, না দেবী ? তারপর, মহাবলির উদযোগ হল। মহারান। লক্ষ্মণসিংহ তার বারোটি রাজপুত্রের মধ্যে সর্বপ্রধান, সবচেযে বড়ে রাজকুমার, যুবরাজ অরিসিংহের মাথায় চিতোরের রাজমুকুট দিয়ে বললেন, হে ভাগ্যবান, দেবীর আদেশ শিবোধার্য করে। পাঠান-যুদ্ধে অগ্রসর হও । আজ তুমি সমস্ত .শরীরের মহারান । এই সমস্ত সামন্ত-সর্দার তোমারই প্রজা বলে জানবে। আজ থেকে তোমারই হাতে যুদ্ধের ভার ; জয় হলে তোমার পুরস্কার— ইহলোকে চিতোরের রাজসিংহাসন ; আর যুদ্ধে প্রাণ গেলে তার ফল— পরলোকে মহাদেবীর অভয়চরণ " বুদ্ধ রান লক্ষ্মণসিংহ অরিসিংহকে সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে নিচে দাড়ালেন – নতুন রানার মাথায় চিতোরের কিরীট শোভা পেতে লাগল। চারিদিকে রব উঠল— ‘জয় মহাদেবীর জয় !’ ‘জয় অরিসিংহের জয় !’ লক্ষ্মণসিংহ বলতে লাগলেন, ‘সর্দার,ণ, আমার আর একটি শেষ কর্তব্য আছে । সে কর্তব্য দেবীর কাছে নয়, চিতোরের কাছে নয় ; আমার পিত-পিতামহ স্বৰ্গীয় মহারানাদের কাছে। এই মহাসমরে মেরারের রাজবংশ একেবারে নিমূল না হয়, পরলোকে পিতৃ-পুরুষের যাতে জল গণ্ডয পান, রাজস্থানে বাপ্পার বংশ যুগে-যুগে যাতে অমর থাকে, সেই জন্যে আমার ইচ্ছা, অজয়সিংহ নিজের স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কৈলোরের নির্জন দুর্গে চলে যান। অজয়সিংহ মহারানার সম্মুখে জোড় হাত করে বললেন, পিতা, めミ》
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।