আমার এগারো ভাই চিতোরের জন্যে যুদ্ধে প্রাণ দেবে, আর আমি কিনা স্ত্রীলোকের মতো শিশু-সন্তান মানুষ করবার জন্যে বসে থাকব ? আমি কি এতই দুর্বল, এমনি অক্ষম ? লক্ষ্মণসিংহ বললেন, বৎস হতাশ হয়ে না, যে মহৎ কাজের ভার তোমায় দিলেম, চিতোরের যে-কোনো রাজপুত সে-ভার পেলে নিজেকে ধন্ত বোধ করত ! হয়তো আমাদের রক্তপাতে চিতোর উদ্ধার হবে না, হয়তো তোমাকেও চিতোরের জন্ত্যে প্রাণ পণ করতে হবে । আমরা হয়তো চিতোরকে পরাধীন রেখে চলে যাব, আর হয়তো তুমি সূর্যবংশের উপযুক্ত কোনো বীরপুরুষের হাতে রাজ্যভার দিয়ে পরম মুখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারবে ! মনে রেখো, চিতোরের জন্যে প্রাণ দেবার যে সুখ চিতোর পুনরুদ্ধাবের মুখ তার শতগুণ লক্ষ্মণসিংহ নীরব হলেন। জয় জয় শব্দে রাজসভা ভঙ্গ হল । রাজসভা থেকে বিদায় নেবার সময় অরিসিংহ অজয়সিংহকে বলে গেলেন ‘চিতোর ছেড়ে যাবার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে যেয়ে ? যাত্রার সমস্ত আয়োজন শেষ করে অজয়সিংহ যখন বড়ো ভাইয়ের ঘরে গেলেন, তখন অরিসিংহ একখানি চিঠি শেষ করে ছোটো-ভাইয়ের দিকে ফিরে বললেন, ‘ভাই, আজ আমাদের শেষ দেখা ; কাল তুমি একদিকে, আমি একদিকে ! এই শেষ-দিনে তোমায় একটি কাজের ভার দিচ্ছি। অরিসিংহ চামড়ায়-মোড়া একটি ছোটো থলি অর সেই চিঠিখানি অজয়সিংহের হাতে দিয়ে বললেন, ‘অজয়, এ দুটি যত্ন করে রেখো, যদি আমি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসি, তবে আবার চেয়ে নেব ; নয় তো তুমি খুলে দেখো আমার শেষ ইচ্ছ। কী। তারপর অজয়সিংহকে আলিঙ্গন করে অরিসিংহ বললেন, "চল ভাই, মায়ের কাছে বিদায় হই । সেইদিন শেয-রাত্রে যখন রাজ-অস্তঃপুর থেকে তুই রাজপুত্র দুইদিকে বিদায় হয়ে গেলেন, তখন বারো ছেলের ম-জননী চিতোরের মহারানী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মাটির উপর লুটিয়ে পড়লেন– তার সমস্ত শরীর পাষাণের মতো স্থির হয়ে গেল, কেবল সজল ফুটি কাতর চোখ সেইদিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল— যেদিক দিয়ে 3९२
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।